গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

মানবিকতার জয় ভালোবাসার জয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান প্রফেসর ডাক্তার মো. কামরুল ইসলাম, একজন মানবিক ডাক্তার, মানবতার সেবক। দেশের ভালো মানুষের প্রশংসা হওয়া উচিত, করা উচিত। স্যালুট জানাই প্রফেসর ডা. কামরুল ইসলামকে, যিনি এখনো মাত্র ৪০০ টাকা ভিজিট নিয়ে রোগী দেখেন। করোনাকালে অসুস্থ মানুষের কল্যাণে, প্রতিকূল অবস্থায়ও তিনি মানুষের সেবা দিতে কার্পণ্য করেননি। তিনি তার মেডিকেল টিম নিয়ে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন করেছেন, তার নিজ হাতে গড়া ঈকউ ্ টৎড়ষড়মু হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকাতে।
মানবসেবায় নিবেদিত একজন ডাক্তারের অসামান্য অবদানের জন্য উপযুক্ত স্বীকৃতি দেয়া হোক। ভালো কাজের স্বীকৃতি ভালো কাজে মানুষকে উৎসাহিত করে। আমরা দেশের জনগণ গুণীজনদের সম্মানিত করতে না পারলে দেশে গুণীজনের সৃষ্টি হবে না। দেশের জনগণ আজ বিদেশি চিকিৎসায় আসক্ত। কোটি কোটি টাকা আজ চিকিৎসা খাতে মানুষ বিদেশে গিয়ে খরচ করছে, চিকিৎসা নিচ্ছে। আমরা দেশের এসব রতœভাণ্ডারকে যদি উপযুক্ত স্বীকৃতি, মর্যাদা দিতে না পারি তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। প্রচারবিমুখ এই মানুষটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিলে তিলে একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন। তার এ সফলতা, একাগ্রতা, নিবেদন যদি আমরা মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হই তাহলে জাতি এক বিশাল মাপের মানবিক মানুষকে হারাবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ডা. কামরুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক-৪০ ব্যাচের ঋরৎংঃ ইড়ু। তার বাবা আমিনুল ইসলাম ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের অমৎড়হড়সরংঃ ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাসায় রাতে মিলিত হতেন, এই অপরাধে এক রাতে বিহারি ও রাজাকাররা তার বাবাকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর তার বাবার সম্মানে ঈশ্বরদীর সেই এলাকার নামকরণ করা হয় ‘আমিনপাড়া’। চার ছেলেকে মানুষ করা এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য স্বামীহারা এসএসসি পাস তার মা আবারো পড়াশোনা শুরু করেন। এইচএসসি পাস করে তার মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সমাজবিজ্ঞানে প্রথম স্থান অধিকার করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে তার মা অধ্যাপিকা রহিমা খাতুন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে যোগদান করেন।
চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডা. কামরুল ইসলাম পাকশী চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৫তম এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দশম স্থান অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে দেশে ৮টি মেডিকেল কলেজের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকা মেডিকেলে চান্স পান। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে গইইঝ ডিগ্রি এবং ইন্টার্নশিপ শেষ করে পরবর্তীতে তিনি একাদশ বিসিএসে ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান করেন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রেনিং পদে যোগ দেন এবং সার্জারিতে ঋঈচঝ ও এডিনবরা রয়েল কলেজ ইংল্যান্ড থেকে ঋজঈঝ পাস করেন। পরবর্তীতে ইউরোলজিতে ৫ বছর মেয়াদি গঝ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে জাতীয় কিডনি ও ইউরোলজি (ঘওকউট) হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে সফলভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন শুরু করেন। সরকারি হাসপাতালে কাজের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকার শ্যামলীতে স্বল্পমূল্যে কিডনি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ঈবহঃবৎ ভড়ৎ করফহবু উরংবধংবং ্ টৎড়ষড়মু বা সংক্ষেপে ঈকউ ্ টৎড়ষড়মু নামে নিজস্ব কিডনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজের পারিশ্রমিকের কথা চিন্তা না করে দেশের গরিব অসহায় মানুষের সেবায় তার শহীদ বাবার সম্মানে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে এগিয়ে আসেন। তাকে বাদে তার ১২ সদস্যের টিমের সদস্য, রোগীর ওষুধপত্র, অপারেশনের আনুষঙ্গিক খরচ ও থাকা-খাওয়ার খরচ মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, যেখানে পাশের দেশের খরচ বহুগুণ বেশি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তার বাবার সম্মানে বলতে গেলে বিনা পারিশ্রমিকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, ফ্রি মাসিক ফলোআপ করে যাচ্ছেন।
পূর্ণ সুস্থতার সঙ্গে এ রকম একজন মহৎপ্রাণ মানুষের দীর্ঘায়ু হাজার হাজার মানুষের কল্যাণে অবদান রাখবে। তার সেবার হাত আরো প্রসারিত করার সুযোগ করে দিতে সবার সহযোগিতা একান্তই জরুরি।
ডা. মোহাম্মদ হাসান জাফরী : চিকিৎসক ও লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়