গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

স্বস্তির মধ্যেও অবনতির আশঙ্কা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। আর বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে রয়েছে। সেই হিসেবে দেশে করোনা শনাক্তের হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু তাতেও শঙ্কা কাটছে না।
সংক্রমণ কম থাকায় মানুষের মাঝে মাস্কের ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি উধাও হয়ে গেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ইসরাইলসহ ৪২টি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ডেল্টা প্লাস (এওয়াই.৪.২) শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের তীব্রতা ডেল্টা থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া কম সংক্রমণ থেকে ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। যেমন, ভারতের কেরালা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভুটান। যার ফলে দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আপাতত স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকলেও আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে স¤প্রতি করোনা যে বিপর্যয় হয়েছে তার জন্য ৯১ শতাংশ ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ভূমিকা। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। কারণ ভারত, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ভারত ও ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের যোগাযোগ বেশি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে চলে এসেছে সতর্ক না হলে ঠিক একই রকমভাবে ডেল্টা প্লাসও দেশে চলে আসতে পারে। এছাড়া নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় টিকার কার্যকারিতা, আমাদের প্রস্তুতি কতটা তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সাপ্তাহিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলছেন, এই অঞ্চলগুলোতে অক্টোবরে যত সংক্রমণ মিলেছে তার ৫ দশমিক ৯ শতাংশের কারণ নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবগুলো ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতাও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ভেঙে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। টিকা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে। কারণ এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকাগুলো নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কারের আগেই বাজারে চলে এসেছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এটাই যে, পরবর্তী মহামারি ঘটানোর জন্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট তা বলার সময় এখনো আসেনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখে স্বস্তিতে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সেই পরিস্থিতি আমাদের দেশ কেন, বিশ্বের কোথাও তৈরি হয়নি। বরং শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় জনগণ আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা মাস্ক পরছেন তারাও সঠিক নিয়ম মেনে পরছেন না। ব্যক্তি পর্যায়ে উদাসীনতা বাড়ছে। সচেতনতা উধাও হয়ে গেছে। এতে করে আগামী দিনে

সংক্রমণ বাড়ার একটি আশঙ্কা থেকেই যায়। আমরা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু সর্বোত্তম টিকার (সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা) প্রতিই উদাসীন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি- এ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। করোনা নিয়ন্ত্রণে হলে বিশ্বের সব দেশকে একসঙ্গেই করতে হবে। আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকার পরেও অনেক দেশে সংক্রমণ আবারো বেড়েছে। অনেক দেশ নতুন করে লকডাউন দেয়ার কথাও ভাবছে। তাই বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে এটি ভাবার সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। সেই প্রতিরোধের ব্যবস্থায় আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। পুনরায় ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। ডেল্টা প্লাসসহ নতুন যে কোনো ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে গণসচেতনতা, টিকা গ্রহণ, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়