১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ : দুর্বলতা ঘোচাতে চায় ফায়ার সার্ভিস

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : যে কোনো অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্যতম ভরসার নাম ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সবার আগে পাশে দাঁড়ায় বাহিনীটির সদস্যরা। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নিজেদের জীবন বাজি রাখতেও কার্পণ্য করেন না তারা। কিন্তু দেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি সংস্থাটি। উল্টো জনবল সংকট, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ফুটে ওঠে দুর্বলতার ছাপ। বিশেষ করে, সুউচ্চ ভবন, কলকারখানা কিংবা কেমিক্যাল গোডাউনের মতো জায়গায় বড় অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের মতো ঘটনায় দুর্বলতাগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় একদিকে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।
যদিও এর জন্য কখনোই নিজেদের দুর্বলতাকে দায়ী করেন না সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, আধুনিক সরঞ্জামের সংকটের কারণে নয়, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির পেছনে মানুষের সচেনতার অভাবই দায়ী। অবশ্য ছোট অগ্নিকাণ্ডগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখা গেছে সংস্থাটিকে।
ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২০ সালে সারাদেশে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সাত হাজার ৭২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চুলার আগুন থেকে তিন হাজার ৫৬৪টি, বিড়ি-সিগারেটের অবশিষ্টাংশ থেকে তিন হাজার ৪৬৪টি, মেশিনের মিস ফায়ার থেকে ১৭৩টি, গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণে ১৩৫টি, গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে ৭২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৭১ জন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের রয়েছেন ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ২৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। মোট উদ্ধারের পরিমাণ এক হাজার ৪২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকারও বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাপণের জন্য আধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণের

পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা। ১০ বছর আগে সারাদেশে ২০৪টি ফায়ার স্টেশন থাকলেও বর্তমানে সারাদেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৫৬টি। পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ ও রূপপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১১টি আধুনিক ফায়ার স্টেশন। কর্তকর্মাদের দাবি, ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। বর্তমানে সংস্থাটি জনবল রয়েছে ১৩ হাজার ৪৭৩ জন- যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জানা গেছে, প্রথমশ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকার কথা। এর মধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে ১৫-১৬ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই প্রথমশ্রেণির স্টেশনেও। দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনের অবস্থা আরো করুণ। ফায়ার সার্ভিসের সংকট কাটাতে কমপক্ষে ৩০ হাজার জনবল দরকার বলে মনে করেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক সরঞ্জামের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। বর্তমানে সারাদেশে ল্যাডার (মই) রয়েছে ২১টি। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ১১টি। এর মধ্যে স¤প্রতি সর্বোচ্চ ৬৪ মিটারের পাঁচটি ল্যাডার যুক্ত হয়েছে। এগুলো ২২তলা পর্যন্ত আগুন নির্বাপণে সক্ষম। এছাড়াও ৫৪ মিটার ও ২৭ মিটারের ল্যাডার রয়েছে। বিশেষায়িত গাড়িও বাড়ানো হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসে বিশেষায়িত গাড়ি এখন প্রায় ৬০০টি। এছাড়াও রাতে অভিযান পরিচালনার জন্য হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, রিমোট কন্ট্রোল অপারেশন ভেহিক্যাল, ক্যামিকেলে আগুন নির্বাপণে সক্ষম পাঁচটি অত্যাধুনিক গাড়ি, পানিতে উদ্ধার কাজ করার জন্য রাবার বোট, বহুতল ভবনে উদ্ধারের জন্য ৩০ মিটার গভীরে কাজ করতে সক্ষম হ্যামার যোগ করে দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, অতীতের তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকমানের সব ধরনের সরঞ্জাম আমাদের আছে। যদি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেদিক থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই। তবে, প্রশিক্ষণের বেলায় অনেক ঘাটতি রয়েছে, এটা সত্য। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুন্সীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী মূল ফোকাস হচ্ছে, ফায়ার একাডেমির মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা।
এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার ডিজি বলেন, বর্তমানে ৬৮ মিটার বা ২২তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তবে, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে, আগুনের সূত্রপাতের ১৫ মিনিটের মধ্যে নির্বাপণ কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু যানজট ও সরু রাস্তার জন্য আমরা সময়মতো দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারি না। ভবনগুলোও বিল্ডিং কোড না মানায় এবং নিজস্ব কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সরঞ্জাম আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
বড় অগ্নিকাণ্ডে ফুটে ওঠে দুর্বলতা : সম্প্রতি কয়েক বছরে বিভিন্ন বহুতল ভবন, কলকারখানা ও ক্যামিকেল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুর্বলতা ফুটে ওঠে ফায়ার সার্ভিসের। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগায় বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে হতাহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের। বিশেষ করে গত ৮ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৯ ঘণ্টা সময় লাগে ফায়ার সার্ভিসের। ততক্ষণে ছয় তলা ভবনের পুরোটাই আগুনের তাণ্ডবে ধ্বংলীলায় পরিণত হয়। চতুর্থ তলায় আগুন ছড়াতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগলেও সেখানে আটকাপড়া ৪৯ শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। এছাড়াও গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় কোনাপাড়া মাদ্রাসা রোডে পাশা টাওয়ারের ১০তলা ভবন এবং ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণেও হিমশিম খেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. রায়হান ভোরের কাগজকে বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সময়ের সঙ্গে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তখন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। তবে, আগুনের ব্যাপ্তি বুঝে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। অনেক ঘটনায় ফায়ারম্যানদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে বলে জানান তিনি।
ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ : ‘মুজিব বর্ষে শপথ করি, দুর্যোগে জীবন-সম্পদ রক্ষা করি’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২১। রাজধানীর মিরপুরস্থ ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে বেলা ১১টায় এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। ফায়ার সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। ফায়ার সপ্তাহ শেষ হবে আগামী শনিবার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়