ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পারপূগী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ স্টেভিয়া। বাংলাদেশ সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় রওনক আরা নূর-এ-ফেরদৌস নামে এক নারী উদ্যোক্তা সদর উপজেলার শিবগঞ্জ পারপূগী গ্রামে ২ একর জমিতে স্টেভিয়ার চাষ শুরু ক?রেন।
এই নারী উদ্যোক্তাকে স্টেভিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ করেন বাংলাদেশ সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউট। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে। অল্প পরিশ্রম, অল্প পুঁজিতে নতুন এ ফসল চাষ করে কৃষক লাভবান হবে বলে এমন দাবি সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের। গত বছর পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা আসে। এরপরই কৃষক পর্যায়ে স্টেভিয়া চাষ ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন শুরু হয়। প্রশিক্ষণও দেয়া হয় কৃষকদের। কৃষকও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্টেভিয়া চাষে। বায়ো-টেকনোলজি গবেষণা কেন্দ্রে স্টেভিয়া গাছের বংশ বিস্তার ও গুণাগুণ যাচাই করে সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। পরে ২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে গাছটি সংগ্রহ করা হয়।
২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে এই গাছ বাংলাদেশে নিয়ে আসে সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউট। দেশের জলবায়ুর সঙ্গে সহনশীল করে তুলতে ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রে এই উদ্ভিদ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালায় প্রতিষ্ঠানটি। পরে এর চাষ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ। এ বছরই কৃষক পর্যায়ে এর চাষ শুরু হয়েছে জেলায়। ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম বাণিজ্যিক চাষ শুরু হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে স্টেভিয়া। স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ড এলাকায় চাষাবাদ হতো।
১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এমএস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। প্যারাগুয়ের গুরানী ইন্ডিয়ান নামক উপজাতীয়রা একে বলে কা-হি-হি অর্থাৎ মধু গাছ।
আফ্রিকাতে এটি মধু পাতা বা চিনি পাতা নামে পরিচিত। এছাড়াও থাইল্যান্ডে মিষ্টি ঘাস, জাপানে আমাহা সুটেবিয়া ও ভারতে মধু পারানি নামে স্টেভিয়াকে অভিহিত করা হয়। ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়। জাপানে চাষাবাদ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরায়েল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়।
স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। পাতার গুঁড়া দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এ ঔষধি গাছের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জাপানে হালকা পানীয় কোকাকোলাতে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, স্টেভিয়া গাছের পাতা মিষ্টি। সবচেয়ে মিষ্টির নির্যাস যা শুধু মিষ্টিই নয়, চিনি থেকে ২৫০-৩০০ গুণ পর্যন্ত বেশি মিষ্টি। স্টেভিয়া চাষ করে হেক্টর প্রতি বছরে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেভিয়া চাষ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।