জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের ৫ সদস্য রিমান্ডে

আগের সংবাদ

স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্টকাণ্ড!

পরের সংবাদ

ডিজেলের দাম বাড়ায় হতাশ হাওরাঞ্চলের কৃষক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশায় পড়েছেন সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। কৃষক সংগঠকরা জানান, এখন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, বিক্রির সময় কৃষক বাজার মূল্য পাবেন না। তাতে আবারো কৃষকদের ধান চাষাবাদে অনীহা চলে আসবে।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাদেরটেক গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম। তিনি প্রতি বছর ২০ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমিতে ধান চাষ করেন। এবারো করেছেন। জমিতে ইঞ্জিনচালিত সেচ পাম্প দিয়ে পানি দেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয় তার। এবার ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, ২০ কেয়ার জমিতে আমন চাষ করেছি। প্রতি বছর ১৫০ থেকে ২০০ লিটার ডিজেল প্রয়োজন। গেল মৌসুমে ১৩ হাজার টাকা সেচ বাবদ খরচ হয়েছে।
এখন ১৫ টাকা লিটারপ্রতি বাড়ায় ৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার টাকার উপরে সেচ বাবদ খরচ বৃদ্ধি পাবে। ধানের দাম না বাড়লে লোকসান গুনতে হবে। লোকসান হলে চাষাবাদ করব কীভাবে? শুধু রেজাউল নয়, হাওরাঞ্চলের অনেক কৃষকের একই প্রশ্ন।
ডিজেল, কেরোসিনের দাম বাড়ায় বোরোচাষিদের উৎকণ্ঠা বেড়েছে। হাওরের জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে আগামী বোরো মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যাহত হতে পারে, এমন শঙ্কাও আছে। কৃষকরা বলেছেন, বীজতলা প্রস্তুত করতেও ডিজেলচালিত টাক্ট্রর ব্যবহার করতে হয়। ডিজেলের দাম বাড়ানোয় টাক্ট্ররের খরচ বেড়ে যাবে। বাড়তি এই খরচ এখনই বহন করতে হবে কৃষকদের।
জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সংবাদপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. আবু সিদ্দিক বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় জমি চাষবাদের ব্যয় বাড়বে। কিন্তু ধানের দাম বাড়বে কিনা কেউ জানে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা ছোট কৃষক, চাষ করার সময় অগ্রিম ধানের ওপর টাকা ঋণ করি। গত বছর মহাজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এনেছি।
কথামতো বৈশাখ মাসেই ৫০ মণ ধান মহাজনকে দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমাদের লোকসান হয় ধান চাষ করে। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না। এবার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কীভাবে ফসল চাষ করব, এখনো জানি না।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু বললেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে সুনামগঞ্জের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনিতেই কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম পান না। বছর বছর লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। এবার ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো অবস্থা হয়েছে।
প্রবীণ কৃষক নেতা অমর চাঁদ দাস বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন কৃষকদের জন্যই হচ্ছে। সামনে বোরো মৌসুম কৃষকের কথা ভাবা উচিত সরকারের। বাসের মালিকরা আন্দোলন করায় ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদন খরচ বাড়বে, কিন্তু ধানের দাম বাড়ানোর কোনো আলাপ শুনি না।
কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার বাদশাগঞ্জের বাসিন্দা খায়রুল বাশার ঠাকুর খান বলেন, ধান উৎপাদনে কৃষকদের ২ বছর আগেও অনীহা ছিল। গত দুই বছরে সেটি কিছু কেটেছিল। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকের মানসিক অবস্থা দুই বছর আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। তার মতে, হাওরে এখন পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের মেশিন, শ্যালোমেশিন, পাওয়ার পাম্প সবই ডিজেল দিয়ে চালাতে হয়। গ্রামের কাছাকাছি জমি হলে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
দুর্গম হাওরে ডিজেল ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। আগে অনেক জমিতে প্রাকৃতিক সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। পলিতে বেশির ভাগ এলাকা ভরাট হওয়ায় এখন যান্ত্রিক সেচ যন্ত্র ছাড়া উপায় নেই। আগে গরু দিয়ে চাষাবাদ হতো, এখন পাওয়ার টিলারই ভরসা। আগে ধান মাড়াই হতো গরু দিয়ে এখন হয় মাড়াই মেশিনে। এই অবস্থায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কৃষক সেই অনুপাতে মূল্য পাবেন না। আবারো চাষাবাদের উৎসাহ হারাবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ফরিদুল হাসান বলেন, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে না। চাষাবাদের খরচ বাড়লে ধানের দামও বাড়তে পারে। কৃষকরা ধানের দাম কম থাকলেও চাষাবাদ ছাড়েন না। তারা পেশাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন। তিনি জানালেন, আগামী বোরো মৌসুমে দুই লাখ ২২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সুনামগঞ্জে এই লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই পূরণ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়