১০ সরকারি ব্যাংকে নতুন ২০ ডিএমডি

আগের সংবাদ

মাসসেরার দৌড়ে সাকিব

পরের সংবাদ

আবার চালু হচ্ছে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেশে বাতিল হওয়া তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বা থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স পরিসেবা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কোনো যানবাহনের কারণে কোনো ব্যক্তি যদি আহত বা নিহত হয়, অথবা যদি কোনো সম্পদের বা অন্য গাড়ির ক্ষতি হয়, তার ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এ ‘থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স’ করা হতো। অর্থাৎ চালক বা যাত্রীর বাইরে যে ক্ষতি হয়, সেটার ক্ষতিপূরণের জন্য বিমা করার নামই থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স।
প্রস্তাবিত এ বিমা পলিসিতে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। অপরদিকে বাতিল হওয়া তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা পলিসিতে (মোটর ভ্যাহিকেল অ্যাক্ট-১৯৮৩ অনুযায়ী) দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ ছিল ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের জন্য ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা ছিল।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সে পৃথিবীব্যাপী বিমা দ্বারা বাধ্যতামূলক আছে। বিষয়টি পূর্বের ন্যায় বাধ্যতামূলক করে যুগোপযোগী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ বিষয়ে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতারের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গঠিত কমিটি এ পরিসেবা চালুর জন্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলেও জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এফসিএ ভোরের কাগজকে বলেন, পৃথিবীব্যাপী তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা সব দেশেই কম-বেশি বাধ্যতামূলক আছে। বাংলাদেশেও এটি বাধ্যতামূলক করা জরুরি। কেননা, নিরপরাধ বা নিরীহ পথযাত্রী মোটর দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে ক্ষতিপূরণের বিধান বর্তমান বিমা পলিসির ক্ষেত্রে চালু নেই। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাতিল হওয়া তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমাকে কীভাবে নতুন আঙ্গিকে এবং নতুন পরিসেবা নিয়ে বাধ্যতামূলক করা যায় এ বিষয়ে আইডিআরএ কাজ করছে। এ চেয়ারম্যান আরো বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ৬০/১ বা ৬০/২ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা আছে। এখন এটাকে ফোর্স করতে হবে। শুধু বিমার স্বার্থে না, দেশের সম্পদ, সম্পদের সুরক্ষায় এটা কার্যকর করতে হবে। ‘থার্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স’ নামের কিছুটা পরিবর্তন করা হবে জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা নামেরও কিছু পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছি। এটাকে আরেকটু উন্নত কিছু করা যায় কিনা এমন চিন্তা করছি, যাতে মানুষের কল্যাণের কিছু হয়।
প্রস্তাবিত থার্ড পাটি ইন্স্যুরেন্স পলিসিতে বিমা প্রিমিয়াম যানবাহনের ধরন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। তবে এ পলিসির আওতায় দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে মৃত্যু বাবদ ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা, গুরুতর আহত হলে ৩ লাখ টাকা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় সামান্য আঘাত পেলে কেউ আহত হলে ক্ষতিপূরণ ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে এ পলিসির আওতায় সড়ক দুর্ঘটনার সময় কোনো সম্পদের ক্ষতিপূরণ হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তৃতীয় পক্ষের বিমা বাতিলের কারণ : দেশে মোটরযান বিমায় মূলত ২ ধরনের পরিকল্পনা প্রচলিত ছিল। একটি হচ্ছে ‘মোটর অ্যাক্ট লায়াবিলিটি’ (যেটি ‘থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স নামে পরিচিত), পলিসি অন্যটি হচ্ছে কম্প্রিহেনসিভ মোটর ভ্যাহিকেল ইন্স্যুরেন্স পলিসি। সড়ক পরিবহন ২০১৮ প্রচলিত হওয়ায় তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বা থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স বাতিল করে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সার্কুলার নং- নন-লাইফ ৮২/২০২০ জারি করে এ বিমা পরিকল্পনা বাতিল করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তবে নতুন আইনের ৬০(২) ধারায় বলা হয়েছে, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বিমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বিমার আওতাভুক্ত থাকবে। বিমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। অপরদিকে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান উহার অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বিমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বিমার আওতাভুক্ত থাকবে এবং বিমাকারী কর্তৃক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। এ কারণে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাতিল করা হয়েছে। বিমা কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, সড়ক আইন হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স করার নিয়ম বাতিল করার নির্দেশ দেন। কারণ আইনি কারণে এটা করা হলেও বাস্তবে তেমন একটা কাজে আসে না। এরপর এ ধরনের পলিসি বাতিল করার পর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নতুন পলিসি সংযোজন করে এ বিমা বাধ্যতামূলক করে চালু করার দাবি : থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বাদ দেয়ার ফলে দুর্ঘটনায় পথচারী ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সারা বিশ্বেই থার্ড পার্টি মোটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক, কম্প্রিহেনসিভ নয়। আবার সক্ষমতার বিচারেও কম্প্রিহেনসিভ মোটর ইন্স্যুরেন্স সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা যুক্তি সম্মত নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে যানবাহনের থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স চালু থাকলেও আমাদের দেশে এটাকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়াটা অযৌক্তিক।
এ বিষয়ে সাধারণ বিমা করপোরেশনের পরিচালক এ কে এম ইহসানুল হক বলেন, তৃতীয়পক্ষ কোনো প্রকার বিমা ছাড়া সম্পূর্ণ অসহায় এবং মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। এ বিমা চালু না থাকার জন্য কোনো কারণ ছাড়াই দেশের সাধারণ নিরপরাধ মানুষ যদি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এর দায়ভার কে নিবে। অবিলম্বে নতুন পলিসি সংযোজন করে এ বিমা বাধ্যতামূলক করে চালু করা উচিত। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, আমরা চাই থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্স চালু হোক। কিন্তু কীভাবে বা কোন পদ্ধতিতে চালু হবে সেটাই মুখ্য বিষয়। নতুন করে এটাকে চালু করলে কিছু সুবিধা দিয়ে চালু করা উচিত পাশাপাশি থার্ড পার্টি নামটা না দিয়ে অন্য কোনো নাম দেয়া যায় কিনা তাও বিবেচনায় নিয়ে আইডিআরএ উদ্যোগ নিতে পারে।
তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি নিশ্চিত করার জন্য আইনি সুরক্ষা জরুরি : যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, একটি গাড়ি যখন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে তৃতীয় পক্ষের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় তা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১ শতাংশের কাছাকাছি। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি দাঁড়ায়।
এ যে একটা বড় অঙ্ক ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, এটা সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু রাষ্ট্রের। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মোট তহবিল না থাকার কারণে বিমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা জরুরি যেটা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোতে প্রচলন আছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম দেশে যে ক্ষতিপূরণটা পেত না সেটা নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, নীতি-নির্ধারণী মহল সরকারকে ভুল বুঝিয়ে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমাটা বাতিল করে দিল। ফলে তৃতীয় পক্ষের ক্ষতিপূরণের জায়গাটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি মনে করি, এটা পুনর্বহাল হওয়া প্রয়োজন এবং তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি নিশ্চিত করার জন্য আইনি সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়