গাজীপুরে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

আগের সংবাদ

বাজার অস্থির দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আরেক দফা বাড়বে

পরের সংবাদ

কামাল-রেজা-নুর-জাফরুল্লাহ-সাকী গণ-তে গণ্ডগোল

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তারা সবাই গণযুক্ত। দেশে ষোলআনা স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করছে বাণী দিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর আবার মাঠে নেমেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ দখল করতে চান তিনি। জোনায়েদ সাকির দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলনে অতিথি হয়ে এই হুঙ্কার দেন ড. কামাল। সেখানে যুক্ত হন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহও। এ সরকারকে না হটালে দেশে গণতন্ত্র-শান্তি কিচ্ছু থাকবে না বলে কড়া বক্তব্য রাখেন তিনি।
ড. কামাল দেশে না বিদেশে তা হুট করে জানা কঠিন। খোঁজ নিয়ে বলতে হয়। শুক্রবার গণসংহতি আন্দোলনের অনুষ্ঠানে কড়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি এখন দেশে আছেন। এর মাত্র ক’দিন আগে তার গণফোরামের শীর্ষ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া ঘোষণা দিয়েছেন গণযুক্ত একটি নতুন দল- গণঅধিকার পরিষদ। গণফোরাম থেকে গণঅধিকার। ‘গণ’ ঠিক আছে। কেবল ‘ফোরাম’ থেকে ‘অধিকার’। রেজা কিবরিয়া গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা? বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। তবে রেজা কিবরিয়া এতদিন গণফোরামে ছিলেন এ তথ্যটি মনে পড়েছে অনেকের। নয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন তারা। গণফোরাম ছেড়ে এমন একজন হেভিওয়েট নেতার একটি নতুন দল ঘোষণা নিয়ে ড. কামালও কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। তবে সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকারের সদস্য সচিব হওয়ার ঘটনা নিউজ ভ্যালু পেয়েছে। ড. কামাল হোসেনের প্রতিষ্ঠিত গণফোরামে ধারাবাহিক গণ্ডগোলের তথ্যও এখন আর গরম খবর নয়। ড. কামালের বিশেষ কাউন্সিল বা তার দলের একটি বড় অংশের নেতাদের আলাদা জাতীয় কাউন্সিল করার ঘোষণাও তেমন নিউজ ভ্যালু পায়নি।
নতুন দল বাংলাদেশে কোনো ঘটনা নয়। তবে গণঅধিকার একটা ঘটনা। প্রথমত বহুদিন প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশে নতুন কোনো দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে না। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল ও জোটে টুকটাক ভাঙনের কিছু ঘটনা থাকলেও নতুন দলের খবর মিলছিল না। ঠিক এমন খরার মধ্যেই নানা কানাঘুষা-আলোচনা মাড়িয়ে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ঘোষণা হয়েছে নতুন দল গণঅধিকার পরিষদ। ঘোষিত দলটির প্রধান ড. রেজা কিবরিয়ার কারণে মূল আলোচনা নয়। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের সদস্য সচিব হওয়ায় আলোচনার কিছু রসদ মিলেছে। দলটির সেøাগান- ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’। মূল নীতি চারটি- গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। রেজা-নুরের পরিষদ কী করবে, কী করতে পারে- এ নিয়ে আলোচনা থাকাই স্বাভাবিক। এটি দল বা ফোরাম নয়, পরিষদ। কোনো রাজনৈতিক দলের নাম কি ‘পরিষদ’ হয়- খুচরা এ প্রশ্ন আছে। ‘পরিষদ’ শব্দটির কাছে অতীত ইতিহাস আছে। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠনটির নাম ছিল ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’। যে সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন ভিপি নুর। ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের বর্তমান-সাবেক নেতাদের রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের জুনে নুর তরুণদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ঘোষণা ঘোষণাই থেকে যায়। