মনসুর আলী, ঠাকুরগাঁও থেকে : ১৯৮৭ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে এটি ১৮ শয্যার শিশু শয্যাসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। আর ২০২০ সালের মার্চে ১০০ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নতুন ১৫০ শয্যার ৭ তলা ভবন উদ্বোধন করে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এবং ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডটিকে উন্নীত করা হয় ৪৫ শয্যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছে ১৮০-২০০ জন শিশু রোগী। দিনে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা এমন আবহাওয়ায় বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটে পড়ে অভিভাবকরা অধিকাংশ শিশু রোগীকে নিয়ে অবস্থান করছে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দা কিংবা মেঝেতে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রোগীর স্বজনরা ছুটছেন সেবা নিতে। জেলার পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুরের কিছু অংশের রোগীরা সেবা নিতে আসায় এ পরিস্থিতি। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে সন্তানের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবকরা জানান, রংপুর বা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল কাছে হওয়ায় আমাদের এখানে ছুটে আসা। চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় শয্যা সংকটে পড়েও মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে আমাদের। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে পা ফেলানোর জায়গা নেই। হাসপাতালটিতে শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি লোকবল বাড়ানোও জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে সেবা নিতে আসা রোগীরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহজাহান নেওয়াজ রোগীর চাপের কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও জনবল দেয়া হয়নি। ফলে অতিরিক্ত চাপে পড়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। সেবার মান বাড়াতে হলে জনবল প্রয়োজন। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের বাইরে কম বের হতে দিতে হবে। শরীর ঘেমে গেলে পরনের কাপড় পরিবর্তন করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও রোগমুক্ত থাকবে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান জুয়েল জানান, শীতের শুরুতে এবং গরমের রশুরুতে এ দুই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের এখানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে এখানে আসছেন। এ কারণে এই হাসপাতালে সবসময় শিশু রোগীর চাপ থেকেই যায়। আমাদের এখানে প্রতিদিনই অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিশু ওয়ার্ডে প্রতি শিফ্টে ৩ জন করে নার্স প্রতিনিয়ত অসুস্থ শিশুদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্তদের গাদাগাদি করেই চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে আমাদের।