ক্র্যাবের ২ সদস্যকে হুমকি দেয়া পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

আগের সংবাদ

গাপটিল-বাটলার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

পরের সংবাদ

ক্যাব ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি : বাসযাত্রীদের ওপর জুলুম

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যানের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
গতকাল সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা বিইআরসির আইনের পরিপন্থি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং জ্বালানি বিভাগ নিজ বিবেচনায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এভাবে তারা দাম বাড়াতে পারে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে লোকসান কমাতে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন যে দাবি করেছে তা যৌক্তিক নয়। বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল, তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ৫৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করেছে অথচ তখন দাম কমায়নি।
তিনি আরো বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহার অথবা বাতিল করতে হবে। তেলের দাম বাড়ানোর পুরো বিষয়টি বিইআরসিতে পাঠাতে হবে। দাম বাড়ানোর ফলে কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার আইনে রয়েছে। অবিলম্বে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল গঠন করতে হবে।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে যখন দাম কম ছিল তখন বাংলাদেশের দাম কমেনি এবং ভক্তদের কাছ থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি আদায় করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞাপন কয়েক দিন আগে দেখলাম- বিপিসি ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারের তহবিলে জমা দিয়েছে। এছাড়া ৩৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে তা দিয়ে ‘জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল’ গঠন করা হোক, যেন এই তহবিলের টাকা দিয়ে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল করা যায়, মূল্য সহনীয় হয়। জনস্বার্থে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি ভাবছি।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এবং বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে ভাবতে হবে।
এদিকে বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত ভাড়া বাতিল করে যাত্রী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ন্যায্য, গ্রহণযোগ্য, বাস্তবসম্মত ভাড়া নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করে ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর পর সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সহনীয় মাত্রায় ভাড়া বাড়ানো হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বাস ও লঞ্চ মালিকদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সরকার তাদের চাহিদা অনুযায়ী একচেটিয়া ভাড়া বাড়িয়েছে। যাত্রীর স্বার্থ বিকিয়ে গলাকাটা ভাড়া নির্ধারণের ফলে দেশের নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষকে গভীর সংকটে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরে বাস ভাড়া জুলুম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ পরিবহন মালিকদের পকেটে ঢুকে পড়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর একদফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। তেলের দাম বাড়ানোর পর আবারো ভাড়া বাড়ানো হলো। এতে যাত্রীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরের বর্ধিত বাস ভাড়া কার্যকরের আগে এখানে কী পরিমাণ বাস গ্যাসে এবং তেলে চলে সেই হিসাব বের করার প্রয়োজন ছিল। ২০ বছর আগে কেনা বাস ও ব্যাংক লোন দেখানো হয়েছে। এভাবে নানা খাতে অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখিয়ে এক লাফে কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সার ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করলে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা যেত। ১৮ পয়সার বেশি বাড়ানোর কথা নয়।
তিনি আরো বলেন, নৌপথের ভাড়াও সড়ক পথের দ্বিগুণ হয়েছে। দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রীধারণ সক্ষমতার লঞ্চের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং ছোট নৌকা ও লঞ্চ, ট্রলারের পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় এসব নৌযানের ভাড়া ১ টাকা ২০ পয়সা করার দাবি জানাচ্ছি। বর্ধিত ভাড়া বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাত্রী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মতামতের ভিত্তিতে ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য, বাস্তবসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শরিফুজ্জামান শরিফ, সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়