এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

একদিনে দুই কিংবদন্তির বিদায়

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০১২ ও ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৪ সালের সেমিফাইনালিস্টরা এবার বিদায় নিচ্ছে আগেভাগে। তাই দলও ঢেলে সাজানোর দাবি উঠেছে। তাতেই যেন সাড়া দিয়েছিলেন ব্রাভো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গতকাল সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায়ের ঘোষণা দেন তিনি। গতকাল ম্যাচ শুরুর আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের টুইটার থেকে জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে দল মাঠে ঢোকার সময় সবার আগে থাকবেন ব্রাভো ও গেইল। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হওয়ায় ব্রাভোর বিষয়টি সহজেই বোধগম্য। কিন্তু গেইল কেন থাকলেন তার সঙ্গে- এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে একটু দেরিতে।
শুধু এখানেই শেষ নয়, গতকাল আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় হেলমেট খুলে সারা মাঠের দর্শকদের উদ্দেশ্যে ব্যাট উঁচিয়ে অভিবাদনের জবাব দেন গেইল। অথচ তিনি করেছেন শুধু ১৫ রান। কোনো মাইলফলক বা সেঞ্চুরি হাকালে ব্যাট তোলার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক কিন্তু মাত্র ১৫ রান করেই গেইল কেন ব্যাট দেখালেন সবার উদ্দেশ্যে- ম্যাচ চলাকালীন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে গেইল যখন সীমানা অতিক্রম করে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিলেন, তখন সামনে এগিয়ে এসে অভিনন্দন জানান ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, জেসন হোল্ডাররা।
এর আগে ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস ইনিংস সূচনা করতে মাঠে নামার সময়ও সীমানা দড়ির সামনে দাঁড়িয়ে করতালি দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সবাই। সব ঘটনাক্রম মিলিয়ে সবার মনেই জেগেছে প্রশ্ন, তাহলে কি ক্যারিবীয়দের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলছেন গেইল।
নিজেদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ রাঙাতে পারেননি ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো। গতকাল টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এভিন লুইসকে সঙ্গী করে ইনিংসের উদ্বোধন করতে নামেন গেইল। দুই ছক্কার মারে ৯ বলে ১৫ রান করেন তিনি। আউট হয়েছেন প্যাট কামিনসের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে। অন্য দিকে ডোয়াইন ব্রাভো ১২ বলে ১০ রান করে হ্যাজলউডের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজ করে ফিরেন।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিবর্ণ পারফরম্যান্স ছিল ডোয়াইন ব্রাভোর। আর তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন অবসরের। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, সময় হয়ে গেছে (অবসরের)। খুব ভালো একটি ক্যারিয়ার কাটিয়েছি। ১৮ বছর ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করার পথে কিছু উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু যখন ওই সময়ের দিকে ফিরে তাকাই, দীর্ঘদিন এই অঞ্চল এবং ক্যারিবিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।’
ওয়ানডেতে ব্রাভোর জাতীয় দলে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে বছর অবশ্য টেস্ট দলেও জায়গা করে নেন তিনি। সাদা পোশাকে ৪০ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরিতে তার রান ২ হাজার ২০০ রান। ডানহাতি পেস বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮৬টি। ২০০৪ আসরের শিরোপাজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য ছিলেন অভিষিক্ত এ অলরাউন্ডার।
ওয়ানডেতে ব্রাভো সর্বশেষে খেলেন ২০১৪ সালে। ১৬৪ ম্যাচ খেলে এই সংস্করণে দুই সেঞ্চুরিতে ২ হাজার ৯৬৮ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১৯৯টি উইকেট।
টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর দীর্ঘ সময় ধরে দলের বাইরে ছিলেন তিনি।
পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিদায় বলে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। পরের বছরের নভেম্বরে জানান টি-টোয়েন্টি দলে ফিরতে চাওয়ার কথা। তার সেই নতুন অধ্যায় শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে।
এবারের বিশ্বকাপে এই অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে চার ম্যাচের একটিতেও যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। তিন ইনিংসে বোলিং করে উইকেট পেয়েছেন কেবল দুটি।
এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৯০ ম্যাচ খেলেছেন ব্রাভো। ৪টি অর্ধশতকের পাশাপাশি নামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন এক হাজার ২৫৫ রান। উইকেট নিয়েছেন ৭৮টি।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়সি ক্রিকেটার ছিলেন ক্রিস গেইল। ৪২ বছর বয়সি এ ক্রিকেটার এবার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
পাঁচ ম্যাচ তার সংগ্রহ ১৩, ১২, ৪, ১, ১৫। গতকাল ১৫ রান করে বোল্ড হওয়ার পরই গেইলের হতাশার ভাব ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবেই। তবে আউট হয়ে ফেরার পথে হাসি দেখা গেছে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের মুখে।
২০০৬ সালে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল গেইলের।
শেষ পর্যন্ত এটিই শেষ ইনিংস হয়ে থাকলে গেইলের ক্যারিয়ারটা দাঁড়াবে এমন ৭৯ ম্যাচ, ৭৫ ইনিংস, ১৮৯৯ রান, ২৭.৯২ গড়, ১৩৭.৫০ স্ট্রাইক রেট, ১৪ ফিফটি, ২ সেঞ্চুরি, ১১৭ সর্বোচ্চ। ক্যারিয়ারে গেইল মেরেছেন ১৫৮টি চারের সঙ্গে ১২৪টি ছয়। ৩০১ ওয়ানডে ম্যাচে তার সংগ্রহ ১০ হাজার ৪৮০ রান। ১০৩ টেস্টে মাঠে নেমে করেছেন ৭ হাজার ২১৪ রান।
২০১২ ও ২০১৬ সালে শিরোপাজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য ছিলেন গেইল। ২০১২ সালে কলম্বোতে ফাইনাল জয়ের পর গেইলের ‘গ্যাংনাম স্টাইলের’ নাচ যেন ধরেছিল টি- টোয়েন্টিতে নতুন ক্যারিবিয়ান দাপটের সুর। চার বছর পর কলকাতায় আবারও উল্লাসে মেতেছিলেন তারা। ক্রিকেট অনুরাগীরা ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল এবং ডোয়াইন ব্রাভোকে তাদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণে মনে রাখবে অনেক দিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়