ডিএমপি কমিশনার : স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ থাকলে মামলা নয়

আগের সংবাদ

ইইউ-চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অঙ্গীকার > ৫০ বছরেই ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ : এক হাজার কোটি ডলার তহবিলের নিশ্চয়তা, উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা

পরের সংবাদ

পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অনেকেই এসেছে রাজার সঙ্গে দেখা করতে।
রাজা খুশি। গ্রামের মানুষজনও খুশি।
এ এক অপরূপ দৃশ্য।
অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে ভেতরে ঢুকতে পারল বৃদ্ধা সূর্য বানু।
সুসদৃশ্য মুকুট পরা সুদর্শন রাজা হাস্যবদনে আরাম করে বসে আছেন। রাজার রাজমুকুটের শীর্ষে শোভা পাচ্ছে একখানি ময়ূরের পাখনা।
রাজা সৌম্য দৃষ্টিতে সূর্য বানুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আরে আসুন আসুন!’
সূর্য বানু রাজার কাছে গেল। প্রণাম করে বলল, ‘আপনার শরীরটা ভালো রাজাধিরাজ?’
রাজা খুশি হয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ ভালো। তা দেখি, আপনি আমার জন্যে কী এনেছেন?’
সূর্য বানু আঁচলের নিচ থেকে ছোট্ট একটি পিতলের বাটি বের করল। তাতে পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা। সতেজ সরিষার তেল মাখানো ভর্তার সুগন্ধ ম-ম করতে লাগল।
সূর্য বানু বলল, ‘আমি গরিব মানুষ রাজাধিরাজ। মাছ-মাংস কেনার সাধ্যি নাই। আপনি যদি আমার এই ভর্তাটুকু একবার মুখে দেন তো আমার খুব ভালো লাগবে।’
রাজা হেসে বললেন, ‘নিশ্চয়। ভর্তার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
তারপর সূর্য বানু চলে গেল।
ধরলা নদীর পাড়ে রাজার পৈতৃক নিবাস। বছরে একবার তিনি এখানে বেড়াতে আসেন। এ সময়টাতে তিনি গ্রামের মানুষের সঙ্গে মেশেন। তাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনেন।
গ্রামের মানুষও রাজাকে কাছে পেয়ে খুব খুশি হয়। তারা যে যতটুকু পারে উপহার দেয় রাজাকে। উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে হাতপাখা, ফুলতোলা রুমাল, নানারকম তৈজসপত্র ইত্যাদি। কেউ কেউ তাদের প্রিয় রাজাকে রান্না করেও খাওয়ায়। খাবারের মধ্যে রয়েছে- পিঠা-পুলি, গুড়-মুড়ি, খই, ক্ষীর, দধি, দুধপান্তা ইত্যাদি। বিনিময়ে রাজাও তাদেরকে নানারকম উপহার এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন।
তো যাই হোক, রাজার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে খাদ্য পরামর্শক তাকে খুবই ঝাল এই খাবারটি না খাওয়ার পরামর্শ দিলেন।
কিন্তু রাজা বললেন, ‘আমি ওই বৃদ্ধাকে কথা দিয়ে ফেলেছি।’
তখন খাদ্য পরামর্শক বললেন, ‘আচ্ছা বেশ। তাহলে শুধু একবার মুখে দিবেন। ভুলেও দ্বিতীয়বার নয়।’
রাজা বললেন, ‘আচ্ছা।’
রাজার খাদ্য পরীক্ষক দুজন। তারা প্রথমে এক চিমটি করে ভর্তা মুখে দিল। স্বাদের আতিশয্যে তারা একে অপরের দিকে এমনভাবে তাকাল যার অর্থ হলো, আহ, এ যে দেখছি অমৃত!
অবশেষে রাজার বোরো চালের ভাত দিয়ে ভর্তা খাওয়ার পালা।
শুকনো মরিচের ঝাল এবং পেঁয়াজ-সরিষার ঝাঁজে রাজার নাকের ডগা রীতিমতো লাল হয়ে উঠল।
