ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

স্বামীর ঘাড়ে চড়ে ভিক্ষা : হুইল চেয়ার পেলেন সেই অসুস্থ নারী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : কোমর ভেঙে যাওয়ার কারণে হাঁটতে না পারায় স্বামীর ঘাড়ে উঠে পঞ্চগড়ে মানুষের কাছে সাহায্য তুলে বেড়ানো দম্পতির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবি দেখে অনেক খোঁজাখুঁজি করে দম্পতির সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে একটি হুইল চেয়ার উপহার দিলেন শেখ মোস্তাফিজ নামে এক পুলিশ সদস্য। গত রবিবার বিকালে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়াম এলাকায় আক্তারী বেগম (৪৫) ও ইউনুস আলী (৬০) দম্পতির কাছে ওই পুলিশ সদস্যের দেয়া হুইল চেয়ার ও আর্থিক সহায়তা তুলে দেন স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী।
জানা গেছে,  আক্তারী বেগম ও ইউনুস আলী দীর্ঘদিন ধরে নীলফামারী জেলার  সৈয়দপুর উপজেলা শহরে একটি গ্রামে বসবাস করতেন। তবে গত কয়েক মাস ধরে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। তবে তারা জানান, বড় মেয়ের বিয়ের জন্য অর্থ জোগাড় করতে একদিনের জন্যই তারা পঞ্চগড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে এসেছেন। আক্তারী বেগম ও ইউনুস আলীর ঘরে তার দুই মেয়ে রয়েছে। একসময় তিনি দিনমজুর ও স্বামী হোটেল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আর দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে লেখাপড়া করে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং বড় মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত। কয়েক মাস আগে হঠাৎ করে আক্তারী বেগম পিছলে পড়ে গিয়ে কোমড় ভেঙে গেলে তার হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। স্বামীর যা কিছু ছিল তার চিকিৎসার খরচ করেও তাকে ভালো করতে পারেননি। অন্যদিকে তাদের বড় মেয়ের বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। ফলে হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য না থাকায় স্বামী ইউনুস আলীর ঘাড়ে উঠে আক্তারী বেগমসহ তারা মানুষের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
এদিকে গত কয়েকদিন আগে স্ত্রীকে ঘাড়ে নিয়ে স্বামী হেঁটে যাচ্ছে এমন ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি দেখতে পান পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ। তা দেখে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ  রংপুর সদর পুলিশ কোর্টে এটিএসআই পদে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এটিএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। পরে কয়েক দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সংবাদকর্মীদের সহযোগিতায় তাদের খুঁজে পান এবং রংপুর থেকে নিজে একটি হুইল চেয়ার কিনে পাঠিয়ে দেন পঞ্চগড়ে।
এ বিষয়ে আক্তারী বেগম বলেন, একসময় আমার স্বামীসহ দিনমজুরের কাজ করে আমাদের চলত সংসার। কিন্তু গত কয়েক মাস আগে পা পিছলে পড়ে কোমড় ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আমার হাঁটাচলা। আমরা গরিব মানুষ, হুইল চেয়ার কেনার টাকা নেই। মেয়ের বিয়ে দেবো তাই ভিক্ষা করার জন্য জেলায় জেলায় ঘুরি। আমাকে যে পুলিশ ভাই হুইল চেয়ার দিয়ে সহযোগিতা করল তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 
আক্তারী বেগমের স্বামী ইউনুস আলী বলেন, আমার অসুস্থ স্ত্রীকে কোলে নিয়ে আমি ভিক্ষা করি। আমার সামর্থ্য না থাকায় তাকে হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারিনি। আজকের শেখ মোস্তাফিজ ভাই যে উপকার করল তার ঋণ আমি কোনো দিন পরিশোধ করতে পারব না। খুব ভালো লাগছে আমার স্ত্রী এখন হুইল চেয়ারে বসে একটু হলেও চলতে পারবে। 
এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য শেখ মোস্তাফিজ বলেন, আমি হঠাৎ করে কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখতে পাই বৃদ্ধ ইউনুস আলী তার স্ত্রীকে ঘাড়ে করে নিয়ে মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়ে বেড়াচ্ছে। পরে জানার পর কয়েক দিন ধরে পঞ্চগড়ে আমার পরিচিতদের সহযোগিতা নিই। তাদের খোঁজ করে পরে স্থানীয় সাংবাদিক ভাইয়েরা পঞ্চগড় শহরে তাদের দেখতে পেলে আমাকে জানায়। পরে আমি সঙ্গে সঙ্গে রংপুর থেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে পঞ্চগড়ে পাঠিয়ে দেই এবং সাংবাদিক ভাইয়েরা তাদের হাতে তুলে দেন। আমি আজ গর্বিত এমন একজন অসুস্থ ও অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়াতে পেরে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়