এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

৭৭তম জন্মদিন : আলী যাকেরকে স্মরণ করলেন নাট্যকর্মীরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নাট্যাঙ্গনের প্রবাদপুরুষ আলী যাকের। নাটকের চর্চা, প্রসার ও নাট্য আন্দোলনে শুরু থেকেই রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। রচনা, অভিনয় ও নির্দেশনা শিল্পের তিন মাধ্যমেই ঘটিয়েছিলেন নিজের সফল বহিঃপ্রকাশ। এ দেশের নাটকের সব অর্জন ও সফলতার অংশীদার আলী যাকের। স্মৃতির অন্তরালে চলে যাওয়ার পরও নাটকের মাধ্যমে আজও তিনি অমর হয়ে আছেন শিল্পের এই আঙিনায়। এ দেশের নাটক ও আলী যাকের একে অপরের পরিপূরক। সহকর্মী, সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীদের হৃদয়ে আলী যাকের এখনো চির ভাস্বর। যার কারণে ৭৭তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কীর্তিমান এই নাট্যযোদ্ধাকে স্মরণ করলেন সহকর্মীরা। গতকাল শনিবার ৬ নভেম্বর ছিল আলী যাকেরের ৭৭তম জন্মদিন। এক বছর ধরে তিনি স্মৃতির অন্তরালে। কিন্তু নাটকের মানুষরা ভোলেনি তাদের প্রিয় মানুষ ছটলুকে। নাট্যাঙ্গনের ভালোবাসার মানুষের ‘ছটলু ভাই’ ও দেশবাসীর প্রিয়মানুষ প্রয়াত আলী যাকেরের জন্মদিনকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উদযাপন করলেন নাট্যকর্মীরা।

দলের প্রয়াত সদস্যের জন্মদিন উপলক্ষে ‘স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’ শিরোনামে জন্মজয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ৭৭তম জন্মদিনের এই আয়োজন। চার পর্বের স্মৃতিচারণ, আবৃত্তি ও গান দিয়ে সাজানো ছিল বর্ণাঢ্য এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রথম পর্বের স্মৃতিচারণে আলী যাকেরের বর্ণিল জীবনের আলোকপাত করে স্মৃতিচারণ করেন নাট্যজন আবুল হায়াত, ফেরদৌসী মজুমদার ও আবদুস সেলিম। এরপর রবীন্দ্রনাথের গান ‘তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে’ গেয়ে শোনান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন আহকামউল্লাহ।
দ্বিতীয় পর্বের স্মৃতিচারণে অংশ নেন নাট্যজন আতাউর রহমান, প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পতœী আনোয়ারা সৈয়দ হক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এরপরে রবিঠাকুরের ‘তুমি নির্মল করো’ গানটি পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা গোপ ও ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা।
তৃতীয় পর্বে স্মৃতিচারণ করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, অভিনেত্রী শিমুল ইউসুফ ও নাট্যকার মাসুম রেজা। এ সময় বাবার স্মৃতিচারণ করেন আলী যাকেরের ছেলে ইরেশ যাকের।
এ পর্ব শেষে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ গেয়ে শোনান ফারহিন খান জয়িতা এবং আলী যাকের রচিত ‘ সেই অরুণোদয়ের থেকে’ পাঠ করেন ত্রপা মজুমদার। চতুর্থ ও শেষ পর্বের স্মৃতিচারণে অংশ নেন নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও তারিক আনাম খান। পরে স্বামীর স্মৃতিচারণ করেন আলী যাকের পতœী সারা যাকের। সবশেষে বাপ্পা মজুমদারের কণ্ঠে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটির মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রতনপুরে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের এই শক্তিমান অভিনেতা দেশের বিজ্ঞাপনশিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আলী যাকেরের মঞ্চাভিনয় শুরু। এরপর ওই বছরই আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ে যোগ দেন। নাগরিকের হয়ে প্রথম অভিনয় করেন ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, নাটকে। এরপর ১৯৭৩ সালে দর্শনীর বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রথম নাটক নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে অভিনেতা থেকে নির্দেশক বনে যান আলী যাকের।
আলী যাকের অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকগুলো হলো- কবর, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, বাকী ইতিহাস, বিদগ্ধ রমণী কুল, তৈল সংকট, এই নিষিদ্ধ পল্লীতে, দেওয়ান গাজীর কিস্?সা, সৎ মানুষের খোঁজে, অচলায়তন, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, ম্যাকবেথ, টেমপেস্ট, নূরলদীনের সারাজীবন, কবর দিয়ে দাও, গ্যালিলিও ইত্যাদি। তিনি চারটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেগুলো হলো- আগামী (১৯৮৬), নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৬), লালসালু (২০০১) ও রাবেয়া (২০০৮)। আলী যাকের অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- বহুব্রীহি (১৯৮৮), আজ রবিবার (১৯৯৯), একদিন হঠাৎ (১৯৮৬), নীতু তোমাকে ভালোবাসি, পাথর সময়, অচিনবৃক্ষ, আইসক্রিম, পান্ডুলিপি, গণি মিয়ার পাথর ইত্যাদি। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আলী যাকের ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি আরো পেয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, সেলিম আল দীন পদক, নরেন বিশ্বাস পদক ইত্যাদি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২০ সালের নভেম্বরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন আলী যাকের। এরপর ২৭ নভেম্বর সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়