ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

আগের সংবাদ

কপ-২৬ : জলবায়ু বিপর্যয় রোধ > গরিব দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

পরের সংবাদ

গুরুদাসপুরে শ্রমিকের হাটে আসেন নারীরাও : মজুরি বৈষম্য সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো নারী শ্রমিকের পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকও আসছেন গুরুদাসপুর শ্রমিকের হাটে। এ যেন শ্রমিকের মেলা। কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় উপকরণ কাস্তে, কোদাল, মাথালসহ বিভিন্ন প্রকার নিড়ানি হাতে নিয়ে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবকসহ অসংখ্য মানুষ আসছেন শ্রমিকের হাটে। তবে কোনো কেনাকাটা নয়, এসেছেন শ্রম বিক্রি করতে।
পুরুষের পাশাপাশি দিনবদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও। জীবনে হার না মানা এসব নারী শ্রমিক পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন দিন-রাত। বাসা-বাড়ি, মাঠ-ঘাট, এমনকি ফসলের জমিতেও। যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। এগিয়ে যাওয়ার সাহসী দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নারীরা কাজ করছেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
জানা গেছে, নাটোরের গুরুদাসপুরের নয়াবাজার, হাজীরহাট, ভিটাবাজার এবং বড়াইগ্রাম উপজেলার মানিকপুর, রওশনপুর, রাজ্জাকমোড় ও থানার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় বসছে এসব শ্রমিকের হাট।
ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত এই শ্রমিক ক্রয়-বিক্রয়ের আনুষ্ঠানিকতা। নতুন ধান কাটা, চারা রোপণ, রসুন লাগানোসহ নানাবিধ কাজ করার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন এসব শ্রমিক দু’পয়সা রোজগারের জন্য। হিন্দু, মুসলিম, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ শ্রমিক রয়েছেন এই দলে।
শ্রমিকের এই হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা নবনিতা ওরাঁও জানান, সিরাজগঞ্জের মেরিগাছা গ্রাম থেকে দশ টাকা ভাড়ায় ট্রাকে চলে এসেছেন গুরুদাসপুরে ‘শ্রম বাজারে’ শ্রম বিক্রি করতে। শ্রম বিক্রি করেছেন ঠিকই, কিন্তু পাননি ন্যায্য মজুরি। ধারাবাহিক মজুরি বৈষম্যের এ গল্প নবনিতা ওরাঁওয়ের একার নয়। দারিদ্র্যের কালো আগুনে ঝলসে যাওয়া হাজারো নারী শ্রমিকের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের প্রতিদিনের এ গল্প।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা মনিরসহ বেশ কয়েকজন জানান, তাদের এলাকা অপেক্ষাকৃত নিচু। সেখানে ইরি-বোরো আবাদ ছাড়া চলতি মৌসুমে কোনো কাজ নেই। তাই গুরুদাসপুরে রসুন রোপণ, ধান কাটাসহ সব কাজ করতে এসেছেন।
এই দলের সঙ্গে আসা গিতা রানীর মতে, তারা নিজের খেয়ে মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। অথচ অন্য সম্প্রদায়ের শ্রমিকরা কৃষকের খেয়ে একই মজুরি পেয়ে থাকেন। আবার পুরুষ শ্রমিকরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে মজুরি পান। অভাবের তাড়নায় মজুরি বৈষম্য মেনে নিয়েই প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করছেন তারা।
গতকাল রবিবার নয়াবাজারের শ্রমিকের হাটে গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম ছাড়াও তাড়াশ, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া, বগুড়া, শেরপুর উপজেলা এলাকার নারী শ্রমিকরা দল বেঁধে এখানে জমায়েত হন। এসব শ্রমিকের সবাই এসেছেন ট্রাক-বাসের ছাদে, নছিমন কিংবা অটোভ্যানে। সবার গায়েই রয়েছে শীতের পোশাক, হাতে কাজ করার উপকরণ। কৃষক তাদের চাহিদামতো শ্রমিক দরদাম মিটিয়ে সরাসরি ভ্যানযোগে নিয়ে যাচ্ছেন মাঠে।
আব্দুল মতিনসহ পাঁচজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান কাটা, বিনা হালে রসুন রোপণ, সেখানে নাড়া (ধানের খড়) বিছানোসহ জমি তৈরির কাজ করানো হয় এসব শ্রমিককে দিয়ে। তাছাড়া স্থানীয় শ্রমিকদের তুলনায় কম মজুরিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকদের পাওয়া যায় বলে এদের কদর বেশি।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, চলনবিলে বসবাসরত আদিবাসীদের ঘরে ঘরে অভাব চলছে। নিরুপায় হয়ে তারা কম মজুরিতে শ্রম বিক্রি করছেন। অনেকে গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম উচ্চ সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালান। ফলে কম মূল্যে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়