জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের ৫ সদস্য রিমান্ডে

আগের সংবাদ

স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্টকাণ্ড!

পরের সংবাদ

দিনাজপুর পৌর মেয়রের দুর্নীতির তদন্ত শুরু : গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য রাজস্ব ও আর্থিক ক্ষতি হওয়ার বিষয়ে ১০ কাউন্সিলরের করা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে আলামত হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিনাজপুর স্থানীয় সরকার দপ্তরের উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরিফুল ইসলাম দিনাজপুর পৌরসভা থেকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করেছেন। এছাড়া তিনি একই সময় পৌর মেয়রের কাছ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনুলিপি নেন। রবিবার তিনি বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সরজমিন দিনাজপুর পৌরসভা কার্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এর আগে দিনাজপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু তৈয়ব আলী দুলাল, ২নং প্যানেল মেয়র ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মাসুদুল ইসলাম, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী আশরাফ উজ্জামান বাবু, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল হানিফ দিলন, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আল মামুন রশিদ, ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সানোয়ার হোসেন সরকার, ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মাকসুদা পারভীন মিনা ও ১০, ১১, ১২নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মাজতুরা বেগম পুতুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন।
দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল গতকাল মঙ্গলবার পৌর কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংকালে তার সঙ্গে অভিযোগকারী অপর ৯ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম কোনো রকম রেজুলেশন ছাড়াই এবং ইজারার শর্ত না মেনেই ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে ইজারাদারদের বকেয়া টাকা কিস্তি সুবিধা দিয়েছেন। ফলে পৌরসভা প্রায় ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৫৬৩ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়াতে তিনি পৌর পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ না করে নিজে লাভবান হয়েছেন। এয়াড়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের নিবন্ধন প্রদানের জন্য আদায়কৃত এক কোটি ৬০ লাখ টাকার কোনো হদিস দিতে পারছেন না মেয়র। মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম পৌরসভায় লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। পৌরসভার বিভিন্ন শাখায় শূন্য পদ না থাকলেও তার নিজস্ব কিছু অদক্ষ লোকজনকে দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছেন। হিসাবের বাইরে প্রতিটি শাখায় এসব লোকজন কর্মরত রয়েছেন। ফলে পৌরসভার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের জন্য পৌরসভার তহবিল থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা প্রদান করেছেন এবং তা চলমান রয়েছে।
পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের এমন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়া ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য দিনাজপুর পৌরসভার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি সাধনের জন্য তারা এ অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী কাউন্সিলররা।
অভিযোগকারী ১নং প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, আমরা ১০ জন কাউন্সিলর পৌরসভা মেয়রের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম এবং দুর্নীতির ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলাম। ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্ত করেছেন। দিনাজপুর পৌরসভা প্রাচীন পৌরসভা, হাটবাজারসহ বিভিন্ন রাজস্ব আয়ের উৎস দিয়ে পৌরসভা পরিচালিত হয়। গত দুটি বছরে দিনাজপুরের হাটবাজার ইজারাদারদের সঙ্গে সখ্য করে প্রায় এক কোটি টাকা বকেয়া

রেখে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন এমন অভিযোগ করেছিলাম। আমাদের পরিষদের কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই কিস্তির ভিত্তিতে অর্থ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌরসভার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এছাড়া মেয়র বাজেটের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উন্নয়নমূলক কাজের এডিবির অর্থ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৪ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৭ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৯ লাখ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও কোনো টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি করেননি মেয়র। নিজ খেয়াল-খুশিমতো তিনি এ অর্থ ব্যয় করেছেন। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, পৌরসভায় অস্থিরতা চলছে। আমাদের বিবেক নাড়া দেয়ায় মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। মেয়রের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্ব›দ্ব নেই।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনোটাই অবৈধভাবে না। আমি করলে লীলা, আর আপনি করলে বিলা, ধন্যবাদ। এ কথা বলেই তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
অভিযোগের তদন্তের ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, তদন্তাধীন বিষয়। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য করা যাবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়