চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

উষ্ণতা রোধে গাছের সুরক্ষা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গাছ কেটে কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছি। যার ফলে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো আমাদের দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্কটল্যান্ডের গøাসগোতে অনুষ্ঠিত পরিবেশ-বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের উষ্ণায়ন রোধে জোরালো পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তার আগেও পরিবেশবিষয়ক প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেন। পরিবেশ সুরক্ষায় ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্যই আমাদের এ বিশাল অর্জন। এ অর্জন আমাদের দেশের, আমাদের সবার। এ অনবদ্য স্বীকৃতি পরিবেশের প্রতি আমাদের সমর্থন আরো জোরালো করে তোলে। কিন্তু প্রতিনিয়ত গাছ কাটার ফলে পরিবেশের প্রতি যে জোরালো সমর্থন ছিল তা ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তিমিত হয়ে আসে। অথচ সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমাদের বাঁচার তাগিদেই গাছকে রক্ষা করা জরুরি। গাছ-পালাকে রক্ষা করার বদলে কেটে ফেললে পৃথিবী নামক গ্রহে বেঁচে থাকাই কঠিন হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রত্যেক দেশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সবচেয়ে বেশে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে যে সব উপকূলীয় দেশ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। এর জন্য দায়ী দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ। আইপিসিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসকে টেনে বের করার জন্য যে প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ প্রযুক্তি চালু রয়েছে তা বছরে মাত্র ৪ কোটি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস বাতাস থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসতে পারে। অথচ পৃথিবীতে এখনো যত গাছ আছে সবাই মিলে বছরে ৭৬০ কোটি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস টেনে বের করে নিয়ে আসতে পারে। যা আমেরিকার সারা বছরে বাতাসে জমাকৃত কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণের চেয়ে বেশি। কাজেই সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
তা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে অরণ্য নিধনের খবর শুনতে পাই। সোহরাওয়ার্দীতে গাছ কেটে রেস্তোরাঁ নির্মাণ, চট্টগ্রামে শতবর্ষী গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা কক্সবাজারের বনভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি তৈরির পরিকল্পনা দিন দিন আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। পরিবেশ বিপর্যয়ে এসব ধ্বংসাত্মক কাজ পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিবাচক সব অর্জনকে ¤øান করে দেয়, যা গোটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গাছ নির্মূলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব জীবন-যাত্রাকে দিন দিন শঙ্কিত করে তোলে।
আমাদের প্রাণ বাঁচানো এ গাছগুলোর মাঝে শতবর্ষী গাছও রয়েছে। মাঝে মাঝে এ খবরগুলো আমাদের যেমন বেদনাহত করে তেমনি মর্মাহত হই। তাই গাছ না কাটার জন্য সচেতন নাগরিকরা বারবার আর্তি জানিয়ে আসছে। তাতেও গাছ নিধন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অনেক সময় গাছ কাটার পাঁয়তারা চললেও প্রতিবাদের কারণে সাময়িক থেমে থাকে। আবার প্রতিবাদের ভাষা জোরালো না হলে গাছ কাটা প্রতিহত করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যে গাছের জন্য আমরা প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি সেই গাছকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করতে হয়! অথচ গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। গাছ কেটে আমরা যদি নিজেদের বিপদ নিজেই ডেকে আনি তবে ভবিষ্যতের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের ওপর বর্তাবে। যার ফলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার বদলে বিষিয়ে যাওয়া পরিবেশ তুলে দিচ্ছি। গাছকে রক্ষা না করে কৃত্রিম প্রাণ জাগালে তা আমাদের পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দরভাবে বাঁচার বদলে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দেবে! এ সংকট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষার সংকট।
অরণ্যকে রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু পরিবেশবাদীদের নয়। এ ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। একদিকে আমরা নির্বিচারে গাছ নিধন করছি অন্যদিকে গাছকে রক্ষার কথা মুখে বলে যাচ্ছি। কিন্তু কতটুকু রক্ষা করতে পারছি। অথচ আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে গাছকে রক্ষা করা প্রয়োজন।
প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনা না হলে আস্তে আস্তে পরিবেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন আমাদের আরো বেশি করে উপলব্ধি করতে শেখায়। বাঁচতে হলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে মর্মে মর্মে তা উপলব্ধি করতে হচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, পৃথিবীব্যাপী উষ্ণতা রোধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে। সে উদ্দেশ্যে প্রতি বছরই পরিবেশবিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূলত পরিবেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গাছকে রক্ষা করাই হবে প্রথম শর্ত। তবেই প্রকৃতিতে ফিরে আসবে প্রাণের স্পন্দন।

অঞ্জন কুমার রায় : ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়