গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

নৌবাহিনীকে রাষ্ট্রপতি : ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়নে আরো সক্রিয় হতে হবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় মানবপাচার ও চোরাচালান রোধ, জেলেদের নিরাপত্তাবিধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দেশের ব্লæ-ইকোনমি কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আরো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ বিশাল সমুদ্রের ওপর আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেকটা নির্ভরশীল। এ কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকায় উন্নয়নবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নৌবাহিনীর অন্যতম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জমকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান (জাতীয় পতাকা) অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ, দেশ গঠন ও পার্বত্য এলাকায় মানবিক সহায়তায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জমকে এ ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পক্ষে নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জম ঘাঁটির অধিনায়কের কাছে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড তুলে দেন।
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ নৌ-সদস্যদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। আপনাদের পেশায় যেমন আছে চ্যালেঞ্জ, তেমনি আছে বিশালতার আহ্বান। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা এবং সমুদ্রে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা প্রদানসহ সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর পরিবেশ তৈরি ও সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব আপনাদের ওপরই ন্যস্ত। আপনারা এই দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন এ বিশ্বাস আমার আছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে ভূমধ্যসাগরের বুকে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় নৌবাহিনীর জাহাজের গৌরবদীপ্ত ও সফল পদচারণা বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা দেশের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
নৌবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলাসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা ও নাবিকসহ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রযুক্তিগত ও পেশাগত প্রশিক্ষণ দিতে বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নৌবাহিনীর সদস্যদের দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা এ দেশেরই সন্তান। তাই দেশের মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকতে হবে। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধু এই নীতিবাণীই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র। আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও আত্মরক্ষায় আমরা আপসহীন। তাই দেশের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি আত্মমর্যাদা রক্ষায় নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। আধুনিক রণকৌশল ও তথ্য-প্রযুক্তিতেও নিজেদের দক্ষ ও পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
নৌবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারি মান বজায় রাখবে এই আশা করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জমসহ নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আরো সুচারুরূপে ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারি মান বজায় রাখতে হবে। উপযুক্ত নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং বাহিনীর সব সদস্যের নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় নৌবাহিনী আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত নৌবাহিনীর এই ঘাঁটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ বিজয়ী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দুই নম্বর আসামি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জম হোসেনের নামে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে এই ঘাঁটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন দুর্যোগে উদ্ধারকাজ, মানবিক সহায়তা, পাহাড়ি জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ঘাঁটিটি। পাশাপাশি এই ঘাঁটি সেনা ও বিমানবাহিনীর জন্য স্বল্পমেয়াদি কোর্স যেমন- ফ্রগম্যানশিপ কোর্স, স্কুবা ডাইভিং কোর্স, ওয়াটারম্যানশিপ কোর্স ইত্যাদি পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশি নৌ-সদস্যদের পাশাপাশি নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, কাতার এবং কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তা ও নাবিকরা এই ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়