ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের : প্রবাসী আয় কমছেই

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস শুরুর পর রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে যে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছিল, তা দিন দিন কমছে। প্রবাসী আয়ের ধারায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। টানা চার মাস ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমেছে। সদ্যসমাপ্ত অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অঙ্ক গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। আগের মাস সেপ্টেম্বরের চেয়ে কম এসেছে ৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচক কমেছে ২০ শতাংশ। আগামী দিনে তা আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। এখন ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে ১৬৪ কোটি (১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারি শুরুর পর বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অবৈধ পথে আয় আসাও বন্ধ হয়। এ কারণে সব আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে শুরু করে। এতে প্রবাসী আয়ে নতুন নতুন রেকর্ড হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। এখন যোগাযোগব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। আয়ও কমতে শুরু করেছে। করোনায় প্রবাসীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা এখন বোঝা যাবে। আবার জনশক্তি রপ্তানির চিত্রও সুবিধাজনক নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মে মাসে তা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে ওঠে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়জুড়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রথম চার (জুলাই-অক্টোবর) ৭০৫ কোটি ৫০ লাখ (৭.০৫ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই চার মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোভিডের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় এতদিন হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসেনি। সেটাই ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে। সে কারণে প্রবাহ বেড়েছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় প্রবাসীদের খরচ বেড়েছে। ভ্রমণ-শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করছেন তারা। এ কারণেই আগের মতো পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না। আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ইতিবাচক ধারা বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। তিনি বলেন, এখন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি পাঠানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ অনেক শ্রমিক চলে এসেছেন। আবার যাওয়াও কমে গেছে। এভাবে চললে প্রবাসী আয় আরো কমবে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা সরকার অব্যাহত রেখেছে। রেমিট্যান্স কমায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভেও প্রভাব পড়েছে। গতকাল সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আমদানি বাড়ার পরেও গত ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১৪৪ কোটি ৮০ লাখ (প্রায় ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন) ডলার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ঋণ রিজার্ভে যোগ হওয়ায় এক লাফে তা বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ থেকে প্রয়োজনীয় ডলার চলে যাওয়ায় এক মাসের ব্যবধানে তা আরো কমে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। রপ্তানি বাড়ায় গত কয়েক দিনে অবশ্য কিছুটা বেড়ে ৪৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়