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর দল ঘোষণার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। পরিবর্তিত তারিখ ছিল ২০ অক্টোবর। প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। এরপর সেটিও পরিবর্তন করে ২৬ অক্টোবর প্রোগ্রাম করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সেই মোতাবেক ২৬ অক্টোবর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাজধানীর পল্টনের প্রিতম জামান টাওয়ারে দলটির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নাম ঘোষণা করেন নুরুল হক নুর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক জন্ম ছাত্রলীগে। বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ছাত্র আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। এর আগে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মুহসীন হলের উপ-মানব উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক। স্কুলজীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির দপ্তর সম্পাদক। বিতর্ক, অভিনয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।
ভিত্তিটা ছাত্রলীগে হলেও এই সংগঠনের খুব বড় নেতা ছিলেন না তিনি। তবে দফায় দফায় মার খাওয়া, ধর্ষণচেষ্টাসহ নানা মামলায় আসামি হয়েও মাঠ না ছাড়ায় ভিন্ন একটা পরিচিতি দাঁড়ায় নুরের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে তিনি মায়ের ছায়া দেখেন মন্তব্য করেও আলোচিত হন। সব মিলিয়ে নুরের উত্থান অনেকটা দয়ামায়ার জের। ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের মতো ব্যক্তিদের স্নেহভাজন। তাদের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগও তার। ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের ‘গণ’ এবং ড. কামালের দলের নেতা রেজা কিবরিয়াকে নিয়েই এখন করলেন পরিষদ। রেজা-নুরের নতুন দল নিয়ে বিএনপি গোস্যা না বেজার তা অস্পষ্ট। বড় নেতারা চুপ থাকলেও মধ্য এবং নিচের দিকে কিছু কথাবার্তা আছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগবিরোধী একক সোল এজেন্সি হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা কাজ করছে। কারো কারো মধ্যে ভারতের আম আদমি পার্টির সঙ্গে তুলনা করতে মন চায়। কেজরিওয়াল, ভিপি কানাইয়া খোঁজার লোকও আছে। তারা নিজেরা আম আদমি কিনা বা কেজরিওয়ালের ভোটার হওয়ার উপযুক্ততা আছে কিনা, তা ভাবেন না। আবার না ভাবলেও কিছু যায় আসে না। যে কারণে যার যা ইচ্ছা বলাই নয়, করারও একটা স্বাধীনতা এখানে অবারিত। সেই ধারাবাহিকতায় ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি, ৫৬ কেজি ওজন আর ৩০ ইঞ্চি কোমরের হিরো আলম নামের ব্যক্তিটিও কম করেছেন? নির্বাচন ঘনিয়ে এলে হয় তো আবারো করবেন। বিনোদন জগতের চেয়ে তিনি বেশি বিনোদিত করেছেন খরার টানের রাজনীতির ময়দানকে। সংগীত ভিডিও, মডেল, অভিনেতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু আলোচিত ব্যক্তি বনে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী হয়ে নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলো যেমন- বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার ফলে হিরো আলম ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে খুব আলোচিত হন। সে সময় ইয়াহু ইন্ডিয়ার এক জরিপ অনুসারে ভারতীয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়েও হিরো আলমকে বেশিবার গুগলে অনুসন্ধান করা হয়েছিল। ২০১৮ সাল অনুসারে গুগল সার্চ ট্রেন্ডে বাংলাদেশে দশম অবস্থানে নাম ছিল হিরো আলমের। একদিকে কপাল। আরেকদিকে ডিজিটালের সুবাদ। এক সময় ভোটের মাঠে সিলেটের ছক্কা সয়ফুর, টঙ্গীর মিন্নত আলী, ভোলার মুরগা সাদেকরাও ছিলেন আলোচিত আইটেম। তখন মিডিয়া বলতে ছিল পত্রিকা। পত্রিকাগুলোতে তাদের নিয়ে নিয়মিত চুটকি আইটেম হতো। আজকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকলে তারাও কম হিরো হতেন না। ‘মার ছক্কা’ ছবির নায়ক হওয়ার যোগ্যতা হিরো আলমের চেয়ে তাদের বরং বেশিই ছিল।
নানা কাণ্ডে দিন কয়েক দেশ কাঁপানো নায়িকা পরীমনিরও এখন রাজনৈতিক দল খোলা বাকি। এরই মধ্যে তাকে প্রীতিলতার সঙ্গে তুলনার একটা ব্যারাম খেয়াল করার মতো। কোথায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদা আর কোথায় পরীমনি?- এ প্রশ্ন করে কে ঝামেলায় পড়তে যাবে কোন দুঃখে? যেমন আগরতলা-চকিরতলা তুলনায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজ, সমাজ থেকে বিজ্ঞজন কোথাও পরিমিতিবোধের বালাই নেই- সেখানে পরীমনিকে প্রীতিলতা ভাবতে সমস্যা কী? প্রীতিলতারই বা তাতে কী যায় আসে।
মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়