জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের ৫ সদস্য রিমান্ডে

আগের সংবাদ

স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্টকাণ্ড!

পরের সংবাদ

পিওকিলোসেরাস পিকটাস

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দরজায় ঠকঠক ঠক।
ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাত বারোটা। অবাক হলাম না। এটাই স্বাভাবিক। আমি লেখার ঘরে ঢুকে লিখতে বসেছি, আর দরজায় ঠকঠক ঠক হয়নি এটাই বরং অস্বাভাবিক।
এমনি সব ঠিক আছ। আমি বসে আছি। শুয়ে আছি। গান শুনছি। কবিতা পড়ছি। অথবা কিছুই করছি না। এরকম সময় আমাকে কারও দরকার পড়বে না। জলজ্যান্ত একজন মানুষ সবার চোখের সামনে আছি, কেউ যেন তা খেয়ালই করবে না।
যেই আমি লেখার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছি অমনি আমি সবার দরকারি লোক হয়ে যাব।
দরজা খুললাম। দেখি চোখে-মুখে মহাবিশ্বের তামাম ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে আমার দুই মেয়ে দাঁড়িয়ে।
বললাম- সমস্যা কী?
ওদের মুখে কোনো কথা বের হয় না। আঙুল তুলে আমাকে ওদের ঘরে যেতে বলে। আমি দ্রুত ওদের ঘরে গেলাম। সারা ঘরে চোখ বুলালাম। নাহ! কোথাও কোনো সমস্যার কিছু নেই।
কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বললাম- কী হয়েছে?
ওরা আঙুল তুলে মশারির ভেতর নির্দেশ করল। সবুজ রঙের মশারি টাঙানো। পরিপাটি বিছানা। শুয়ে আছে ফুলতোলা কভার দেয়া দুটো বালিশ। ছোট্ট দুটি কোলবালিশ।
তাই এবার গলা একটু চড়িয়ে দিলাম- সমস্যাটা কী হয়েছে? যাও, ঘুমাও। বারোটার বেশি বাজে। কাল সকালে শিশু একাডেমিতে তোমাদের নাচের ক্লাস আছে তো।
আমার বড় মেয়ের চেয়ে ছোট মেয়ে সাহস একটু বেশি। ও একটু চটপটেও। ও মশারির কাছে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আঙুল তুলে বলল- এই যে দ্যাখো! চশমা এনে দিব?
আমি দেখলাম ওদেরকে আতঙ্কে ফেলে দেয়া প্রাণীটাকে। সবুজ রঙের শরীর নিয়ে সবুজ মশারির সাথে মিশে বসে আছে।
আমি বললাম- এই তবে ঘটনা! এটা তো আমাদের খুব পরিচিত। এর নাম পিওকিলোসেরাস পিকটাস।
পিওকিলোসেরাস পিকটাস! শুনে ওদের মুখের মানচিত্র পাল্টে গেল। তুলতুলে নরম নিটোল মুখ ভেঙেচুরে একাকার।
বড় মেয়ে বলল- এই নামের কোনো প্রাণীর কথা তো কোনোদিন শুনিনি। পরিচিত হয় কেমন করে? মানুষকে কামড় দেয়?
– আরে নাহ!
– শরীরে লাগলে ঘা হয়?
– মোটেই না।
– তাহলে ও এখানে এসেছে কেন?
– ভুল করে এসেছে। আমাদের বাসার সামনে ঘাসে ঢাকা খোলা মাঠ আছে। মাঠে এই বৃষ্টি পেয়ে বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। বাসার সামনে নেই বড় কোনো দালান। নেই মানুষের সেরকম চলাচল। ও উড়তে উড়তে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে।
