দেশে ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৪৬

আগের সংবাদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া

পরের সংবাদ

উখিয়ায় শঙ্কার মধ্যেও চলছে নির্বাচনী উৎসব

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জসিম আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : সারাদেশের মতো দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে উখিয়ার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত জনপদ। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসবমুখর নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করলেও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা। নির্বাচনী এলাকায় দুপুর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে মাইকিং, মোটরসাইকেল শোডাউন, মিছিল-মিটিং।
এবারের নির্বাচনে পাঁচ ইউনিয়নের সবটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের পাশাপাশি মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলছেন। অপরদিকে বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচনে না এলেও তাদের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন প্রায় সব ইউনিয়নে। একই সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করছেন প্রতিটি ইউনিয়নে।
রাজাপালং ইউনিয়ন ছাড়া উখিয়ায় নৌকার প্রার্থীদের বিপরীতে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সঙ্গে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় টেকনাফের মতো উখিয়াও নৌকার ভরাডুবি হতে পারে এমনটি আশঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকর্মীরা।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে চলেছে। প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার ভারপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এম এ মনজুরের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও এম এ মালেক। সেখানে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ভোট হলে বর্তমান চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন আবারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন জুয়েল এবং আলী আহমদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।
রাজাপালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। এখানে তার প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী। বর্তমানে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চলছে সমানে সমানে। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পক্ষে সব সময় মাঠে দেখা যাচ্ছে ভগ্নিপতি সাবেক দুবারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে।
সাবেক চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরীর ছেলে সাদমান জামী চৌধুরীর পক্ষে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী এবং উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। রাজাপালংয়ের দুজন প্রার্থীই হেভিওয়েট বলে সাধারণ ভোটারদের অভিমত।
রত্মাপালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন ও মাহফুজ উদ্দিন বাবু রয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নৌকার প্রার্থী নুরুল হুদার পক্ষে প্রচারণা করলেও দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা তার পাশে নেই। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার নুরুল কবির চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থান ভালো রয়েছেন বলে জানা গেছে।
হলদিয়াপালংয়ে ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলমের বিপরীতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
মনোনয়ন বঞ্চিত ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশী। জনগণ যদি স্ব-স্ব ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন, নৌকার প্রার্থী শাহ আলম বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ছোট ভাই হওয়ায় এবারো নৌকার টিকেট পেয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে তিনি পিছিয়ে রয়েছেন। ওই ইউনিয়নে একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও আমিনুল হক আমিন।
জালিয়াপালংয়ে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী এস এম সৈয়দ আলমের বিপরীতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন চশমা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী ও ঘোড়া প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী। নতুন হিসেবে বেশ আলোচনায় রয়েছেন মনিরুল আলম মনির।
বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকা সঠিক জায়গায় যায়নি। জনপ্রিয় ব্যক্তিরা নৌকার টিকেট পাননি। আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নির্বাচনে তাদের বিজয় কঠিন হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রধানসহ আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা হুঁশিয়ার করলেও তাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা তা আমলেই নিচ্ছেন না।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম, পদবি ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে বহিষ্কারের সুপারিশসহ পত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। তারপরেও না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. ইরফান উদ্দিন জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, উখিয়ায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করছেন ৩৪ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে প্রার্থিতা করছেন ৫৪ জন। সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থিতা করছেন ২৮০। এবারের ইউপি নির্বাচনে মোট ৩৬৮ জন প্রার্থিতা করছেন।
উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ২১৯ জন। মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৩৯৪ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫০টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৩১টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়