ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঈশ্বরদীর সন্তান ডা. কামরুল : বাবার সম্মানে পারিশ্রমিক ছাড়া এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : জীবনে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডা. কামরুলের বাবা আমিনুল ইসলাম আমিন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। পিতৃহারা সংসার ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কামরুলকে পার করতে হয় শিক্ষাজীবন। সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনযুদ্ধে জয়ী একটি নাম ডা. কামরুল ইসলাম। কিডনি প্রতিস্থাপনে মানবসেবায় এখন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঈশ্বরদীর কৃর্তী সন্তান ডা. কামরুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার সম্মানে বিনা পারিশ্রমিকে ১ হাজার ৪টি কিডনি প্রতিস্থাপন ও ফলোআপ করছে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। ডা. কামরুলের তত্ত্বাবধায়নে প্রায় ১০০ রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন। স্বল্পমূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ফলোআপ করেন।
২০০৫ সাল থেকে নিজ উদ্যোগে কিডনি রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেন। ২০০৭ সাল থেকে ৩০ জন করে নিয়মিত ডায়ালাইসিস শুরু করেন। রোগীদের আগ্রহের কারণেই প্রধান পেশা হিসেবেই কাজটি শুরু করে ডা. কামরুল। প্রথম রোগী সার্থক হওয়ায় বেড়ে যায় রোগীর আগ্রহ। প্রথম তিন বছর শুক্রবার সকাল থেকে শুরু করে সারা দিন চলে এই কাজ।
সহকর্মীরা ছুটি না নিয়ে এই কাজে যোগ দেন। কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২০১১ সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন কামরুল। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৪টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপনে সব রোগীর ফলোআপ পরীক্ষা করা হচ্ছে বিনামূল্যে। প্রতি মাসে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ফলোআপে আসেন এখানে। একটি রোগীর প্রতি ফলোআপে খরচ আসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এমনকি রিপোর্টটি দেখতেও খরচ নেয়া হয় না।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, কুরবানির খাসি ও গরুর কিডনি দিয়ে পরীক্ষা চালাই কীভাবে সেলাই দেব? তা প্র্যাকটিস করেছি অপারেশন থিয়েটারে বসে বসে। দেখি যে ধমনি, শিরা কেমন থাকে? যেন মানুষের দেহে পরে তা করতে পারি। সবে মাত্র এফসিপিএস করে এসেছি। এর্ডিনবরা রয়েল কলেজ থেকে এফআরসিএস পাস করে পরে ইউরোলজিতে ৫ বছর মেয়াদি এমএস প্রোগ্রাম করে জাতীয় কিডনি ও ইউরোলোজি হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করি। যখন আমি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি পেলাম, তখন দেখলাম আমাকে করতেই হবে। জোয়াল ঘাড়ে উঠিয়ে দিয়েছে। সব সিনিয়র সার্জন ও বন্ধু চিকিৎসকদের উৎসাহে ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে কিডনি প্রতিস্থাপন কাজটি করি। টাকার প্রশ্নে এই গুণী চিকিৎসক ভোরের কাগজকে বলেন, টাকা নেইনি তবে যে সম্মান পাচ্ছি তার মূল্য আমার কাছে অনেক কোটি টাকার চেয়ে বেশি দামি।
গুণী এই চিকিৎসকের মা রহিমা খাতুন জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাগ্রোনোমিস্ট আমার স্বামী আমিনুল ইসলাম আমিনকে পাবনার ঈশ্বরদী রোডের ওয়াপদা গেটের সন্নিকটের বাড়িতে ডেকে এনে রাজাকার-আলবদর, বিহারিরা বেয়নেট ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা ও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় তারা বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে। আমার ছোট ছেলের জন্মের তিন দিনের দিন এ ঘটনা ঘটে। আমি আমার স্বামীর লাশটিও দেখতে পারিনি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিরাশ না হয়ে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছি। বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে প্রথম সন্তান ওয়ালিউর রহমান মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমার মেজো ছেলে কামরুল ইসলাম আজ দেশের একজন গুণী চিকিৎসক। তৃতীয় সন্তান জাহিদুল ইসলাম প্রকৌশলী হলেও দুরারোগ্য ক্যান্সারে মারা যায়। চতুর্থ সন্তান রাজিউল ইসলাম প্রকৌশলী। বর্তমানে কর্মসূত্রে থাইল্যান্ডে বসবাস করেন।
অধ্যাপক কামরুল ইসলামের শিক্ষা জীবনের একজন শিক্ষকই বেঁচে আছেন। তিনি পাকশি চন্দ্র প্রভা উচ্চ বিদালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আহাদ। তিনি বলেন, স্কুল জীবনে প্রখর মেধার অধিকারী ছিল কামরুল। খাতা দেখতে গিয়ে কোথায় লাল কালি দেয়ার সুযোগ পাইনি। সে আমার ছাত্র। সে জন্য নিজেকে গর্ববোধ করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়