ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

কপ-২৬ : প্রধানমন্ত্রীর চার দফা : গ্রহকে বাঁচাতে প্রয়োজন সমন্বিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি, গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড থেকে : : বিশ্বকে বাঁচাতে গøাসগোতে চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক দূষণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক ৪৭ শতাংশ, অথচ জলবায়ু বিপর্যয়ের পরিণতিতে সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ সালেই ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়। গত সাত বছরে জলবায়ু মোকাবিলা সংক্রান্ত খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে একটি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। তিনি জানান, সম্প্রতি আমরা একটি উচ্চাভিলাষী ও সময়োপযোগী এনডিসি জমা দিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ সৌর জ¦ালানি কর্মসূচি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি কর্মসূচি। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট জ¦ালানির ৪০ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। ১২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাতিল করেছি। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির দেশ হয়ে ওঠার পথে আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। বলপ্রয়োগে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানের ফলে পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব তৈরি হচ্ছে, আমরা তা মোকাবিলার চেষ্টা করছি।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি-২০ এর চেয়ার হিসেবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে দরিদ্রতম যে ৪৮টি দেশ সবচেয়ে বেশি পর্যদস্তু অথচ বিশ্বে কার্বন নিঃসরণে যাদের অবদান মাত্র শতকরা ৫ ভাগ, তাদের স্বার্থ তুলে ধরছি। তাদের অর্থায়ন চাহিদার জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে স্বীকৃতি দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ঢাকায় গেøাবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপ্টেশনের দক্ষিণ

এশীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে আমরা সেরা অনুশীলন ও জ্ঞান বিনিময়ের কাজ করছি। সিবিএফের পক্ষ থেকে একটি জরুরি জলবায়ু চুক্তি গঠনের জন্য তাগিদ দিচ্ছে বাংলাদেশ।
সম্মেলনে জলবায়ু বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তাব চারটি হলো- ১. গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী বড় দেশগুলোকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতের ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে এক হাজার কোটি ডলার দেয়ার যে অঙ্গীকার করেছে উন্নত দেশগুলো, তা প্রতিপালন করতে হবে। ৩. সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলোর সাশ্রয়ী মূল্যে বিশুদ্ধ ও সবুজ প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। সিভিএফ দেশগুলোর উন্নয়ন-চাহিদাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ৪. ক্ষয়ক্ষতির বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা ও খরার কারণে জলবায়ু অভিবাসী যারা, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাই-লেভেল ডিসকাসন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ : এর আগে সকালে স্কটল্যান্ডের গøাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাই-লেভেল ডিসকাসন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুু পরিবর্তন এখন একটি বৈশ্বিক, আন্তঃসীমান্ত সমস্যা। এর মারাত্মক পরিণতি থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়। তিনি বলেন, জলবায়ু দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং এই সবের প্রভাব নাজুক দেশগুলোকে অপূরণীয় ক্ষতির অগ্রভাগে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ¦ালানি, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেন। যা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, এই গ্রহ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে সবাইকে জরুরি এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সিভিএফ সদস্য দেশ কমনওয়েলথের সদস্য এবং এসব দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন এবং অবদানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যৌথ প্রচেষ্টা সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। সিভিএফের চেয়ার শেখ হাসিনা সিভিএফ এবং কমনওয়েলথের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার জন্য পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। এতে তিনি বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই, সবুজ এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অর্জনে আমাদের মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নেয়া, গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর বাড়াতে হবে।
শহরজুড়ে পরিবেশবাদী বিক্ষোভ : গøাসগো শহরের মূল কেন্দ্র থেকে মাইল দেড়েক দূরে ক্লাইড নদীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন যে বিশাল ভবনে (এক্সিবিশন সেন্টার) জলবায়ু সম্মেলন চলছে, সেখানে সব মিলিয়ে বিশ্বের ৩০ হাজারের মতো মানুষ হাজির হয়েছেন পৃথিবীকে বাঁচাতে। অন্যদিকে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে এবং গøাসগো শহরের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ হঠাৎ জড়ো হয়ে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ করছেন কট্টর পরিবেশবাদীরা। কেউ সেøাগান দিচ্ছেন, কেউ গান গাইছেন, কেউবা কার্বন ডাই অক্সাইড বেশি নিঃসরণসহ পরিবেশ দূষণের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে গালিগালাজ করছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা বা ডব্লিউএমওর নতুন একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সাল ছিল এশিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ বছর। ১৯৮১-২০১০ সময়কালীন গড় যে তাপমাত্রা এশিয়ায় ছিল, তার চেয়ে ২০২০ সালের তাপমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর এর ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ এবং অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। অন্যদিকে জাতিসংঘের আরেকটি রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর দেশগুলো স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে পরিকল্পনা করেছে তাতে ২০৪০ সাল নাগাদ বর্তমানের তুলনায় নিঃসরণ বাড়বে ১৬ শতাংশ। ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ১৮৫০ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে, যার অর্থ মানব সভ্যতা মহাবিপর্যয়ে পড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়