ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

আগের সংবাদ

কপ-২৬ : জলবায়ু বিপর্যয় রোধ > গরিব দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

পরের সংবাদ

সড়কে মৃত্যুমিছিল দায় কার?

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সড়কে মৃত্যুমিছিল যেন স্বাভাবিক ঘটনার মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর। তবুও ন্যূনতম বিচলিত হতে দেখা যায় না চালকদের। মহাসড়কগুলোতে নির্দেশিত গতিসীমা অমান্য করা যেন চালকদের নেশায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অনলাইন, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকার তথ্যাদির হিসাব বিবেচনায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬০০ জন। গবেষণা বলছে, কমার পরিবর্তে সড়ক দুর্ঘটনার হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনার পরও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় সড়কের বিশৃঙ্খল অবস্থা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের দেশের ইন্সপেকশান সেল গঠন করে খুব দ্রুত মহাসড়কগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ভৌগোলিকভাবেই আমাদের দেশের সড়ক-মহাসড়কের কাঠামো কিছুটা আঁকাবাঁকা। দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়কে বিভিন্ন সিগন্যাল সংবলিত সাইনবোর্ড দিয়ে রাখলেও সেসবের দিকে তেমন নজরই নেই চালকদের।
আবার অনেক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতার কারণে নির্দেশনা বোর্ড থাকে না। আইন অমান্য করে অনেকেই পার পেয়ে যাওয়ায় এসব সিগন্যালের প্রতি অনীহা স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, আইনজীবী এমনকি পরিবহন শ্রমিকও বাদ যায়নি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা থেকে। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা একটি আন্দোলন দেখেছি। যেটি ছড়িয়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে। সেই আন্দোলন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। আমাদের দেশে সাধারণত জরুরি সেবা খাতের যানবাহন যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ির জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় দেখা যায় সড়কের বিশৃঙ্খলতার ফলে মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যু হয়। এতে অসময়ে চরম সংকট এবং ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। জরুরি সেবার এসব যানবাহনের আলাদা লেনবিষয়ক আলোচনা সরকারের পরিকল্পনায় যুক্ত করা অতীব জরুরি। পুলিশের অভ্যন্তরীণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল বছর সারাদেশে ৮৬.৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে চালকের বেপরোয়া গতির কারণে। ভুল ওভারটেকিংয়ের কারণে ৪.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০.৬৯ শতাংশে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার জন্য অন্যতমভাবে দায়ী চালক। এই খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো সময়ের দাবি। তাছাড়া রাজধানীতে চলাচলকারী বাসের বড় একটি অংশই ফিটনেসবিহীন। ফলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ সময়েই চালক ব্যর্থ হয়, ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪২০টি। এসব গাড়ির বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা রয়েছে ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৪ এবং বাকি ৭ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬টি গাড়ি চলছে অবৈধ চালকের হাতে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এ বছর একই পরিবারের সব সদস্যের মৃত্যুর খবর আমাদের ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে রাতের বেলায় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কম থাকায় চালকরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালায়। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ধারণক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত ভার বহন করা। ভারী যানবাহনগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী দুজন করে লাইসেন্সধারী চালক থাকার কথা থাকলেও তা নেই অধিকাংশ গাড়িতে। এমনকি মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোকে নিরুৎসাহিত করা হলেও সেদিকে সচেতন নয় অধিকাংশ চালক, তাদের অনেকে আবার নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন অবস্থায়ও গাড়ি চালান। ফলে হঠাৎ করে কোনো গাড়ি সামনে চলে এলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখনো কখনো চালকের পরিবর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন সহকারীকেও বাস-ট্রাকচালক হিসেবে দেখা যায়। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার এটিও একটি বড় কারণ। আমাদের দেশের যানবাহন চালকের অধিকাংশেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। এমনকি আইন সম্পর্কেও অনেকেরই জানা নেই সঠিকভাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এদিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে সংকট ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।
বাস-ট্রাক চালকরা রীতিমতো প্রতিযোগিতার উৎসবে মেতে উঠছে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে। এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় সড়কের মৃত্যুমিছিল ঠেকানো অনেকটাই দুরূহ হয়ে পড়বে।

মো. খশরু : যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়