দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

একান্ত সাক্ষাৎকারে বিদিশা : গণতান্ত্রিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী এবং বিদিশা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিদিশা এরশাদ সম্প্রতি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। জাতীয় পার্টির মূল দলে জায়গা না হওয়ায় এরশাদপুত্র এরিক ঘোষিত কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদিশা। জাতীয় পার্টির পুনর্জাগরণের উদ্যোগ নিয়ে সারাদেশ সফর করছেন তিনি। রাজনীতিতে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী, কীভাবে দল পুনর্গঠন করবেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভাবনা- এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ভোরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার তানভীর আহমেদ। সঙ্গে ক্যামেরায় ছিলেন শাহাদৎ হোসেন।
ভোরের কাগজ : রাজনীতিতে আপনার লক্ষ্য কী?
বিদিশা এরশাদ : দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে চাই। এ ধরনের প্রত্যাশা আমার আগে থেকেই ছিল। আর জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোনো দল আমি করতেও পারব না। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও আমার কাছ থেকে সেটা প্রত্যাশা করে। আর এই প্রত্যাশা এখন আরো বেশি প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোরের কাগজ : জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় হওয়ার কারণ
বিদিশা এরশাদ : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পর পার্টিতে এক ধরনের নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা ও কর্মীরা এবং মাঠপর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীরা আমাকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে দেখতে চায়। দিন যত বাড়ছে তাদের এই আকাক্সক্ষাও বাড়ছে। তাদের এই আকাক্সক্ষা থেকে আমার জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসা।
ভোরের কাগজ : রাজনীতিতে কীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন?
বিদিশা এরশাদ : আমার নিজের জায়গা নিজে তৈরি করি, আমাকে কেউ জায়গা করে দিবে না। এটা মাথায় রেখেই আমার লক্ষ্য স্থির করে কাজ করছি। এজন্য জাতীয় পার্টিকে কোনো ব্র্যাকেটবন্দি দল হিসেবে তৈরি করিনি, এমনকি দলকে ভাঙিও নাই। আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শের জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনে রূপ দিয়েছি। গত ১৪ জুলাই আমার ছেলে এরিক এরশাদ যে ডাক দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে বাঁচান- সেই জায়গা থেকে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছি। আর এটি পরিবারের যে কেউই করতে পারে। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের একটি প্রথা রয়েছে। আর এরশাদের জাতীয় পার্টি তার পরিবারের সদস্যদের হাতে না থাকলে এটি আসলে টিকবে না। এটাই মানুষের আকাক্সক্ষা।
জাতীয় পার্টিতে কীভাবে নিজের জায়গা তৈরি করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন দল রাজনীতি করতে পারবে আর কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সেটা সময় হলেই বোঝা যাবে। তবে একটি গাছ লাগালে সেটি বাড়তে হবে। তারপরই ফল পাওয়া যাবে। আমরাই এরশাদের আদর্শের মূল জাতীয় পার্টি। আর অন্য যে জাতীয় পার্টির কথা বলা হচ্ছে সেটার ক্ষেত্রে কোর্টে রিট আছে। সেটা অচিরেই দেখতে পাবেন আদালতের আদেশের মাধ্যমে যে কার নেতৃত্বে থাকবে। চেয়ারম্যান নিজেই যদি অবৈধ হয় তাহলে মূল আর সাইড দল বলে কোনো কথা নাই।
ভোরের কাগজ : আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
বিদিশা এরশাদ : গণতান্ত্রিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আমি আশা করি। নির্বাচন সবাই করতে চায়। তবে আমি যতদিন রাজনীতি করেছি কখনো নির্বাচনকেই মূল লক্ষ্য করিনি। আমি শুধু নির্বাচন করব, সংসদ সদস্য হব এবং নির্বাচনী এলাকার জনগণের কথা বলব- শুধু এটাই রাজনীতি নয়। আমি নেতৃত্বে বিশ্বাস করি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। এতদিন ধরে সেই কাজটি করেছি। আমার ফলোয়ার বেড়েছে। আমি মনে করি, আমার নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ সাংসদ উপহার দিতে পারব। আর সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করছি। আমি সারাদেশ নিয়েই কাজ করছি, তবে ৩০০ আসনের সাংসদ প্রার্থী দিতে হবে এই ধরনের মানসিকতা এই মুহূর্তে নাই।
ভোরের কাগজ : জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন ?
