কাগজ প্রতিবেদক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আশ্বাসে চার দিন পর ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে সচিবালয়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে এ ঘোষণা আসে।
এর আগে রাত সোয়া ৮টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে শেষ হয় এ বৈঠক। বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক নেতারা পণ্য পরিবহন ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সব পরিবহনেই এটা অ্যাফেক্টেড হয়। এরই মধ্যে বাস যারা চালান, তাদের সঙ্গে বিআরটিএর একটি সমঝোতা হয়েছে। নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে নৌ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আজকে পণ্য পরিবহন এবং প্রাইম মুভার, ট্রাক, কাভার্ডভ?্যান, ট্যাংকলরি- এ ধরনের পরিবহনের মালিক-শ্রমিক নেতারা এখানে এসেছিলেন তাদের দাবি নিয়ে। তাদের প্রথম দাবি ছিল তেলের মূল্য কমাতে হবে, বৃদ্ধি করা যাবে না। আমরা মনে করি তাদের এ দাবি যৌক্তিক। সেজন্য আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা হলো আমরা তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই- যাদের নাকি সেবা তারা দেন, তাদের আমরা অনুরোধ করব, তাদের সঙ্গে বসে একটা যৌক্তিকভাবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া যেন বৃদ্ধি করে দেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, দীর্ঘক্ষণ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। সেই আলোচনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ যৌক্তিক ভাড়া নিয়ে আলোচনার পরই ধর্মঘট চূড়ান্ত প্রত্যাহার করা হবে। মালিকরা গাড়ি বন্ধ রেখেছিলেন, সেটা এখন থেকে স্থগিত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহন চলবে। এটা নিয়ে আমাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। মালিক-শ্রমিকরা আবারও চূড়ান্তভাবে বসবে, কীভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা যায়।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ বলেন, আমাদের দাবি ছিল ভাড়া ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। সন্তোষজক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আপাতত আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করলাম।
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ছাড়াও বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি ও প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৪ নভেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। বাড়তি দামের কারণে ৪ নভেম্বর থেকেই পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন মালিকরা। এবং যাত্রীবাহী বাস চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে রবিবার যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হলেও ধর্মঘট অব্যাহত রাখেন পণ্যবাহী যানবাহন মালিকরা।