ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

আগের সংবাদ

কপ-২৬ : জলবায়ু বিপর্যয় রোধ > গরিব দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

পরের সংবাদ

ভাঙা বাড়ির ভালোবাসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঘরের জানালা দিয়ে আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে হারিছের ভাবনাগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আজ সাতাশ বছর পার হতে চলেছে, জীবনে যা চেয়েছিল সবই প্রায় পূর্ণ, কিন্তু তারাদের অগণিত ধারায় যেন অনেক না-বলা প্রশ্ন, অতীত স্মৃতি আকুলি-বিকুলি করছে। সময় দেখে হারিছ, এবার বের হওয়া যাক। হুরের টিউশন হয়তো ছুটি হয়ে গিয়েছে। মেয়েকে নিয়ে একটু টুকিটাকি জিনিস কিনে বাড়ি ফিরবে। মোটরবাইক স্টার্ট দিয়ে লুকিং গøাস দুটি একটু পরিষ্কার করে নিয়ে রওনা দিল হারিছ।
হারিছের ১৩ বছরের মেয়ে উচ্ছল ভঙ্গিতে ছুটে এসে বলল- বাবা, জানো আজ না একটা ঘটনা ঘটেছে।
– কী হলো আবার আজকে?
– শান্তা ম্যাডামকে রেদোয়ান না একটা লাভ লেটার দিয়েছিল।
– ওরে বাবা বলিস কী! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল হারিছ।
– তবে আর বলছি কী?
– তারপর কী হলো?
– আর বলো না, ম্যাডাম তো প্রথমে খুব হাসলেন। তারপর হলেন রেগেমেগে আগুন, রেদোয়ানকে এই মারে কী সেই মারে! মার খাওয়া হলে শেষ পর্যন্ত রেদোয়ান বলল, সে শুধু নিজের ফিলিংস শেয়ার করেছে মাত্র। প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার।
এটুকু বলেই হি হি করে হেসে গড়িয়ে গেল হুর। হারিছ ভাবে, আজ-কালকার প্রজন্মের ফিলিংস প্রকাশের ধরন ভারি অদ্ভুত, ছাত্র হয়ে টিচারকে প্রেম প্রস্তাব! মুচকি হেসে মোটরবাইকে উঠে হারিছ মেয়েকে বলল- চল্ চল্ বাইকে বস।
বাবা-মেয়ে দুজনে টুকিটাকি জিনিস কিনে বাড়ি ফিরল। ফ্ল্যাটের আলো জ্বলছে না দেখেই হারিছ বুঝল হাসিবা এখনো ফেরেনি; রোজই দেরি হচ্ছে। হাসপাতালে কাজের চাপ বেশ বেড়ে গিয়েছে ইদানীং, সেদিনের হাসিবা এখন গাইনি ডাক্তার। লিফটে ছয়তলায় উঠে ফ্ল্যাটের চাবি খুলে দিল হারিছ।
– বাবা এসিটা একটু চালাচ্ছি।
– আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত-মুখ ধোও, বাইরের পোশাকটা চেঞ্জ করো, পানি খাও।
– বাবা একটু পরে, আগে একটু ঠাণ্ডা হয়ে নিই।
– তুই কথা শুনিস না। মোবাইলটা আবার কোথায় গেল!
বিরক্ত হয়ে হারিছ নিজের মনেই কথা বলে ওঠে। তখন থেকে রিং হচ্ছে, হাসিবাই হবে বোধহয়, হ্যাঁ ঠিকই! ওপাশে হাসিবার গলা- হুরকে নিয়ে কখন ফিরলে?
হারিছ বলল- এই তো এখনই।
– শোনো, আমার ফিরতে একটু দেরি হতে পারে, দেরি হলে তোমরা খেয়ে নিও কেমন?