বিদিশা এরশাদ : বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আশা-আকাক্সক্ষার জায়গা করে নিতে পেরেছি। আমাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রচুর মানুষ যোগাযোগ করছে। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, অন্যান্য দল থেকেও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। যারা অনেক দিন থেকে কাজ করছেন কিন্তু কিছু পাচ্ছেন না, এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নতুন নেতৃত্ব চান, পরিবর্তন চান- এই ধরনের মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
ভোরের কাগজ : বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
বিদিশা এরশাদ : গত তিনটি নির্বাচন আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। দেশ যেভাবে উন্নত হচ্ছে, সরকার যেভাবে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের আনাচে-কানাচে, গ্রামগঞ্জে যেখানেই যান উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সরকারে থাকলে সেই দলকে গালি দেয়ার রেওয়াজ এখন আর নেই। তার কারণ হচ্ছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা। সরকারের উন্নয়ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, ডিজিটাল, রাস্তাঘাট যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে সরকারের সমালোচনার কিছু নাই। তবে আমি দীর্ঘ প্রত্যাশা করি, সংসদে একটি শক্ত বিরোধী দল থাকা উচিত। আর শক্ত বিরোধী দল না থাকায় বিশেষ করে দেশের বাইরে এটা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। একটি শক্ত বিরোধী দল যদি উপহার দিতে পারি তাহলে সরকার আরো তিন-চারবার ক্ষমতায় থাকতে পারবে। এখানে সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে নামানোর কোনো ইচ্ছা কারোর নেই।
তিনি বলেন, এরশাদের পুরো জোট আমার সঙ্গে আছে। সব জায়গাতেই জোটের রাজনীতি চলছে। আমার সঙ্গে জোটের যেসব নেতারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নির্ধারণ করব যেটা দেশের স্বার্থে ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্ত নেব।
ভোরের কাগজ : মূল জাতীয় পার্টিতে কেন আসতে পারছেন না?
বিদিশা এরশাদ : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার আগে কথা ছিল আমরা পারিবারিকভাবে একসঙ্গে রাজনীতি করব। শুরুতে সেই ধরনের কথা হয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম, আমি যেহেতু প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলাম আমার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে সেটি ফিরিয়ে দেয়া হোক। আর আপনি এরশাদের ভাই হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যান থাকেন সেটি ভালো দেখায়। তিনি (জি এম কাদের) আমার সঙ্গে একমত ছিলেন। কিন্তু এরশাদ মারা যাওয়ার পর তিনি তার আসল চেহারা দেখিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সবাইকে নেবেন, কিন্তু আমাকে না। কারণ আমাকে তিনি হুমকি হিসেবে দেখেন। আমার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি সে কারণে। এমনকি আমার সঙ্গে প্রেসিডিয়ামের যেসব সদস্য ছিলেন তাদেরও বাদ দিয়ে দিলেন। আর এই স্বেচ্ছাচারিতার জন্যই তার খেসারত দেয়া লাগছে। পার্টিকেও তার খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনি জাতীয় পার্টিকে মনে করেন, তার একটি ব্যক্তিগত দল।
আমি জানি না, তার সঙ্গে আমার রাজনীতি করার সৌভাগ্য হবে কিনা। তবে আমি মনে করি, তিনি যে অবস্থানে আছেন সেটা থেকে বেরিয়ে আসলে তার জন্য ভালো হবে। জাতীয় পার্টি কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সারাদেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসেন। তারা চান শুধু জি এম কাদের নয়, তার স্ত্রী-সন্তানরাও জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকুক।
এটা দেখতে সুন্দর লাগবে, ভালো দেখাবে। এটা দেশবাসী সহজে গ্রহণ করবে। এটা সে কেন বুঝতে পারছে না, তা আমার জানা নেই। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আমরা এখনো দরজা বন্ধ করিনি, দেখা যাক কি হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়