অবস্থা বেগতিক দেখে খাদ্য পরামর্শক ভীষণ চিন্তিত হয়ে বদ্যি-কোবরেজ ডাকার কথা ভাবতে লাগলেন।
কিন্তু রাজা তার দিকে খুবই প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকালেন। তাতে খাদ্য পরামর্শক নিশ্চিত হলেন, বদ্যি-কোবরেজ ডাকা লাগবে না।
বিধাতার অশেষ কৃপায় এ যাত্রায় রাজাধিরাজ সহিসালামতেই রইলেন।
কিন্তু প্রাসাদে ফেরার পর রাজার মুখের রুচি সম্পূর্ণ উবে গেল। তিনি কিছুই আর মুখে তুলতে পারলেন না। ফলস্বরূপ কদিনেই তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ল। মেজাজ হয়ে গেল খিটিমিটি।
রাজার পরিবারবর্গ এবং প্রাসাদের সমস্ত কর্মচারীর দুঃচিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেল।
অতি শিগগিরই রাজাকে বদ্যি-কোবরেজ দেখানো হলো। রুচির এই পরীক্ষা। ওই পরীক্ষা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।
হঠাৎ একদিন রাজা স্বয়ং পাচককে ডেকে সূর্য বানুর মতো করে পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা বানানোর আদেশ দিলেন।
পাচক চটজলদি পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা বানিয়ে রাজাকে খেতে দিল।
কিন্তু না, পাচকের ভর্তায় তার রুচি ফিরল না।
অবশেষে রাজা গ্রামের সূর্য বানুকে রাজপ্রাসাদে আনার নির্দেশ দিলেন।
সঙ্গে সঙ্গে একদল প্রহরী ছুটল সূর্য বানুর বাড়ির উদ্দেশে।
তারা ঘোড়া ছুটিয়ে ধরলার ধারে হাজির হলো এবং সূর্য বানুকে তৎক্ষণাৎ রাজদরবারে যাওয়ার জন্য তাড়া দিল।
সূর্য বানু হকচকিয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে ভাবতে লাগল, ভর্তার কারণে কি রাজা তার উপর নাখোশ হয়েছেন? আর সে কারণে তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য এতগুলো প্রহরী পাঠিয়েছেন?
এর মধ্যে প্রহরী তাকে তৈরি হওয়ার জন্য আর একবার তাড়া দিল।
সূর্য বানু ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো। ভাবতে লাগল, যা আছে কপালে তাই হবে। রাজার আদেশ তো আর অমান্য করা যাবে না। যেতে হবে।
সূর্য বানু তৈরি হয়ে নিল।
প্রহরীরা তাকে রাজদরবারে নিয়ে গেল।
সূর্য বানু রাজার জন্য পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা বানাল।
সেই ভর্তা খেয়ে রাজার রুচি কিছুটা ফিরল বটে কিন্তু তিনি সেই গ্রামের ভর্তার স্বাদ পেলেন না।
রাজপ্রাসারের রাজন্যবর্গের চিন্তা ঘুচল। যদিও পদ হারানোর ভয়ে প্রধান পাচকের কপালের চিন্তার বলি রেখা ফুটে উঠল।
রাজা সূর্য বানুর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলেন।
যথারীতি সূর্য বানু দুরু দুরু বক্ষে রাজার সঙ্গে দেখা করল।
রাজা বললেন, ‘কীভাবে গ্রামের ভর্তার স্বাদ পাওয়া যাবে বলুন তো?’
সূর্য বানুর ভয় কাটল। সে হেসে বলল, ‘তাহলে তো আপনাকে গ্রামে যেতে হবে?’
– ‘কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। কারণ আমি গ্রামে গেলে আমার রাজ্য অচল হয়ে পড়বে।’
সূর্য বানু বলল, ‘তাহলে আমি গ্রাম থেকেই ভর্তা বানিয়ে পাঠাব।’
রাজা খুশি হয়ে বললেন, ‘তবে তাই হোক!’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়