‘আচ্ছা’ বলে হারিছ সোফায় বসে মেয়ের টিউশনের ঘটনাটা বলা শুরু করতে যাবে তার আগেই ফোন রেখে দিয়েছে হাসিবা! বেচারির খুব কাজের চাপ, পরে বলা যাবে। কিছুক্ষণ সোফাতেই বসে থাকে হারিছ। তারপর আস্তে আস্তে উঠে খাবার গরম করতে যায়। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে নিচের রাস্তাটা বেশ দেখা যায়। অন্ধকার চিরে আলোর ঝলকানি, যানবাহনের চলাচল, একে-অন্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা দেখতে দেখতে হারিছের যেন কেমন ঘোর লেগে যায়। অপার পূর্ণতার মাঝে কেমন যেন শূন্যতা, কোথাও যেন রয়েছে সেই না-পাওয়ার শূন্যতা, যন্ত্রণা। চাকরি-বাকরি নেই। ছোট একটা বিজনেস ছিল, লোকসানের ক্ষতিপূরণ করতে করতেই হাসিবার সোনার গহনায় টান পড়ল। টাকা-পয়সার জন্য সংসারে অশান্তি কোনোদিন চায়নি হাসিবা। হারিছকে কখনো চাপ সৃষ্টি করেনি এটা লাগবে, ওটা লাগবে বলে। বরং হারিছের অভাব অনটনের সময় আরো যতœশীল হয়েছে সংসারী মেয়েটা। স্ত্রী হিসেবে হাসিবার তুলনা সে নিজেই। যাক সে সব কথা। অনেক রাত হলো। হারিছ ডাকল, হুর, এই হুর, খাবি আয়, কীরে শুনতে পাচ্ছিস না?
– আসছি বাবা।
কলিংবেল বেজে উঠল। কে আবার এলো এতো রাতে? নিজের মনে বলতে বলতে দরজা খুলতে গেল হারিছ।
– আরে তুমি! বললে দেরি হবে।
হাসিবা ভেতরে ঢুকে বলল- কাজ হয়ে গেল। তোমরা এখনো খাওনি? রাইসা ফোন করেছিল একটু আগে।
বুকটা ধড়াস করে ওঠে হারিছের। জিজ্ঞেস করল- কেন কী হলো? কোনো সমস্যা?
জবাব না দিয়ে হাসিবা চলল ওয়াশরুমে। পেছনে পেছনে হারিছ এলো। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল- শুনছো, কী বলছে রাইসা, মা ওরা সব ভালো আছে তো? আমাকে ফোন না করে তোমাকে করল?
– আরে না না কিছু না। মায়ের শরীরটা এখন ভালো আছে। সামনের সপ্তাহে মাকে নিয়ে রাইসা আসবে জানাল আর কী।
– ও তাই?
হারিছ খুব খুশি হলো মা আসবে শুনে।
– যাও, হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে চলে এসো।
– হুঁ।
রাতে ঘুমাতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছে। পরের দিন ছুটি। ছুটির দিনে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ব্যাপার না। হাসিবা রোজ ফজর নামাজে ওঠার জন্য একটু আগেভাগেই ঘুমিয়ে নেয়। আজ একটু দেরিতেই ঘুমাতে গেল সে। বারান্দায় হারিছকে উদাসীন দেখে এগিয়ে এলো। কোমল গলায় ডাকল, ঘুমাবে কখন? রাত জেগে কী এত ভাবছো?
হারিছ মুখে কিছু বলল না। হাসিবার হাত দুটি মুঠোয় নিল শুধু। হাসিবা আগের চেয়ে আরো মায়া মাখা গলায় বলল, জীবনে যখন যা আসবে সেটাকেই সানন্দে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। অভাববোধ থাকা ভালো, অভাব আছে বলেই সুখের নির্যাস মধুময় লাগে।
বলতে বলতে হাসিবা হারিছের মাথাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিল। হারিছের দৃষ্টি তখন লোহার গ্রিলের বাইরে অন্ধকার ভেদ করে রাতের আকাশের তারার দিকে। অগণিত তারার দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ল, এই জগতে ভালোবাসার মতো মধুময় আর কিছু সৃষ্টি করেননি বিধাতা।
:: বাহ্রা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়