ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় : বর্ধিত হারে ভাড়ার কোনো তালিকা টাঙানো হয়নি > সিএনজিচালিত বাসও বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছে > যাত্রীরা ক্ষুব্ধ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মহানগরে ৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। দূরপাল্লার বাসে ৫০ থেকে ২০০ টাকা।
দেব দুলাল মিত্র : নিষেধের পরও সিএনজিচালিত সব বাস ডিজেলচালিত বাসের মতোই নিজেদের ইচ্ছেমতো বর্ধিত হারে ভাড়া আদায় করছে। অথচ ভাড়া বাড়ানোর পর বিআরটিএ চেয়ারম্যান স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘বর্ধিত ভাড়া সিএনজিচালিত বাসের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রযোজ্য হবে না’। কিন্তু পরিবহন কোম্পানিগুলো সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিজেলচালিত বাসের মতোই যাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত হারে ভাড়া আদায় করছে। অন্যদিকে বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলো ভাড়ার চার্ট ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। মহানগর এলাকায় ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে। অন্যদিকে দূরপাল্লার বাসে দূরত্ব ভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে বাস কন্ডাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটিও হচ্ছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেশির ভাগ বাসে এখন সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে নিচ্ছে।
এদিকে বাস ভাড়া মনিটরিংয়ে রাজধানীতে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট রাস্তায় নেমেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে তাদের তৎপরতা দেখা গেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন বাস থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় যাত্রীরাও অভিযোগ করেন। চালকদের প্রতি বাড়তি ভাড়া না নেয়ার আবেদন জানান।
জানা গেছে, ঢাকার নগর পরিবহনে বেশির ভাগ বাস চলে সিএনজিতে। এসব বাসে বর্ধিত ভাড়া নেয়ার কথা নয়। কিন্তু সিএনজিচালিত বাসগুলোও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, টঙ্গী, সদরঘাট ও মিরপুর রুটে চলাচলরত সব বাস সিএনজিচালিত। চালক ও হেলপাররা এখন তাদের বাস সিএনজিতে চলে না বলে দাবি করছে। গাড়িতে সিএনজি সিলিন্ডার থাকলেও তারা বলছে, আগে চলতো, এখন ডিজেলে চলে।
৮ নম্বর, অনাবিল, রাইদা, তুরাগ

পরিবহনের বাসগুলোর বেশি ভাগই সিএনজিচালিত। এসব বাসের পেছনে সিএনজির সিলিন্ডার রয়েছে। তারপরও তারা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। এই বিষয়টি নিয়ে গতকাল দিনভরই যাত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা কাটাকাটি হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আগে ৪৫ টাকা ভাড়া ছিল। এখন কেউ ৫৫ টাকা, কেউ ৬০ টাকা আবার কেউ ৭০ টাকাও ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাইদা পরিবহন গতকাল সকালের দিকে ৭০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। ওই বাসের যাত্রী অরূপ চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাইদা পরিবহনে যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা ৫০ টাকার ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ালে হয় ৬৩ দশমিক ৫ টাকা। কিন্তু ৭০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।
তুরাগ পরিবহনের চালক বলেন, রাস্তায় নামলে সিএনজি আর ডিজেলের গাড়ির হিসাব থাকে না। সিএনজিচালিত গাড়ির যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা খুবই কম। ১০০ টার মধ্যে হয়তো ১৫টি সিএনজিচালিত। মালিক যে ভাড়া নিতে বলেছে আমরা সেই ভাড়াই নিচ্ছি। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে গুলশান পর্যন্ত আগে ২৫ টাকা ভাড়া ছিল। সোমবার থেকে পরিবহন কোম্পানির লোকজন ৩৫ টাকা ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন ওই রুটের যাত্রী আবুল বাশার। মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তান আগে ছিল ২০ টাকা। গতকাল সকাল থেকে এই রুটের পরিবহনের লোকজন ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করা শুরু করে। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টরের ব্যাপক বাকবিতণ্ডার একাধিক ঘটনা ঘটে।
দুপুরের দিকে কোনো কোনো বাসে কিছুটা কমিয়ে ২৫ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। বাস কন্ডাক্টর নিজেই জানে না কত শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে; অথচ তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া বাড়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। রামপুরা থেকে ফার্মগেট পূর্বের ভাড়া ২০ টাকা ছিল। এখন ৩০ টাকা হয়েছে। খিলক্ষেত থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া এখন ২৫ টাকা। কারওয়ানবাজার পর্যন্ত আগের ১০ টাকার ভাড়া এখন ১৫ টাকা হয়েছে।
এদিকে ভাড়া বাড়ানোর পর এখনো বিআরটিএ ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেনি। কিন্তু তারপরও সব রুটের পরিবহন কোম্পানিগুলো বর্ধিত ভাড়া আদায় শুরু করে। দূরপাল্লার বাসে দূরত্ব বিবেচনায় টিকেটের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যাত্রী আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মানিকগঞ্জে আগে দেড়শ টাকায় যাওয়া যেত। এখন সেই ভাড়া ২৫০ টাকা নেয়া হয়। বাস মালিকরা এখনো কাউন্টারের সামনে ভাড়ার তালিকা টাঙাননি। কিন্তু কোম্পানির লোকজন ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যাত্রা করছেন।
যশোর-মাগুরা রুটের দিগন্ত পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা মিজান জানান, ভাড়া বাড়ানোর নতুন তালিকা এখনো আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি, তবে আগের চেয়ে দূরত্ব ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। মাগুরার যাত্রী শরিফুল জানান, আগের ৪০০ টাকা টিকেটের মূল্য এখন ৪৫০ টাকা নিচ্ছি।
ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-কুয়াকাটা রুটের বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি ৫০-১৫০ টাকা করে বেশি আদায় করছে। যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা রুটের ঈগল পরিবহনের ৪০০ টাকার টিকেট আজ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। বেশি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে উত্তরবঙ্গের সব রুটের বাসে। টিকিট প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে টিকিট দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটের সব বাসের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। শ্যামলী এনআর পরিবহনের কক্সবাজার পযন্ত ৮০০ টাকার ভাড়া এক হাজার টাকা করা হয়েছে। এসি বাসগুলোর ভাড়াও একই হারে বাড়ানোর ফলে ১ হাজার ৬০০ টাকার ভাড়া এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়