ছোট মেয়ে বলল- পেছনের পা দুটো দেখো, কেমন মোটা আর লম্বা।
আমি বললাম- এই পা দুটোর জন্যই ওরা খুব জোরে লাফ দিতে পারে। শত্রæর কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। লাফিয়ে লাফিয়ে ঘাসের ওপর বসে কঁচি ঘাস খায়।
– ওরা ঘাস খায়? গরুর মতো?
– হাহাহা, গরুর মতো না। একটু একটু করে কামড়ে খায়। জন্মের কিছুক্ষণ পর থেকেই ওরা ঘাস খেতে শুরু করে। ঠিক আছে, ওকে আমি জানালা দিয়ে মুক্ত করে দিচ্ছি।
আমি যখন মশারির ভেতর ঢুকতে যাচ্ছিলাম তখন আমার দুই মেয়ে পেছন থেকে এমনভাবে আমার গেঞ্জি টেনে ধরছিল যেন আমি কোনো বাঘ-সিংহের খাঁচায় যাচ্ছি। আমি মশারির ভেতর গিয়ে পিওকিলোসেরাস পিকটাস-এর পা দুটি ধরে ওকে জানালা দিয়ে মুক্ত করে দিলাম। তারপর হাত ধুয়ে এসে ওদের নিয়ে মশারির ভেতরে বসলাম। ওদের ভয় কাটাতে হবে। না হলে ওরা সারা রাত ঘুমাতে পারবে না।
দুই হাত দিয়ে দুজনকে কাছে টেনে নিয়ে বললাম- আমি ওর বৈজ্ঞানিক নাম বলেছি। ওর বাংলা নাম বললে তোমরাও চিনবে। ওটার নাম ঘাস ফড়িং।
– ঘাস ফড়িং! দুই মেয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। একটা ঘাস ফড়িংকে ওরা এতটা ভয় পেয়েছে এজন্য যেন একটু লজ্জিতও হলো।
আমি বললাম- তোমাদের মাঝে মাঝে গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। গ্রামে নিয়ে ঘাস ফড়িং, শুয়ো পোকা, গুবরে পোকা, ঝিঁঝিঁ পোকা, কুনো ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, ডোরা সাপ, কুঁচে, হরেক রকম পাখি আরো অনেক কিছু চেনাতে হবে, জানাতে হবে। ইট-পাথরের শহরে থেকে চেনার মধ্যে চিনেছো শুধু তেলাপোকা আর কাক।
ছোট মেয়ে বলল- আমরা তো একটা চড়–ই পাখি পালি। সারাদিন আমাদের রান্না ঘরে, ড্রইং রুমে, ডাইনিং রুমে ঘুরে বেড়ায়।
– ও হ্যাঁ… আরো অনেক কিছু চিনতে হবে ও জানতে হবে। পুরো দেশ, দেশের ইতিহাস, দেশের মানুষ সবকিছু জানতে হবে। শোনো, শৈশবের আমরা ঘাস ফড়িং ধরে ওদের লম্বা পায়ে সুতো বেঁধে খেলা করতাম। কখনো কোনো কোনো ঘাস ফড়িংয়ের লম্বা পা ছিঁড়ে যেত। তখন ওরা লাফাতে পারতো না। আস্তে আস্তে হাঁটতো। তখন আমরা ওটাকে ফেলে দিতাম। কিন্তু ওর তো আত্মরক্ষার অবলম্বন ছিঁড়ে গেছে। লম্বা পা ছাড়া ওরা কতক্ষণ বেঁচে থাকতো তা জানি না। আমরা আরেকটা ধরে খেলায় মেতে যেতাম। তখন বুঝতাম না আমাদের জন্য যা খেলা ওদের জন্য তা মৃত্যু। বুঝতাম না ওদের কষ্ট।
চেয়ে দেখি আমার দুই মেয়ের মুখে ব্যথার মেঘ জমেছে। একটু আগে যে প্রাণীটাকে দেখে ওরা ভয়ে অস্থির হয়ে গিয়েছিল এখন তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
মানুষের মন এক আশ্চর্য জিনিস!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়