ডিএমপি কমিশনার : স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ থাকলে মামলা নয়

আগের সংবাদ

ইইউ-চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অঙ্গীকার > ৫০ বছরেই ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ : এক হাজার কোটি ডলার তহবিলের নিশ্চয়তা, উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল ও দুর্বলতার সুযোগ নেয় অপশক্তি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সম্প্রতি কুমিল্লা, পীরগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও নোয়াখালীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে- তার পেছনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে দোষারোপের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে নিজ দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেও দায়ী করছেন দলটির নেতারা। নেতাদের কারো কারো মতে, যেসব স্থানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এবং নানা গ্রুপিংয়ে দ্বিধাবিভক্ত সেখানেই জামায়াত-বিএনপি আশপাশ থেকে লোক এনে হামলার ঘটনা ঘটায়। তবে তৃণমূলের এসব সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে দলকে আরো শক্তিশালী করার কথাও বলছেন তারা। আবার কারো কারো মতে, আওয়ামী লীগের কারণেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বারবার পিছু হঁটতে বাধ্য হচ্ছে। তারা কখনোই এদেশে সফল হতে পারবে না। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের কোনো কোনো নেতা আবার এই হামলার জন্য প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের মতে পূর্বে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় বিচার না হওয়ায় বারবার হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ফলে নানা ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ। আর এসব

গ্রুপ-উপগ্রুপের মাধ্যমে কৌশলে ক্ষমতাসীন দলে জায়গা করে নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরসহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের গ্রুপ ভারি করতে দলে এদের জায়গাও করে দিচ্ছেন। এরা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে খুব একটা অবগত নয়। তারা আসে তাদের নিজেদের দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে। ফলে কোথাও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাম সেখানে চলে আসে। যা ক্ষমতাসীন দলটিকে বিব্রত করছে প্রতিনিয়ত। আর এসব ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে সহিংসতার হোতা হিসেবে নাম এসেছে কথিত ছাত্রলীগ নেতা সৈকত মণ্ডলের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকত কারমাইকেল কলেজের ছাত্র নন। অথচ ওই কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। গুঞ্জন আছে সৈকতের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের যোগসাজশের। তার সহযোগিতায় পাশ্ববর্তী গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ি থেকে জামায়াত-শিবিরের লোকজন এসে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। আর সৈকত রবিউল নামের একজনকে দিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলায় উসকানিও দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, পীরগঞ্জের ওই এলাকাটিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ আছে। ফলে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সেই সুযোগটা নিয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এসেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম। সেই ঘটনায় হওয়া মামলার চার্জশিটভুক্ত তিনজন আসামি এবার ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পান। তিনজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি বর্তমানেও চেয়ারম্যান। তারা হলেন আতিকুর রহমান আঁখি, আবুল হাসেম ও মো. আক্তার মিয়া। পরে অবশ্য তাদের মনোনয়ন বাতিল করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। সেসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষমতাসীন দলের দুই সাংসদের বিরোধের কথাও বেশ আলোচিত ছিল।
এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একটি কর্মসূচিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু কোনো বিচার হয় না। আজও এই ধারা অব্যাহত আছে। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে সাম্প্রদায়িক শক্তি উৎসাহিত হচ্ছে। আর ১৪ দলের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এই হামলায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক অবশ্য বলছেন, কিছু কিছু এলাকায় আমাদের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। এই সুযোগটা নেয় সুবিধাবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। কিন্তু দল ও দেশের প্রয়োজনে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামে। অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধ থাকলে সাম্প্রদায়িক শক্তি এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারত না- এমন বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পুরো বিষয়টা সঠিক নয়। বিএনপি-জামায়াত তথ্য সন্ত্রাস আর উম্মাদনার মাধ্যমে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানার কথা নয়। হামলার পরপরই সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে বলেই তারা পালিয়ে গেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করেছে। হাজীগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অপশক্তিকে দমন করতে পেরেছে। দলের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছে। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ফলে হাজীগঞ্জে তারা সফল হতে পারেনি। আর পীরগঞ্জে যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেটা একেবারেই নিভৃত পল্লী। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়েছে। তারপরও ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ২০১৩ সালে নরঘাতক সাঈদীকে চাঁদে দেখার কল্পকাহিনী থেকে শুরু করে সম্প্রতি সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেসব স্থানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, গ্রুপিংয়ের কারণে দ্বিধাবিভক্ত অথবা স্থানীয় মূল নেতা অহঙ্কারী, দাম্ভিক, অতি আত্মবিশ্বাসী বা আপসকামী দুর্বল চরিত্রের সেসব স্থানে জামায়াত-বিএনপি আশপাশ থেকে লোকবল এনে সর্বশক্তি নিয়োজিত করে এসব হামলা চালায়। এবারের হামলাও এর ব্যতিক্রম নয়। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ঐক্যবদ্ধ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি ব্যতীত কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই দেশবিরোধী উগ্র অপশক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব নয়।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত। কিছু কিছু এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। দলের অভ্যন্তরীণ কিছু নেতার মতবিরোধ বা কোন্দলের কারণে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত ও শিবির পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার চাপে থাকে। এই বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বুঝতে পেরে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা এখন সেই কাজটিই করছি। বিভিন্ন সময়ে যারা দলে অনুপ্রবেশ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করছি। নতুন নতুন যেসব কমিটি হচ্ছে, সেগুলোতে যাতে কোনোভাবেই বিতর্কিতরা ঠাঁই না পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়