দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই : কালোবাজারে ৩ গুণ দামে আহসান মঞ্জিলের টিকেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ, জবি : কলেজ পড়ুয়া মিতু ইয়াসমিন। বরিশাল থেকে বড় বোনের সঙ্গে ঢাকায় আসে পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখতে। কিন্তু জাদুঘরের প্রবেশ পথে বাধে বিপত্তি। টিকেট অনলাইনে। কিন্তু সব শেষ। হতাশ হয়ে চলে যাওয়ার সময় একজন তাদের ডেকে টিকেট আছে বলে জানায়। তবে ২০ টাকার টিকেটের মূল্য ৬০ টাকা। একটু পরে সেটাও পাওয়া যাবে না। জাদুঘর দেখার আর অন্য কোনো উপায় না থাকায় তাদের কিনতে হয় তিনগুণ দামে। তবে চেষ্টা করে কালোবাজারির এই টিকেটও পাচ্ছেন না সবাই!
জানা যায়, দেশে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরসহ আওতাধীন জাদুঘর রয়েছে মোট ৮টি। এর মধ্যে শুধু জাতীয় জাদুঘর ও আহসান মঞ্জিলে অনলাইন টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। করোনার আগে আহসান মঞ্জিলে আড়াই থেকে তিন হাজারের বেশি দর্শনার্থী আসলেও এখন প্রতিদিনের জন্য অনলাইন টিকেট মাত্র ৫০০টি। এ জন্য প্রতিদিন সহস্রাধিক দর্শনার্থী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া অনেকের মোবাইল ফোন না থাকায় বা ই-মেইল, রেজিস্ট্রেশন, অনলাইন পে সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সাধারণ দর্শনার্থীরা টিকেট কাটতে পারছেন না। এ সুযোগ নিচ্ছে কালোবাজারি চক্র। টিকেট বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে। তবে অনেকে অতিরিক্ত দামে কিনতে না পেরে কিংবা অনেকে অতিরিক্ত দাম সত্ত্বেও কালোবাজারির টিকেট না পেয়ে একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করে চলে যাচ্ছেন।
পুরান ঢাকার দিদারুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, পুরান ঢাকায় কোনো খোলামেলা জায়গা নেই যে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। তাই ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিলে আসি। কিন্তু সকাল ১০টায় অনলাইনে টিকেট ছাড়ার আধাঘণ্টা পর চেষ্টা করে একটি টিকেটও পেলাম না। সব শেষ হয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে। তবুও আসলাম ঢোকা যায় কিনা। কিন্তু কালোবাজারিতে টিকেট ৭০ টাকা বলে। এটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল নাকি?
এদিকে প্রায় প্রতিদিন আহসান মঞ্জিলে ৪-৫ জন করে বিদেশি দর্শনার্থী আসেন বলে জাদুঘর সূত্রে জানা যায়। কিন্তু টিকেট ছাড়ার পর সব কালোবাজারিতে যাওয়ায় তারা টিকেট কাটতে পারছেন না। তাই এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে এসেও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। আহসান মঞ্জিলে পোল্যান্ড থেকে আসা ইলিম্পো জর্জি ও তার বন্ধু ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ খুবই সুন্দর দেশ। পুরান ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য দেখে আমরা রোমাঞ্ছিত। আহসান মঞ্জিল সম্পর্কে আমরা জানতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো টিকেট নেই। অনুসন্ধানে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা টিকেট না পেলেও আহসান মঞ্জিলের পাশ দিয়ে বেশ কিছু কম্পিউটারের দোকান ও ব্যক্তিদের কাছে মিলছে টিকেট। জনপ্রতি পাঁচটি টিকেট কাটার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিদিন সকালে কম্পিউটার দোকানগুলো বিশেষ পন্থায় ৫০-৬০টি করে টিকেট কেটে রাখে।
অনলাইনে ২০ টাকা করে কেনা এই টিকেট আরেকটি মাধ্যমে ৩০ টাকা করে বিক্রি করে তারা। এরপর ৩০ টাকা কিনে মাধ্যমটি গোপনে দর্শনার্থীদের ডেকে ৫০-৭০ টাকা করে বিক্রি করে। তবে কোনো দর্শনার্থী সরাসরি দোকানগুলোতে গেলে তিনগুণ দামই রাখা হয়। বিদেশি টিকেট ৩০০ (সার্কভুক্ত দেশ) ও ৫০০ টাকা (সার্কভুক্তের বাইরের দেশ) হওয়ায় বিক্রির ঝুঁকি ও অতিরিক্ত দামে বিদেশিরা কিনতে চায় না বলে তাদেরটা কাটা হয় না বলে জানান টিকেট বিক্রি করা একজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই টিকেট বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন সকালে পুরান ঢাকার স্থানীয় লোকজনের জন্য নির্দিষ্ট টিকেট রাখতে হয়। কেউ বিক্রির জন্য কিনে। আবার একশ্রেণি আছে যারা প্রতিদিন জাদুঘরের মাঠে নিরিবিলি মাদক সেবনের জন্য নিয়মিত টিকেট কিনে। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা এগুলোর ক্রেতা। পরে সরেজমিন জাদুঘর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পাশে নীরব জায়গাগুলোতে বসা গোল আড্ডায় ধূমপান করছেন অনেকে।
সার্বিক বিষয়ে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত উপকিপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, টিকেটের বিষয়টি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দেখেন। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করি। করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো বলে টিকেট বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। খুব শিগগরিই বাড়বে। অনেকে ফিরে যাচ্ছে বলে আমরাও শুনেছি। তবে বিদেশি কেউ যদি আমাকে কল করে তাদের জন্য প্রবেশের ব্যবস্থা করব।
আহসান মঞ্জিল সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত দাবি করে তিনি বলেন, পুরান ঢাকার মতো জনবহুল এলাকার মানুষজন এখানে খোলা পরিবেশে সময় কাটাতে ও মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে আসে। আর দূর-দূরান্ত থেকে যারা আসে তারা প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাদ নিতে আসে।
উল্লেখ্য, বুড়িগঙ্গার কিনারে লঞ্চের ডাক ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে গড়ে উঠা আহসান মঞ্জিল পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদার কাচারি। নওয়াব আবদুল গনি ১৮৭২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে তার পুত্র খাজা আহসান উল্লাহর নামে নামকরণ করেন। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়