এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

সড়কে দুর্ভোগ চরমে ধর্মঘট চলবে আজো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও সারাদেশজুড়ে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর কোনো বাসটার্মিনাল থেকে গতকাল শনিবারও দূরপাল্লার বা নগর গণপরিবহনের যানবাহন চলাচল করেনি। বিআরটিসির বাস চলাচল করলেও বাসে ওঠার জন্য মানুষকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এরই মধ্যে ধর্মঘটি শ্রমিকরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাস্তায় চলাচলরত বিআরটিসি বাসও আটকে দিয়েছে। সিএনজিচালিত বাসগুলোও রাস্তায় বের হয়নি।
বাস ধর্মঘটে কতটা ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ দিয়েছেন বগুড়ার আইনুল হক। শনিবার ছিল বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা। ছেলেকে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য বগুড়া থেকে ছেলেকে নিয়ে কয়েক’শ কিলোমিটার রাস্তায় মোটরসাইকেল চালিয়েই ঢাকায় এসেছেন। পরিবহন ধর্মঘট না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসতে পারতেন। বুয়েট পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে বসা ক্লান্ত আইনুল হক বলেন, এতদূর থেকে বাইকে আসা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু না এসে উপায় ছিল না। ভর্তি পরীক্ষা তো দিতে হবে। শুক্রবার ঢাকায় রওনা হওয়ার জন্য শাহ ফতেহ আলী বাসের অগ্রিম টিকেট কেটে রেখেছিলাম, কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তা কাজে লাগেনি। তিনি জানান, ছেলে আশিক ইকবাল এবার বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার ইচ্ছা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ালেখা করা। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হলে আমার এই কষ্ট আর থাকবে না।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আইনুল হকের মতো অনেক অভিভাবকই পথে পথে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। আরিফা বেগম তার ছেলে আশিক আলীকে নিয়ে ট্রেনে নাটোর থেকে ঢাকায় এসেছেন বলে জানান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটা ভর্তি পরীক্ষা আছে। কিভাবে পরীক্ষাগুলো শেষ করব সেই চিন্তায় আছেন।
এদের মতো ঢাকার বাসিন্দারাও সপ্তাহের প্রথম দিনে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। গণপরিবহন না থাকায় তারাও বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় যাত্রীদের পকেট ফাঁকা করছে সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও রিকশা চালকরা। বিআরটিসির বাস চলাচল করলেও তা বেশির ভাগ যাত্রীর নাগালের বাইরে ছিল। স্বল্পসংখ্যক বাস চলাচল করায় যারা উঠতে পেরেছেন তাদের যুদ্ধ করেই উঠতে হয়েছে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে গতকালও কোনো বাস চলাচল করেনি। বাস কাউন্টারের ভেতরে শ্রমিকরা অলস সময় কাটিয়েছে। ঢাকায় চলাচলরত সিএনজিচালিত বাসগুলো চলাচল না করায় যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন। গাবতলী বাসটার্মিনালের সামনে গতকালও বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস গাবতলী অতিক্রমের সময় অপেক্ষমাণ যাত্রীরা হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। বাস না পেয়ে অনেকেই পিকআপ ভ্যান ও মিনি ট্রাকে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছে। ঢাকা থেকে সাভারে গিয়ে এবং সাভার থেকে ঢাকায় এসে অফিসগামী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছে। মহিলাদেরও কষ্ট করে এসব অযান্ত্রিক যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়েছে। অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখা গেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস শ্রমিকদের। গণপরিবহন না থাকায় এবং ছোট পরিবহনে ভাড়া বেশি হওয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের পায়ে হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। ঢাকার পাশাপাশি, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, আশুলিয়া, ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পরিবহনে উঠতে না পেরে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলে। কেউ-বা ছুটেছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সকাল ৮টার আগেই সবাইকে কর্মস্থলে বুঝতে হবে। পোশাকশ্রমিকরা বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে না পারলে হাজিরা বোনাস প্রায় ৫০০ টাকা কাটা যাবে। একদিকে ভোগান্তি, অন্যদিকে হাজিরা বোনাস কাটাসহ অফিসের লোকদের মন্দ কথা শুনতে হবে।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বছর শেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাওয়া লোকজন আটকা পড়েছেন। বছরের এই সময় কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন জেলায় লোকজন বেড়াতে গিয়েছেন। হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় এসব ভ্রমণপিপাসু লোকজন এখন বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে টাইগারপাস মোড়ে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে এবং গাড়ি ও সিএনজি চলাচলে বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর সব ধরনের গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তবে দুপুরের দিকে চট্টগ্রামের পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আজ রবিবার চট্টগ্রাম শহরে আর পরিবহন ধর্মঘট থাকবে না।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে সরকার হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়