এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল : ডাক্তার-রিপ্রেজেন্টেটিভের মধুর সম্পর্কে রোগীদের ভোগান্তি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বককর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু হলেই চিকিৎসকদের কক্ষে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা (রিপ্রেজেন্টেটিভ) অবস্থান নিচ্ছেন। এরপর রোগীর টিকেট হাতে নিয়ে রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়েই সিরিয়াল ডাকা হচ্ছে। চিকিৎসকের কক্ষে বসে সহজেই নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখিয়ে নিচ্ছেন তারা। হাসপাতাল থেকে যেসব ফ্রি পাওয়া যায় সেসব না লিখে লেখা হচ্ছে রিপ্রেজেন্টেটিভদের কোম্পানির ওষুধ, যেগুলো হাসপাতালে সরবরাহ নেই। এমন চিত্র ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের।
চিকিৎসক-রিপ্রেজেন্টেটিভদের এই মধুর সম্পর্কে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে আসা সেবাপ্রত্যাশী রোগীরা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাসপাতাল চত্বরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) এবং সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় জমতে থাকে। সকাল ১০টা থেকে বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখা শুরু করলেই চিকিৎসকের কক্ষগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে ঢুকে পড়েন রিপ্রেজেন্টেটিভরা। এরপর চিকিৎসকদের সহযোগিতায় রোগীদের হাতে থাকা টিকেট সংগ্রহ করে নিজেরাই একের পর এক রোগীর সিরিয়াল ডাকেন। চিকিৎসকরা রোগী দেখার পর ব্যবস্থাপত্রে নিজ কোম্পানির ওষুধ লেখিয়ে নেন রিপ্রেজেন্টেটিভরা। চিকিৎসকের কক্ষে বসেই তারা রোগীদের সেই ব্যবস্থাপত্রের ছবি সংগ্রহ করেন। এমন কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখা হয় যার বেশিরভাগই হাসপাতালে সরবরাহ নেই। যার মূল্য বাইরের ফার্মেসিগুলোতে অনেক বেশি। রোগীদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে দীর্ঘ সময় রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে গোপন আলাপচারিতা চালিয়ে যান চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের এমন কর্মকাণ্ডে শিশু থেকে বৃদ্ধ নানা বয়সের সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালের দন্ত বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষের ভেতর থেকে রোগীদের সিরিয়াল ডাকছিলেন এক রিপ্রেজেন্টেটিভ। তিনি বলেন, রোগীদের অনেক চাপ। তাই ডাক্তার আমাকে সিরিয়াল ডেকে রোগীদের ভেতরে আনতে সহযোগিতা করতে বলেছেন। মাঝে মধ্যে রোগীদের প্রেসক্রিপশন ভেতরে থেকে হাতে নিয়ে দেখছি। আমার কোম্পানির ওষুধ স্যার লিখলেন কি না। এটা যেহেতু আমার পেশা তাই এতে দোষের কিছু নেই।
দন্ত বিভাগের ডেন্টাল সার্জন ডা. ওমর আলী সরদার বলেন, ওই প্রতিনিধি নিজে থেকেই এসেছিলেন এবং আমার কক্ষে বসে আমাকে বিরক্ত করছিলেন। আমি তাকে রোগীর টিকেট নিয়ে সিরিয়াল ডাকতে বলিনি। তাদের অনেকেই রোগী দেখার সময়েই আমাদের কক্ষে অনুমতি না নিয়েই ঢুকে পড়েন।
আয়ুর্বেদিক বিভাগে চিকিৎসকের কক্ষে একটি চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নিজের কোম্পানির ওষুধ লেখাচ্ছিলেন এক রিপ্রেজেন্টেটিভ। ভেতরে বসে চিকিৎসকের সহযোগিতায় প্রতিটা রোগীর ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে দেখছিলেন। রোগী দেখার সময় ভেতরে কেন তার অবস্থান এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনেকক্ষণ আগেই এখানে এসেছি। স্যার রোগী দেখছেন আমি শুধু বসে আছি। আমি নিজেও আজকে রোগী হিসেবেই এসেছি। তিনি যে রোগী হিসেবে এসেছেন তার প্রমাণ হিসেবে টিকেট দেখতে চাইলে তার মানিব্যাগে থাকা একাধিক ব্যবস্থাপত্রের মধ্যে থেকে ৮ মাস আগের একটি পুরনো ব্যবস্থাপত্র বের করে দেখান তিনি। বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রাম থেকে আয়ুর্বেদিক বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন রাসেল হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর আমার সিরিয়াল পেয়েছি। চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকে দেখি ওষুধ কোম্পানির লোক আগে থেকেই ভেতরে বসে আছে। সেখানে ডাক্তার তার কোম্পানির ওষুধ লিখে দিলো।
আয়ুর্বেদিক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. টি এম সফিউল ইসলাম বলেন, ওই রিপ্রেজেন্টেটিভ তার ব্যক্তিগত সমস্যায় রোগী হিসেবেই আজকে এসেছিলেন। রোগীর চাপ থাকায় তাকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখেছিলাম। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু আনসারী বলেন, হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তাদের একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও রোগী দেখার সময় বহির্বিভাগে এসে তারা ভিড় জমাচ্ছেন। সমস্যাটি নিরসনে প্রশাসনের সহযোগিতায় শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইবনে ইমাম বলেন, চিকিৎসক-রিপ্রেজেন্টেটিভ সম্পর্ক কখনোই রোগী দেখার সময় হতে পারে না। কোন চিকিৎসক যদি রিপ্রেজেন্টেটিভদের কক্ষে বসিয়ে রেখে তাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখান এবং এতে যদি রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। কোনো ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও একই কাজের অন্য কোম্পানির ওষুধ দরিদ্র রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে লেখার নিয়ম নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়