১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির চর্চা হোক শিক্ষাঙ্গনে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন যেন সোনার হরিণ। ভর্তি পরীক্ষার সময়ে ভর্তিপ্রত্যাশীদের আকাক্সক্ষা আর উৎকণ্ঠা দেখে তা সহজেই অনুমান করা যায় যে, একটি আসন তাদের কাছে কতটা মূল্যবান। জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে একটা সুষ্ঠু এবং সুষম জীবন বিনির্মাণের তাগিদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন যে বড়ই দরকার। অনেকের হয়তো মেধা রয়েছে তবে নেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে পড়ার সামর্থ্য। তাই তাদের একমাত্র গন্তব্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার পরই শুরু হয় এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে তো উতরে উঠতে হবে লক্ষাধিক ভর্তিপ্রত্যাশীর চ্যালেঞ্জ। যথারীতি এক মহাযুদ্ধ শেষ করে তারা হাতে পায় সেই স্বপ্নলোকে দর্শন করা সোনার হরিণটি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন।
তবে এত সংগ্রামের পরে পাওয়া আসনটির মর্যাদা লঙ্ঘিত হয় যদি না বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকে। বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছুদিন পর পর প্রাণঘাতী সংঘাত ঘটেই চলেছে। কখনো আধিপত্য বিস্তার, কখনো টেন্ডারবাজি ইত্যাকার বিষয় নিয়ে হানাহানি যেন লেগেই আছে, এতে ব্যাঘাত হচ্ছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার। একটি বিশ্ববিদ্যালয়েই নতুন নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হয়। একটি জাতি বা সমাজের নতুন জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচিত হয় এ ধরনের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রাখলে বলতে হয়, সমাজ বা জাতির জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি জাতির যে কোনো বিষয়ে জ্ঞানের নতুন জগৎ এখানে তৈরি হয়। তা সে বিজ্ঞান বিষয়ে হোক কি তথ্যপ্রযুক্তি বা সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়েই হোক। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার একটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান খুঁজে নিতে চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ জন্য ব্যাপক তাগিদ তৈরি হয়। এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটা আবহাওয়া দরকার যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের নেশায় ছুটতে পারে।
আমাদের দেশের সব নাগরিক সেই পুরনো অথচ সত্য কথাটিই ঘুরেফিরে সচরাচর বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। অথচ কার্যত এর চর্চা এবং চর্চাক্ষেত্রগুলো অবহেলিত ও উপেক্ষিত। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ দিন দিনই দ্রুত খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। যদিও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে জ্ঞানার্জনের প্রধান ক্ষেত্র। স্বার্থের জন্য হানাহানি বহু পুরনো। তবে একদিন শিক্ষাঙ্গনে হানাহানি ছিল, তা আদর্শের। আর আদর্শ ও মানবমহিমা উজ্জীবনে যারা নেতৃত্বে আসতেন, তারা ছিলেন মেধাবী। তারা ‘ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ’ ভোলেননি। তারা শ্রদ্ধাবানও ছিলেন। তাদের ধ্যানজ্ঞান ছিল, ‘শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম’। এখন হয়েছে ক্ষমতাবান লভতে অভিজ্ঞানম। অর্থাৎ অর্থবিত্ত থাকলে সনদ মেলে। তারপর ছড়ি ঘোরানোর ব্যবস্থাও হয়ে যায়। এই যে অবারিত সুবিধাপ্রাপ্তির পথ, তা অবহেলা করে কোনো অবোধ কষ্ট করতে যাবে! যে কারণে দিন দিন বাড়ছে শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য এবং ক্ষমতা লাভের লড়াই।
শিক্ষাঙ্গনে হানাহানির ফলে ফলিত হত্যাকাণ্ডের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে অন্যদের মাঝেও আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছিল, যাতে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সমীহ করে এবং সালাম দেয়। এটা ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুও ছিল। সুতরাং সহজেই অনুমেয় যে ক্যাম্পাসে ত্রাস ছড়াতেই এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেই এসব শিক্ষার্থী এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মাঝে সংঘাত হলে আবারো আলোচনায় এসেছে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিষয়টি। মাথার ব্যান্ডেজে লেখা আছে ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’। এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মাহাদী জে আকিব নামে এক শিক্ষার্থীর। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র। মাহাদী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে ওঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে জ্ঞান ফিরে আসলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশের ন্যায় দরিদ্র দেশে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই প্রধান অবলম্বন। কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলবাজি, হানাহানি, খুনোখুনি এবং সর্বোপরি এ জাতীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা ও অপরিপক্বতা দেশের বিবেকবান ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের শুধু যে ভাবায় তাই নয়, আতঙ্কিতও করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দলবাজি, দায়িত্বে অবহেলা ও নানা ছুতানাতায় অবরোধ-আন্দোলনে শিক্ষকরাও কম যান না। সরকারি কলেজগুলোতেও তাই। এ ব্যাপারে রাজনীতিকরাও দায় এড়াতে পারেন না। কারণ তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের রাজনীতিতে উৎসাহিত করেন। অভিযোগ আছে, এ লক্ষ্যে তারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানা জাতীয় সুবিধাও দিয়ে থাকেন।
এমনকি রাজনীতিকরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় স্বার্থে দেশ গড়ার যথার্থ কর্মীকে স্বীকৃতি দিতে যত এগিয়ে আসবেন, দেশ তত দ্রুত অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। রাজনীতি নয়, জাতীয় স্বার্থে কৃত উচ্চমানের কর্মই সাফল্যের মাপকাঠি- এ ধারণা যত বদ্ধমূল হবে, দেশ তত দ্রুত সাফল্যের পথে এগোবে।
সর্বোপরি দেশের সবস্তরের মানুষের সচেতনতায় এবং সদিচ্ছায় একটি সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হবে এমনটাই প্রত্যাশা সব শিক্ষার্থীর।
শিক্ষাঙ্গনে এমন মারামারি হানাহানি বন্ধ হোক। এই নোংরা রাজনীতির বলয় ধ্বংস হোক। সুস্থ ও শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির চর্চা হোক শিক্ষাঙ্গনে। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষার পরিবেশ দিয়ে তাদের শিক্ষার মান আরো উন্নীত করার মাধ্যমে একটি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং একটি সভ্য জাতি গঠনে সবাই সচেষ্ট থাকবেন- এমনটাই প্রত্যাশা।

মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়