১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

নালাভর্তি আবর্জনা সরানোর দায়িত্ব নেবে কে?

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের একটি ছোট্ট নদী। ২নং গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স মার্কেটের বিপরীতে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই শহরকে বলা হয় টিএনটি নালা। এই নদীতে সম্প্রতি ১ জন নিহত হয়েছে। কীভাবে বর্ষা মৌসুমে একটি নদীতে পরিণত হয়েছে আর অন্য মৌসুমে নদীটির কী অবস্থা সেটাই আমার লেখার মূল বিষয়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই এলাকাটি। বাজারটির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন খাল টিএনটি খাল। খালের পাশে বহুতল ভবনে ভরা। আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এই এলাকাটি অনেকের কাছেই বসবাসের জন্য নিরাপদ ও পছন্দের। এখানে যেমন সাধারণ মানুষ থাকেন তেমনি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরাও বসবাস করেন। প্রতিনিয়ত এই খালটিকে তারা দেখলেও এটি পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেন না। পলিথিন আর ময়লা আবর্জনার কারণে বাজারের পূর্ব পাশের অংশটি যে খাল সেটি চেনাই যায় না। পশ্চিম পাশের অংশটিও ময়লায় ভরা। কিছুদিন আগে (বর্ষাকালে) এই খালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নালাতে পড়ে মারা গিয়েছিল একজন মহিলা। আহত হয় তার পরিবারের ছোট্ট সন্তানরা। ভাগ্যক্রমে তার সন্তানরা বেঁচে যায়। আর এখন বাচ্চাগুলো মা হারা। ময়লা আবর্জনার কারণে তার লাশ পেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের অধিকাংশ খালই ময়লা আবর্জনায় ভরা। বর্ষাকাল আসার আগে এই খালগুলোকে পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও এবার যেন ঢিলেঢালা আয়োজন। যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কারণ ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিপূর্ণ থাকায় পানি সরতে পারছে না। একই সঙ্গে এসব খাল থেকেই মশার জন্ম হচ্ছে। খাল উদ্ধার ও পরিষ্কার রাখতে স্থানীয় কাউন্সিলরের দৌড়ঝাঁপও কোনো কাজে আসছে না। খালেই জীবন, খালেই বিকাশ, খালেই সর্বনাশ। যেসব খাল একসময় স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার উৎস ছিল। নির্বিচারে এটি অনেকটা পরিবেশ হত্যার মতো। সেই খালই এখন আধুনিক চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবহমান নদীতে অনেক ময়লা ফেলছে। এ নগরীর বিশাল জনগোষ্ঠীর আবর্জনার ভার বয়ে বেড়ানো খালগুলো ধুঁকে ধুঁকে অনেকটাই নিঃশেষ হয়ে গেছে। আর এ নিষ্ঠুর পরিণতি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ বাসিন্দাদের।
এই খালটি আবর্জনায় ভরা। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেও পানি সরে না। একটু বৃষ্টিতেই আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। পলিথিন, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল আর ফলের পরিত্যক্ত ঝুড়িতে ভরপুর এই খাল। সঙ্গে গৃহস্থালি বর্জ্যরে স্তূপ। দূর থেকে দেখলে একে খাল ভাবা মুশকিল। খালে পানি থাকে, সঙ্গে থাকে প্রবাহ। সামনে গিয়ে ময়লার ভাগাড় ভেদ করে সামান্য কালো তরল পদার্থ দেখা গেলেও তাকে পানি বলা মুশকিল। সিটি করপোরেশন বলছে, এটির সংস্কার করবে। আর শেষ হলেই এই এলাকায় পানিবদ্ধতা থাকবে না। প্রতি বছর মে-জুন মাস তথা বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই নদীটির বেহাল অবস্থা। কিন্তু সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বছর না যেতেই সেগুলো আবার সিটি করপোরেশনের বেখেয়ালেই চলে যায়। সূত্র মতে, কয়েকবার পৃথিবীর অপরিচ্ছন্ন নগরীর খেতাব পেয়েছে ঢাকা। এছাড়াও বসবাস অনুপযোগিতার তালিকারও শীর্ষে এ শহর। হয়তো এরপরে চট্টগ্রামই হবে অপরিচ্ছন্ন নগরী। এ খালটি অনেকের কাছে মশা উৎপাদনের ‘কারখানা’ হিসেবে পরিচিত। মশার উৎপাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা অন্য খালগুলোরও। ডোবা, নালা ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেখানে মশার প্রজনন বেশি হচ্ছে। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে খালগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। কারণ গৃহস্থালির ময়লা, পলিথিনসহ অন্য বর্জ্যগুলো প্রায়ই সবাই খালের মধ্যে ফেলে দেয়। এটিকে কেন জানি সবাই নিরাপদ মনে করে। সার্বিকভাবে খাল ঠিক রাখতে হলে তা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে তাদের সব ধরনের সাপোর্ট দিতে হবে। এই অভ্যাসটি একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের ত্যাগ করতে হবে। তাহলেই চট্টগ্রাম নগরীর এই নদীটি (টিএনটি নদী) প্রাণ ফিরে পাবে।

তারেক আল মুনতাছির : শিক্ষার্থী, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়