ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

শিল্প খাতে নতুন শঙ্কা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : বিশ্ববাজারে বর্তমানে তুলার দাম প্রতি পাউন্ড ১ ডলার ১০ সেন্টেরও বেশি। যা করোনা মহামারি শুরুর আগেও ছিল প্রায় ৬৫ সেন্ট। তাই ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী দামে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। করোনাপরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। বাড়ছে পণ্যের দাম। জ্বালানি তেলের কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। ব্যাংকে বেড়েছে ডলারের দাম। এভাবে দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়েছে দেশের প্রায় সব ধরনের শিল্প।
বাড়তি ব্যয়ে পণ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে বেশি দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও ক্রেতারা দাম বাড়াননি। এতে করে শিল্প খাতে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকট থেকে উত্তরণে উদ্যোক্তারা করোনাকালীন প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, এলসির সীমা বাড়ানো, চলতি মূলধনের ঋণসীমা বাড়ানোর দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের প্রণোদনার ঋণ এক দফার পরিবর্তে একাধিকবার দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। এসব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারের এ অস্থিতিশীলতা এখন বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়কেও উসকে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। গত অর্থবছর (২০২০-২১) দেশের আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন টান পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। সার্বিকভাবে দেশের গোটা অর্থনীতিতেই এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক পণ্যবাজারে মূল্যের বর্তমান গতি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ভোরের কাগজকে বরেন, বিশ্ববাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে, এর প্রভাব পড়েছে আমাদের রপ্তানিতে। একই সঙ্গে কন্টেইনার ভাড়াও বেড়েছে। ৫ হাজার ডলারের পরিবর্তে এখন গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার ডলার। তিনি বলেন, এসব কারণেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়তি দেখা যাচ্ছে। তবে যে অনুপাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, সে অনুপাতে আমাদের লভ্যাংশ বাড়ছে না। রুবেল বলেন, এ মুহূর্তে অন্য দেশগুলো খারাপ অবস্থায় আছে বলেই বাংলাদেশে অর্ডার বেশি আসছে। বায়াররা বাংলাদেশের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এ কারণেই বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করতে পারছি।
এক্সপোর্ট ও অর্ডার বাড়ছে উল্লেখ করে রুবেল আরো বলেন, সবই ঠিক আছে। রপ্তানিতে গ্রোথ হচ্ছে তবে সাসটেইনেবল গ্রোথ হচ্ছে না। সাসটেইনেবল না হলে ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো উপকার আসবে না। এজন্য আমাদের এখন অবশ্যই বায়ারদের সঙ্গে বার্গেডিং করতে হবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বেশি সংকটে পড়েছে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প। এর মধ্যে পোশাক শিল্পের অবস্থা খুবই নাজুক। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৬ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। পোশাক শিল্পের অবস্থা জানিয়ে গত ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনায় তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল ও স্থানীয় কাঁচামালের মূল্য কল্পনাতীতভাবে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী তুলার দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানোর কারণে নিট সুতার দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। একই কারণে ফেব্রিক্সের দাম বেড়েছে ২৫ এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি বা এক্সেসরিজের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী পরিবহন ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। চিঠিতে আরো বলা হয়, এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজ নিজ ব্যাংক থেকে দেয়া ক্রেডিট লিমিট বা কম্পোজিট লিমিটেডের মধ্যে কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না। পণ্যের দাম বাড়ায় এলসি খুলতেও বেশি ঋণ লাগছে।
অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকের দেয়া এলসি লিমিটের অতিরিক্ত ঋণের জন্য জামানত চাওয়া হচ্ছে। ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণের জন্য জামানত চাওয়া কোনোভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ও চলতি মূলধনের চলমান সীমা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তারা।
এদিকে রপ্তানি পণ্যের অর্ডার বেশি হওয়াতে আমদানিও বেড়েছে। ফলে হঠাৎ করেই দেশের আমদানি ব্যয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হওয়ায় টান পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দামও বেড়েছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৮০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে।
অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড ৮০০ কোটি ডলার বাজার থেকে কিনে নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার থেকে কিনে নেয়া ডলারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বেড়েছে। তবে সা¤প্রতিক সময়ে রিজার্ভের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে। সর্বশেষ ৬ অক্টোবর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ নিয়ে এখনো উদ্বেগে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হলেও বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ায় রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে সরকারের চলতি হিসাবের ভারসাম্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে নিকট ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় কোনো চাপ আসবে বলে মনে হয় না। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতির ওপর আমাদের নীতিনির্ধারকদের নজর রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়