দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

শুঁটকি উৎপাদনকারীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) থেকে : তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী নিদ্রা ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়া, আশার চর, জয়াল ভাংগায় শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। এই মৌসুমে এখানে প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি উৎপাদন হয়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে সমুদ্র থেকে আহরণ করা হবে লাখ লাখ টন মৎস্য। নিদ্রা ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়াসহ আরো অনেক স্থানে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। শুঁটকির প্রধান উৎস হলো সমুদ্র থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরণ করে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা।
আহরিত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রইস্যা, পোয়া, কুড়াল, ফাত্রা, মাইট্যা, রূপচাঁদা, ইলিশ, লাক্ষা, চিংড়ি, রাঙ্গাচকি, হাঙ্গর, রিটা, ফুটকা, সামুদ্রিক ঝিনুক, কাঁকড়া, লবস্টার, সমুদ্রিক শসা, হাঙ্গরের বাচ্চা ও আরো অনেক প্রজাতির মাছ। সারা বছর মাছ আহরণ করা হলেও মূল উৎপাদনের মৌসুম হলো নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। এসব মৎস্য গভীর সমুদ্র থেকে আহরণ করে কূলে এনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা হয়।
বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরিত করা হলেও মূলত শুঁটকি উৎপাদনের জন্য ৮০ শতাংশ আয় আসে উল্লিখিত মাছ থেকে। এগুলো আবার খুচরা বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। শুঁটকি শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে হাজার হাজার হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠী। কিন্তু এ শিল্প থেকে এ মৌসুমে কোটি কোটি টাকা আয়সহ বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়। শুঁটকি উৎপাদন বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক, অন্যটি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো সনাতনী গতানুগতিক পদ্ধতি। অন্যটি হচ্ছে আধুনিক ও বৈদ্যুতিক তাপের দ্বারা শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রচলিত উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন অত্যন্ত মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
এ শিল্প আবার বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। যেমন প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদনকারীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতি অনেকে জানেও না এবং এ ব্যাপারে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকাও দেখা যাচ্ছে না। এ শিল্প মাধ্যমে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ছাড়াও সরকারসহ বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা রয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- খোলা মাঠে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ধূলাবালিতে শুঁটকি উৎপাদন করা। শুঁটকি সংরক্ষণে মাছের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রণ। এমনকি বিষ মিশ্রিত করে শুঁটকি সংরক্ষণ করা। পচা (খাবার অনুপযোগী) মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা। এলাকাজুড়ে মশা-মাছির উৎপাতও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদনাকারী কোম্পানিরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে হলো পুঁজির অভাব, দাদনদারের শোষণ, সরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাব, মাছের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আর্থিক দৈন্যতাসহ মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব, অন্যদিকে সরকারের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোনো সরকারি নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক ও মানসম্মত পদ্ধতি কোনো উৎপাদকরা গ্রহণ করছে না। তাই উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা বিভিন্ন ধরনের।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো শুঁটকি উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আবার মালিকও লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না। এসব মিলিয়ে মৎস্য সম্পদ মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে। এখানেও উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা আছে। যেমন- অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণ, ডিমওয়ালা মাছ ধরা, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়া।
কয়েকজন মাঝি-মাল্লার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূল হতে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে শত শত ভারত ও থাইল্যান্ডের ট্রলিং জাহাজ লাক্ষা, কুড়াল, ইলিশ, মাইট্যা, রাঙ্গচকি, চিংড়িসহ অনেক মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি ট্রলিং জাহাজ বড় বড় মাছগুলো হিমায়িত করে ছোট মাছ এবং নষ্টগুলো সাগরে ফেলে দেয়। ফলে পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি মাছের সংকটও দেখা দেয়। শুঁটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সঙ্গে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী মনে করেন, এ মৌসুম তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা এ শিল্পে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে জড়িত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়