ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

আগের সংবাদ

কপ-২৬ : জলবায়ু বিপর্যয় রোধ > গরিব দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

পরের সংবাদ

তৃণমূলের রাজনীতি : বিএনপি (ফরিদপুর বিভাগ) > কমিটি নেই ১০ বছর ধরে, সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ১০ বছর আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর আজও বিএনপির ফরিদপুর জেলায় পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক কমিটি হয়নি। দলীয় কার্যক্রম চলছে নেতৃত্বহীনভাবেই। নেতাদের কোন্দলে এমনিতেই জর্জরিত দল। তার ওপর দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দলের পুরনো কোন্দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ। ফলে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছেন ছন্নছাড়া তৃণমূল নেতারা।
জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ ১০ বছর আগে : ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘অতিসত্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এরপর ৩ বছর পার হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রুপিংয়ের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই জেলা শাখায় কোনো কমিটি করা যায়নি। বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান ও সেলিমুজ্জামান সমন্বয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে

নিলেও তা চলছে ঢিমেতালে। সম্প্রতি কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। তিনি স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে জেলা কমিটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন।
ফরিদপুর বিভাগে বিএনপির ৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ফরিদপুর জেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাদারীপুর জেলার কমিটি দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে। এ জেলায়ও আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শরিয়তপুরে কমিটির মেয়াদ থাকলেও অন্তর্কোন্দলে দলীয় কার্যক্রম নেই। গোপালগঞ্জে আহ্বায়ক কমিটি এবং রাজরাড়ীতে আংশিক কমিটি দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
স্থানীয় নেতারা জানান, ২০১৯ যখন জেলা বিএনপির যে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়, সেই কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের আগস্টে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সভা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই সভার আগের রাতে জেলা বিএনপির দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে তিনি ওই সভা বাতিল করে দেন। পরে জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে ঢাকায় সভা হয়। কিন্তু মাঝপথে দুপক্ষের রেষারেষিতে সভার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান লন্ডন থেকে অনলাইনে জেলা বিএনপির পাঁচ নেতা, সভাপতি, এক নম্বর সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর দুদিন পর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই বিভক্ত জেলা বিএনপি সব কর্মসূচি পালন করছে বিভক্ত হয়ে। একটি অংশ জেলা বিএনপি নামে এবং অন্য অংশ সদর উপজেলা ও শহর বিএনপির নামে কর্মসূচি পালন করে।
সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয় আইনজীবী সমিতি ভবনে আলোচনা সভা করেছে জেলা বিএনপি। এতে সদর উপজেলা ও শহর বিএনপির নেতারা যোগ দেননি। সদর উপজেলা বিএনপি গত শুক্রবার বিকালে শহরের কমলাপুরে প্রয়াত বিএনপি নেতা কামাল ইবনে ইউসুফের পৈতৃক বাড়িতে আলোচনা সভার আয়োজন করে।
দুটি শক্তিশালী বলয়ে বিভক্ত সংগঠন : ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান, অন্যপক্ষে সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। দুজনেই প্রয়াত হওয়ার পর তাদের উত্তরাধিকারদের মধ্যেই সেই বিরোধ চলে আসছে।
প্রয়াত দুই নেতার উত্তরসূরিদের অসম প্রতিযোগিতার জের পোহাতে হচ্ছে সাধারণ কর্মীদের। যাদের একজন হচ্ছেন- বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ। যিনি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যজন হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ কন্যা চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় নেতারা জানান, এই দুই নেতার অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর কারণেই কমিটি পুনর্গঠন করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় টিমকে। কমিটিতে দুপক্ষ থেকে ‘মাইম্যান’ ঢুকাতে গিয়ে দ্ব›দ্ব বাড়ছে। জেলা কমিটি না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। এমনকি জেলা সদরে নেই দলটির কোনো কার্যালয়ও।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলে যারা দীর্ঘদিন পদপদবি নিয়ে ছিলেন তারা তৃণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজখবর নেন না। নেতাদের পারস্পরিক গ্রুপিংয়ের কারণে জেলা কমিটি হয় না সময়মতো। করোনা ভাইরাসের কারণে জেলায় দলের পক্ষ থেকে জোরালো ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়নি। যেটুকু হয়েছে সেটি বিলুপ্ত কমিটির নেতারা ব্যক্তিগতভাবেই করেছেন। বিগত দিনে যারা রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে নানা ঝামেলার মধ্যে পড়েছিলেন তাদের প্রতি কোনো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি নেতারা। ফলে অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে দলের কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
জানতে চাইলে ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ভোরের কাগজকে বলেন, কমিটি না থাকায় স্থবিরতা নেই। পুরনো কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে আন্তরিক এবং সবাই মাঠে সক্রিয়। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করছেন। তার নির্দেশ মতো আমরা কাউন্সিলের প্রস্তুতি হিসেবে কমিটি গঠনের কাজ করছি।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ মৃত্যুর আগে একটি আহ্বায়ক কমিটি করে গিয়েছিলেন। এর আগেও তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে গিয়েছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহানের কাছে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেই কমিটি অনুমোদন দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু কী কারণে শেষ পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা হলো না, বলতে পারব না।
তবে অনেকে এই দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন। জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে কিবরিয়া বলেন, জেলা বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল ফরিদপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতাদের। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এ জন্য দল দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। দল বাঁচাতে শিগগিরই শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়