কাগজ ডেস্ক : সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ আবুধাবিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। এই ম্যাচ জিতলে কিউইরা নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যাবে চলতি আসরের সেমিফাইনালে। অন্যদিকে হারলে শেষ চারের ভাগ্য খুলে যাবে ভারতের। সম্ভাবনা আছে আফগানিস্তানেরও।
সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-২ এ ইতোমধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে পাকিস্তান। তবে দ্বিতীয় দল হিসেবে এখনো জোর সম্ভাবনা রয়েছে গেছে নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও ভারতের। ৪ ম্যাচের তিন ম্যাচ জিতে কিউইদের পয়েন্ট ৬। অন্যদিকে ৪ ম্যাচের ২টিতে জয় নিয়ে সমান ৪ পয়েন্ট ভারত ও আফগানিস্তানের। আজ আবুধাবীর শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচটি নির্ধারণ করে দেবে কার হাতে উঠছে শেষ চারের টিকেট। আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা সরাসরি পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে। কারণ সেক্ষেত্রে ভারত নিজেদের শেষ ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬, আর নিউজিল্যান্ডের ৮। অন্যদিকে আফগানিস্তান হারলে তাদের পয়েন্ট থাকবে ৪। পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থেকে কেন উইলিয়ামসনরা শেষ চারের টিকেট পেয়ে যাবে। কিন্তু তারা হারলে সুযোগ পেয়ে যাবে ভারত ও আফগানিস্তান। তবে সেক্ষেত্রে আফগানদের বড় ব্যবধানে জয় পেতে হবে কিউইদের বিপক্ষে। ব্ল্যাক ক্যাপসরা হারলে নামিবিয়া হারিয়ে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়েও শেষ চারে পৌঁছাতে পারবে, নিট রানরেটে এগিয়ে থাকার কারণে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পরস্পরের মুখোমুখি হয়নি আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। শুধু বিশ্বকাপ নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও হয়নি তাদের দেখা। ম্যাচের পরিসংখ্যানে হয়তো কোনো দলকে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট পরাশক্তির দেশগুলোর মধ্যে একটি নিউজিল্যান্ড। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়েও তাদের অবস্থান সেরা চারে। আর আফগানিস্তান অবস্থান করছে সাতে। অভিজ্ঞতায়ও নিউজিল্যান্ড বেশ এগিয়ে আফগানদের তুলনায়। কিউইরাই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত তারা ১৫৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৭৮ ম্যাচে জয় ও ৭২ ম্যাচে আছে হার। আর বাকি ৪ ম্যাচ গড়ায়নি মাঠে। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা হট ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে অন্যতম। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারলেও ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
ওই হারই ভারতের জন্য এখন সেমিফাইনালের রাস্তায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিউইরা এরপর স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষেও জয় তুলে নেয়। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানদের জয় পাওয়াটা রীতিমতো অসাধ্য ব্যাপার। তবে স্বল্প বলের ক্রিকেটে জয় পেতে পারে যে কোনো দলই। তাই এই ম্যাচে আফগানদেরও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তি আফগানিস্তান। বড় বড় দলগুলো হকছকিয়ে যায় আফগাদের বিরুদ্ধে। সুপার টুয়েলভে স্কটল্যান্ডকে ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পর পাকিস্তানকেও প্রায় রুখে দিয়েছিল রশিদ, মুজিবরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারলেও, তৃতীয় ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে তুলে নেয় ৬২ রানের বড় জয়। পরের ম্যাচে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ হয়ে হারে ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে। তবে তাদের এখনো সেমির স্বপ্ন বেঁচে আছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারাতে পারলে ভারত ও কিউইদের টপকে শেষ চারে পৌঁছে যাবে তারা। তাদের সে সামর্থ্যও আছে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে আধিপত্য করে চলেছে আফগানিস্তান। ২০১০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত ৮৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে রশিদরা হেরেছে মাত্র ২৮ ম্যাচে, বাকি ৬০ ম্যাচের সবকটিতে জয় আছে তাদের। ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাও যেখানে বাছাইপর্বের বাধায় পড়ে, সেখানে নিজেদের তৃতীয় আসরে এসেই বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলছে আফগানিস্তান। র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে তাদের অবস্থান সাতে। র্যাঙ্কিং পরিসংখ্যান, পারফরম্যান্স, অভিজ্ঞতা সব দিক দিয়ে অবশ্য চেয়ে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। তবে স্বল্প বলের খেলায় যে কেউই চমক দেখিয়ে জয় তুলে নিতে পারে। তাই আফগানদের ছোট করে দেখার সুযোগ নেই কিউইদের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের প্রথম যাত্রা ২০১৪ বিশ্বকাপে। সে যাত্রায় দলটি পেরুতে পারেনি বাছাইপর্বের বাধা। তিন ম্যাচের মধ্যে ২ ম্যাচে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয় তারা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের কে হারায় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য হংকংয়ের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় তারা। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে ৯ রানে হেরে সেবার বিশ্বকাপ যাত্রা থেমে যায় মোহাম্মদ নবীদের। পরের বিশ্বকাপেই আফগানরা যেন ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বদলে গেল। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা বাছাইপর্বে একে একে হারায় স্কটল্যান্ড, হংকং ও জিম্বাবুয়েকে। তবে সেবার মূলপর্বে নিজেদের খুব একটা মেলে ধরতে পারেনি তালেবানশাসিত দেশটি। একে একে হেরে বসে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে তারা যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আধিপত্য করবে সে বার্তা দিয়ে গিয়েছিল ষষ্ঠ বিশ্বকাপ আসরে নিজেদের শেষ ম্যাচে। সে আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গ্রুপপর্বে আফগানরা হারায় ৬ রানে।
তাছাড়া রশিদ, মুজিব, নবীদের বোলিংয়ে দিশাহারা হতে পারে ব্ল্যাক ক্যাপসদের ব্যাটিং লাইন আপ। আর হযরতউল্লাহ যাযাই, মোহাম্মদ শেহজাদের ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং চির ধরিয়ে দিতে পারে কিউইদের বোলিং শিবিরে।
এদিকে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারলেও, তারা আসরের অন্যতম হট ফেবারিট ভারতকে হারিয়েছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারলেও চলতি আসরে ট্রফির দাবিদার কেন উইলিয়ামসনরা। পরপর দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে তারা। যদিও ভাগ্য সহায়ক না হওয়ায় ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি। এবার তাদের অন্যতম লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলা। আফগান ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দিতে তাদের রয়েছে শক্তিশালী বোলিং বিভাগ। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, জেমস নিশামের পেস বোলিং অ্যাটাকের সঙ্গে মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোদিদের ঘূর্ণির মিশেলে উড়ে যেতে পারে যে কোনো দলের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল তাণ্ডব চালিয়ে একাই নিতে পারেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়া কেন উইলিয়ামসন, ডেরেল মিচেল, নিশাম, ডেভন কনওয়ে, গেøন ফিলিপস, টিম সেইফার্টরা ব্যাটিংয়ে জ¦লে উঠলে ম্যাচ থাকবে তাদের নিয়ন্ত্রণেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।