১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

সৈয়দপুরে রেল কোয়ার্টার ভেঙে গোডাউন তৈরির অভিযোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : সৈয়দপুরে অবৈধ দখলদাররা রেল কোয়ার্টারের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রেল কোয়ার্টার দখলমুক্ত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বার বার উদ্যোগ নিয়েও অজ্ঞাত কারণে সফল হচ্ছে না। জবরদখলকারীরা রেলের কোয়ার্টারের আকৃতি প্রকৃতি পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। অনেকেই রেল কোয়ার্টার ভেঙে গোডাউন ঘর নির্মাণ করছে। আবার অনেকেই কোয়ার্টার ভেঙে সেখানে আরসিসি পিলার দিয়ে তৈরি করছে আধুনিক মানের বসতবাড়ি। গতকাল বুধবার মুন্সিপাড়া রেল কলোনি কর্নেল তাহের রোডে সরেজমিন গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
এ সড়কের অবৈধ দখলদার ধনাঢ্য সার ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন রেলওয়ে কোয়ার্টার ভেঙে গড়ে তুলছেন গোডাউন ঘর। রেল কোয়ার্টারের দরজা ভেঙে বাহারি ডিজাইনের নির্মাণ করেছেন প্রধান ফটক। আর দখলবাজির প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কারখানা) আইওডব্লিুউ শরীফুল ইসলাম। অনৈতিক উপঢৌকনের বিনিময়ে তিনি অবৈধ দখলদারদের সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অচেনা কোনো মানুষ প্রথম দেখায় বুঝতেই পারবে না এটি এক সময় রেলওয়ে কর্মচারীদের আবাসস্থল ছিল। এমন ঘটনা সৈয়দপুর শহরের প্রতিটি রেল কলোনিতেই ঘটছে। আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি সূত্র মতে, সৈয়দপুরে শহরে সিঙ্গেল ও ডাবল কোয়ার্টারের সংখ্যা দুই হাজার ৪০০। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই হাজার ২০০ রেল কোয়ার্টার অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্তমানে অবৈধ দখলদাররা সিন্ডিকেট করে রেল কোয়ার্টার বেচাকেনা করছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে এসব কাজে সরকারি দলের নেতা ও রেলওয়ের ওই কর্মকর্তা।
এলাকা ভেদে একেকটি রেল কোয়ার্টার দুই লাখ থেকে ছয় লাখ টাকায় কেনাবেচা চলছে। কোনো অবৈধ দখলদার রেল কোয়ার্টার ছেড়ে যেতে চাইলে আরেক জনের কাছে টাকার বিনিময়ে হাত বদল করে। বড় ধরনের দখলবাজরা রেল কোয়ার্টার বিক্রির টাকা দিয়ে পৌর এলাকায় ব্যক্তিমালিকাধীন জমি কিনছেন। রেল সম্পদ খেকোরা রেলওয়ের কোয়ার্টার ও পতিত ভূমি বিক্রি করে আঙুল ফুলে বটগাছে পরিণত হয়েছে। মুন্সিপাড়া ও গোলাহাট এলাকায় দুই দখলবাজ রেলওয়ের ভূসম্পদ বিক্রি করে গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। রেলওয়ের ভূ-সম্পদ দখল আর বিক্রিই তাদের মূল পেশা।
সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ তাদের নাম মুখে নেয়ার সাহস পায় না। সাধারণ মানুষ ভুলেও তাদের নাম উচ্চারণ করলে মহল্লা ছাড়া হতে হয়। অনেকে প্রাণও হারিয়েছেন। ওই দুই দখলবাজ মূর্তিমান আতঙ্ক শহরের মানুষের কাছে। সরকারি দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তাদের দহরম মহরম থাকায় কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনও মামলা নেয় না। কারণ তাদের হাত বড় লম্বা। পুলিশ মামলা নিলেই তৎক্ষণাৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইলে রিংটোন বাজতে থাকে। হ্যালো বলার সঙ্গেই বলা হয় মামলা নেবেন না। এমন অবস্থায় শহরের সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। দখলবাজিতে রেল কর্মকর্তা, সরকারি দলের নেতা ও দখলবাজরা একে অপরের মাসতুতো ভাইয়ে পরিণত হয়েছে বলে শহরের বিশিষ্টজনদের অভিমত।
রেল কোয়ার্টার ভেঙে গোডাউন ঘর নির্মাণ করার বিষয়ে অবৈধ দখলদার মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ। আমি শুধু বাসার দরজার প্রধান ফটকটি নির্মাণ করেছি।
দখলবাজির মদতদাতা রেল কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি ভোরের কাগজকে জানান, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে অনৈতিক কোনো লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়