ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

তিন তারকার বিদায়

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের পর্দা নামবে আর কয়েক দিন পরেই। এবার কোন দেশ শিরোপা ঘরে তুলবে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় ডুবে আছে ক্রিকেট বিশ্ব। এরই মধ্যে সপ্তম বিশ্বকাপ আসরে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তিন তারকা ক্রিকেটার। তারা হলেন আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো। সুপার টুয়েলভে নামিবিয়ার বিপক্ষে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন আসগর আফগান। নিজের শেষ ম্যাচটি রাঙাতে ভুল করেননি তিনি। তবে অজিদের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে জ¦লে উঠতে পারেননি গেইল-ব্রাভো। তবে তাদের দুজনের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ।
এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০১২ ও ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৪ সালের সেমিফাইনালিস্টরা এবার বিদায় নিয়েছে আগেভাগে। তাই ভাঙা মন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ রাঙাতে পারেননি গেইল ও ব্রাভো।
দুই ছক্কার মারে ৯ বলে ১৫ রান করেন গেইল। আউট হয়েছেন প্যাট কামিনসের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে। একই ম্যাচে ডোয়াইন ব্রাভো ১২ বলে ১০ রান করে হ্যাজলউডের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
তবে গেইলের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। ২০০৬ সালে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল এ ব্যাটিং দানবের। শেষ পর্যন্ত এটিই শেষ ইনিংস হয়ে থাকলে তার ক্যারিয়ারটা দাঁড়াবে এমন- ৭৯ ম্যাচ, ৭৫ ইনিংস, ১ হাজার ৮৯৯ রান, ২৭.৯২ গড়, ১৩৭.৫০ স্ট্রাইক রেট, ১৪ ফিফটি, ২ সেঞ্চুরি ও ১১৭ সর্বোচ্চ। ক্যারিয়ারে গেইল মেরেছেন ১৫৮টি চার ও ১২৪টি ছয়। ৩০১ ওয়ানডে ম্যাচে তার সংগ্রহ ১০ হাজার ৪৮০ রান। ১০৩ টেস্টে মাঠে নেমে করেছেন ৭ হাজার ২১৪ রান।
২০১২ ও ২০১৬ সালে শিরোপাজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য ছিলেন গেইল। ২০১২ সালে কলম্বোতে ফাইনাল জয়ের পর গেইলের ‘গ্যাংনাম স্টাইলের’ নাচ যেন ধরেছিল টি-টোয়েন্টিতে নতুন ক্যারিবিয়ান দাপটের সুর। চার বছর পর কলকাতায় ফের উল্লাসে মেতেছিলেন তারা। ক্রিকেট অনুরাগীরা ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভোকে তাদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে মনে রাখবে অনেক দিন।
২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল গায়ানার জর্জটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন ব্রাভো। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে উইন্ডিজের এ অলরাউন্ডারের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর ওয়ানডেতে ব্রাভোর জাতীয় দলে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে বছর অবশ্য টেস্ট দলেও জায়গা করে নেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর দীর্ঘ সময় ধরে দলের বাইরে ছিলেন তিনি। পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিদায় বলে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। পরের বছরের নভেম্বরে জানান, টি-টোয়েন্টি দলে ফিরতে চাওয়ার কথা। তার সেই নতুন অধ্যায় শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। সাদা পোশাকে ৪০ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরিতে তার রান ২ হাজার ২০০ রান। ডানহাতি পেস বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮৬টি।
আর ৯১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১ হাজার ২৫৫ রান করেছেন উইন্ডিজ অলরাউন্ডার। আর বল হাতে ৭৮টি উইকেট শিকার করেছেন ব্রাভো।
এদিকে সুপার টুয়েলভে নামিবিয়ার বিপক্ষে নিজের শেষ ম্যাচটি রাঙাতে ভুল করেননি আসগর আফগান। তিনি ২৩ বল খেলে ৩১ রান করেন। তিনি যখন ব্যাট শেষে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান, তখন তাকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থ খেলোয়াড়রা। এরপর আফগানিস্তান ফিল্ডিং করার আগে মাঠে নামার আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ফলে তিনি মাঠে নামেন খানিক বাদে। আসগর আফগান নিজের শেষ ম্যাচে যেমন সমর্থকদের হতাশ করেননি, পুরো দলও তার বিদায় বেলায় তাকে হতাশ করেনি।
২০০৯ সালের এপ্রিলে বেনোনির উইলোমুর পার্কে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু আসগরের। অভিষেকের পর অর্ধেকের বেশি সময় অধিনায়ক ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৪ টেস্ট, ৫৯ ওয়ানডে ও ৫২ টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট ১১৫ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন আসগর।
আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচেও অধিনায়ক ছিলেন আসগর। ২০১৮ সালের ১৪ জুন ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে অভিষেক হয় আফগানিস্তানের। আসগরের নেতৃত্বে আফগানিস্তান চারটি টেস্ট খেলে দুটি করে জয় ও পরাজয় দেখেছে। যেখানে পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারের গড় ৪৪, অধিনায়ক হিসেবে সেখানে গড় ৪৯! টেস্টের একমাত্র সেঞ্চুরিও করেছেন অধিনায়ক হিসেবে। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৭৪ ম্যাচে ১১০.৩৭ স্ট্রাইক রেট ও ২৩.৭২ গড়ে আসগরের রান ১ হাজার ৩৫১।
কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও এ ফরম্যাটে চারটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন সাবেক আফগান অধিনায়ক। চারটিই করেছেন অধিনায়ক হিসেবে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটিও অধিনায়ক হিসেবে খেলে করেছে আসগর। অধিনায়কত্বের চাপ যে পারফরম্যান্সের ওপর তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি, তার প্রমাণ মেলে এসব পরিসংখ্যানেই।
টি-টোয়েন্টিতে সফল অধিনায়ক হিসেবে সবার উপরে আছেন আসগর আফগান। তার নামের সঙ্গে যুক্ত আছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ইংল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক ইয়ন মরগান। তারা প্রত্যেকে অধিনায়ক হিসেবে ৪২টি করে ম্যাচ জিতেছেন।
টি-টোয়েন্টিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড ভেঙে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন। কিন্তু এরপরই অধিনায়কত্ব হারান তিনি। যদি তাকে অধিনায়কের পদ থেকে না সরিয়ে দেয়া হতো, তাহলে তার জয়ের পরিমাণটা আরো বেশি হতো। ধোনি ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেক আগে। আসগর ছাড়লেন কয়েকদিন আগে। এখন তাই ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ডটা যাবে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মরগানের দখলে।
:: কামরুজ্জামান ইমন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়