গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ভেড়া ও মহিষের খামার

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি : ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজী। ২০ বছর আগেও এখানে ভেড়া ও মহিষের শতাধিক খামার থাকলেও এখন হাতেগোনা কয়েকটি খামার আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, নদীভাঙন ও নদী শাসনের কারণে চারণভূমি সংকট, খাবার সংকটসহ নানা কারণে সাগরস্নাত সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়া ও মহিষের পাল বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, উপজেলার দুই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বড় ও ছোট ফেনী নদী। দুই নদীর তীর ও সাগর মোহনায় ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে ওঠে। জেগে ওঠা চর নাসরিন, চর এলেন, উড়িরচর, চর খোন্দকার, চর আব্দুল্লাহসহ কয়েকটি চরে হাজার হাজার একর চারণভূমি ছিল। এসব চরে খামারের মাধ্যমে ভেড়া ও মহিষ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। এসব চারণভূমিতে সারা দিন ঘাস খেয়ে নদীর পানিতে ভেসে থাকত মহিষের পাল।
মোশারফ হোসেন নামে এক রাখাল জানান, ভেড়া বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। স্ত্রী ভেড়া এক বছর বয়স থেকে বাচ্চা দিতে শুরু করে। প্রতিবার এক থেকে তিনটি বাচ্চা দিয়ে থাকে। বাচ্চাদের জোয়ারের পানি ও শিয়াল-কুকুরের কবল থেকে রক্ষার জন্য নদীর তীরবর্তী চরে বাঁশের খুঁটির ওপরে মাচা তৈরি করে ভেড়ার জন্য টং ঘর বা খামার তৈরি করা হয়। দিন শেষে বা জোয়ার আসার আগে খামারিরা তাদের ওই খামারে ঢুকিয়ে রাখেন।
দক্ষিণ চর ছান্দিয়ার মহিষ খামারের মালিক আবু ইউছুফ জানান, মহিষ বছরে একবার বাচ্চা দেয়। একটি মহিষ ৯ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত দুধ দেয়। ভালো জাতের মহিষ পাঁচ-ছয় লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। খামারিরা প্রতিদিন এসব দুধ দোহন করে তরল দুধ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।
উপজেলার সবচেয়ে বড় খামার মালিক চর ছান্দিয়ার আনোয়ার কাবির জানান, ভেড়া ও মহিষ পালনে ব্যয় কম হওয়ায় উপকূলের অধিকাংশ কৃষক ঝুঁকে পড়েন ভেড়া ও মহিষ পালনে। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে বিভিন্ন সময় বড় ফেনী নদী ও ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙন, ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে চারণভূমির সংকট, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, রোগ ও জলদস্যুদের উৎপাতে খামারিরা ধীরে ধীরে ভেড়া ও মহিষ পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যেখানে একসময় ভেড়া ও মহিষের শত শত খামার ছিল, সেখানে এখন হাতেগোনা কয়েকটি খামার ছাড়া বাকিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
খামারিদের অভিযোগ চারণভূমির সংকট ও নানা সমস্যার কারণে ভেড়া-মহিষ পালন সম্ভব হয়ে ওঠে না। যথাযথ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে খামারিদের রক্ষা করতে পারলে আগের মতো ভেড়া-মহিষের খামার সৃষ্টি হতে পারে।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন জানান, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে চারণভূমি রক্ষা করতে হবে। এখনো চর নাসরিন, চর এলেন, উড়িরচর ও চর আব্দুল্লাহে ভেড়া ও মহিষের শত শত খামার হতে পারে। পরিষদের পক্ষ থেকে খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কল্লোল বড়–য়া ভোরের কাগজকে জানান, সোনাগাজীর চরাঞ্চলে এখন ছোট-বড় ২২টি খামার রয়েছে। এসব খামারে অন্তত ১ হাজার ৫০০ ভেড়া রয়েছে। ছোট-বড় ২৭টি মহিষের খামারে অন্তত দেড় হাজার মহিষ রয়েছে। ২০ বছর আগে এর পরিমাণ দ্বিগুণ ছিল। তিনি আরো জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পৃষ্ঠপোষকতার তেমন সুযোগ নেই। তবে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি পশুদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়