দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

পরিবহন ধর্মঘট : পথে পথে দুর্ভোগ, রিকশা-সিএনজি ভরসা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে গতকাল সারাদেশজুড়েই ছিল পথে পথে ভোগান্তি। গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও রিকশার দাপট ছিল রাজধানীজুড়ে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৫/৬ গুণ বেশি ভাড়া দিয়েই লোকজনকে জরুরি কাজে যেতে হয়েছে। রাজধানীর কোনো বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার ও শহর পরিবহনের গণপরিবহন চলাচল করেনি। তারপরও দিনভর বাস টার্মিনালগুলোতে দূরপাল্লার যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। প্রয়োজনের তাগিদে এসব যাত্রীকে বিকল্প উপায়ে বেশি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে। রাজধানীতে বিআরটিসির বাস চলাচল করলেও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
সড়কে গণপরিবহন না থাকার সুযোগে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য দেখা গেছে। সুযোগ পেয়ে সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল ও রিকশাচালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে। এ অবস্থায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। বিআরটিসির বাসগুলো চললেও তাতেই মানুষের ভোগান্তি কমেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ সাবিনা খাতুন কুষ্টিয়ায় যাওয়ার একটি টিকেটের জন্য গতকাল শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে ছুটছিলেন। সাবিনা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে কুষ্টিয়ায় তার শাশুড়ি মারা যান। কিন্তু সকালে পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে গাবতলী এসে পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়েন। তিনি বলেন, আমি শাশুড়ির মৃত্যুতেও কুষ্টিয়া যেতে পারছি না। আমার মতো অনেক যাত্রী বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ভোগান্তি কমাতে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সকাল থেকেই সড়কে যাত্রীদের ভিড় ছিল। নানা প্রয়োজনের তাগিদে লোকজন রাস্তায় বের হন। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় তারা বিপাকে পড়েন। এ অবস্থায় যাত্রীদের পকেট কাটার সুযোগ পান সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল ও কার এবং রিকশাচালকরা। সিএনজিচালকরা ২০০ টাকার ভাড়া চান ৫০০ টাকা। রিকশাচালকরা ২৫ টাকার ভাড়া চান ১০০ টাকা। ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে খিলগাঁও পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে সিএনজি ভাড়া থাকে ১৮০-২০০ টাকা। গতকাল এই ভাড়া চাওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা। মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া চাওয়া হয় ৪০০ টাকা। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট ও কাওরান বাজার যাওয়ার জন্য সিএনজিতে ২০০-২৫০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরা পর্যন্ত ৬০০ টাকার নিচে কোনো সিএনজি চালক যেতে চাননি বলে জানিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।
একই অবস্থা দেখা গেছে রিকশার ভাড়ায়। ২৫ টাকার ভাড়া চাওয়া হয় ১০০ টাকা। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত দেড়শ টাকার নিচে কোনো রিকশাচালক যেতে চায়নি। যেসব যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য রিকশা ব্যবহার করতেন গতকাল তাদেরই পায়ে হেঁটে রওনা হতে দেখা গেছে।
অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল এবং গাড়িগুলো বেপরোয়া হারে ভাড়া আদায় করে। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ও আরিচা পর্যন্ত গণপরিবহনের ভাড়া ১২০-১৫০ টাকা। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এখানে শত শত যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল এবং ভাড়ার গাড়িতে যান। গাড়িতে জনপ্রতি ৬০০ টাকা নেয়া হয়। অন্যদিকে মোটরসাইকেলগুলো ২ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। প্রতি জন যাত্রীর কাছ থেকে নেয়া হয় ৮০০-১০০০ টাকা।
যাদের বেশি প্রয়োজন তারা চালকদের চাহিদামতো ভাড়া দিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। আবার অনেকেই ভাড়া নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় রিকশা ও অটোরিকশা মেলাতে পারিনি। সোনিয়া আক্তার নামে একজন নারী জানান, বাস না থাকায় অটোরিকশা চালকদের চাহিদা বেড়ে গেছে। তারা অনেক বেশি ভাড়া চান। ভাড়া পছন্দ না হলে তারা যায়নি। রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, বাংলামটর, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি এলাকার রাস্তায় একই অবস্থা দেখা যায়। গণপরিবহন না থাকায় আব্দুল্লাহপুর, হাউস বিল্ডিং, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড, খিলক্ষেত, কুড়িল, বনানী, মহাখালীতে যাত্রীদের ভোগান্তি দেখা গেছে। গতকাল ভর্তি পরীক্ষাসহ ২৬টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা ছিল। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশী সময়মতো পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেনি।
এদিকে সড়কে গণপরিবহন চলাচল না করলেও সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বাস চলাচল করেছে। কিন্তু বিআরটিসি যে পরিমাণ বাস চলাচল করে তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি।
গাবতলীর পর মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকেও কোনো বাস চলাচল করেনি। সব বাস টার্মিনালের ভিতর এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে কোনো ট্রাক গতকাল ছেড়ে যায়নি। ভোরের দিকে বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকগুলো টার্মিনালে এসে স্থান নেয়। কাউন্টারগুলোর সামনে ও সড়কে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকে। বাস কাউন্টারের ভেতরে বাসের শ্রমিকরা অলস সময় কাটান। কাউন্টার খোলা থাকলেও কোনো টিকেট বিক্রি হয়নি। তবে পিকআপ, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যানে ৫/৬ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অনেককেই ঢাকা ছেড়েছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। যে হারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে লোকসান দিয়ে মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। সরকারকে আলোচনায় বসতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক কমিটিগুলো বিভিন্ন জেলায় বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছে।
এদিকে দেশের অন্যান্য স্থানেও পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, বগুড়াসহ সারাদেশেই পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে ধর্মঘট পালন করা হয়।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত বুধবার রাতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা গতকাল ধর্মঘটের ডাক দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়