ভিসি এয়ার মার্শাল নজরুল : ওবিই হচ্ছে জ্ঞানগর্ভ ও চিন্তা উদ্দীপক কর্মশালা

আগের সংবাদ

টানা ৪ জয়ে সেমিতে পাকিস্তান

পরের সংবাদ

আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে প্রোটিয়া বধে মরিয়া টাইগাররা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টানা তিন ম্যাচ হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রা প্রায় শেষ বাংলাদেশের। তবে এখনো আসরে দুই ম্যাচ বাকি টাইগারদের। দেশে ফেরার আগে অন্তত এই দুই ম্যাচে জয় নিয়ে ফিরতে চান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারানো টাইগারদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে এই দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই। এদিকে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বেঁচে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। বাংলাদেশকে হারাতে পারলে সেমিফাইলের পথটা পাকাপোক্ত হবে তাদের। আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বিকাল ৪টায় দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা। টাইগাররা ১৭ সদস্যের দল নিয়ে বিশ্বকাপ অভিযানে গেলেও পরে সেটি কমে আসে ১৬ জনে। ১৫ জনের মূল স্কোয়াডের বাইরে ছিলেন একমাত্র রুবেল হোসেন। কিন্তু মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইনজুরিতে কপাল খুলে যায় রুবেলের। মূল দলে ঢুকে পড়েন তিনি। একদিন আগেই বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান। এরমধ্যে এবার নিশ্চিত হয়েছে, নুরুল হাসান সোহানও খেলতে পারছেন না আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। চোটে মাঠের বাইরে তিনি। এ অবস্থায় সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া টাইগার স্কোয়ার্ড এখন ১৩ সদস্যের। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ দুই ম্যাচে দারুণ বিপাকে দল। আর একজন ইনজুরিতে পড়ে গেলে একাদশ গড়াই তো কঠিন হয়ে যাবে। এরমধ্যে গতকাল সুখবর মিলল। বিশ্বকাপে অভিষেক হয়ে যাচ্ছে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ইনজুরিতে কপাল খুলল এই তরুণের। গতকাল হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়ে দিলেন একাদেশে সৌম্য সরকার আর লিটন কুমার দাস টিকে যাচ্ছেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছে মাত্র একবার। সেটা ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে। প্রথম দেখায় প্রোটিয়ারা বাংলাদেশকে হারিয়েছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ টাউনে এদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১৪৪ রানে গুঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৮.৫ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছে ছয়বার। সব ম্যাচেই হারের স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের পরে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গের সে ম্যাচে আব্দুর রাজ্জাকের বোলিং নৈপুণ্যে প্রোটিয়াদের ১১৮ রানে বেঁধে ফেলে টাইগাররা। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেদিন ১২ রানের ব্যবধানে হারেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বল হাতে বাংলাদেশের সাবেক স্পিনার রাজ্জাক ১৬ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৪ উইকেট। এরপর ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাটিতে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারো ঘরের মাঠের ফায়দা তুলতে পারেনি টাইগাররা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ৫২ রান এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৩১ রানের ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ পান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু কোনো ম্যাচেই জ¦লে উঠতে পারেনি টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে ২০ রানে হারের পরে দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৩ রানের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় দুর্বল প্রতিপক্ষ, সে পরিসংখ্যান ফুটে উঠেছে এসব ম্যাচেই। তার ওপর চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পারফরম্যান্স ঝলক দেখাতে পারছে না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনী। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ যেখানে শুরু করেছিল, আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে থেকে সেখানে এখন তিন ধাপ নেমে বাংলাদেশ অবস্থান করছে র‌্যাঙ্কিংয়ের নয়ে। মূল পর্বে তিন ম্যাচের সবগুলোতে হেরে আসরে বাংলাদেশের যাত্রাও হয়ে এসেছে ক্ষীণ। তবে বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টিতে একেবারে দুর্বল দল, এমনও নয়। ঘরের মাঠে তারা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে যথেষ্ঠ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করেছে। আবার সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতার জোর সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশেরই। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টাইগাররা লঙ্কানদের ১৭২ রানের বড় লক্ষ্যে বেঁধে দেয়। প্রতিপক্ষের চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচ জয়ের খুব কাছেই ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু বোলিং ব্যর্থতা আর ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসে ম্যাচটি হাত ফসকে যায় বাংলাদেশের। প্রাণ পাওয়া লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা ও বানুকা রাজাপাকসের অনবদ্য অর্ধশতাধিক ইনিংসের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের জয় পান কুমার সাঙ্গাকারার উত্তরসূরিরা। এরপর আসরে আর লড়াইয়ে ফিরতে বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২৪ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা। বিশ্বকাপের হট ফেভারিট ইংল্যান্ড মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৪.১ ওভারেই সে লক্ষ্য টপকে যায়। তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জেতা ম্যাচই হাতছাড়া করে সেমিফাইনালের স্বপ্ন থেকে ছিটকে যায়। প্রথমে ব্যাট করতে নামা উইন্ডিজকে ১৪২ রানে বেঁধে ফেলে টাইগার বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় সে ম্যাচ বাংলাদেশ হারে ৩ রানের ব্যবধানে। ম্যাচ জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও এভাবে পরাজয়ের আক্ষেপ চতুর্থ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী ঘোচাতে পারবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে বিশ্বকাপে যাত্রাটা ভালো না হলেও সেমিফাইনালের পথে ভালোভাবেই টিকে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়ারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারে ৫ উইকেটের ব্যবধানে। তবে জয় পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল অজিদের। ১১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৪ ওভার পর্যন্ত লড়াই চালাতে হয় ম্যাক্সওয়েলদের। এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এরপর তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটের ব্যবধানে হারায় টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বাধীন দলটি। র‌্যাঙ্কিংয়েও ভালো অবস্থানে তারুণ্যনির্ভর দলটি। বাংলাদেশের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন তাদের অবস্থান সেরা পাঁচে।
র‌্যাঙ্কিং বা পরিসংখ্যান- সব দিক দিয়েই বাংলাদেশের চেয়ে আজকের ম্যাচে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ভুললে চলবে না বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের হারিয়েছিল। তাছাড়া টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বাধীন দলটি, টাইগারদের তুলনায় অনভিজ্ঞ। তবে বাংলাদেশের চিন্তার কারণ প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা ও স্পিনার তাবরিজ শামসি। এই দুই বোলারই যথেষ্ট সাকিবদের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিতে।
তাছাড়া ডেভিড মিলার, রাসি ভ্যান ডার ডাসেনের ব্যাটিংয়েও বাড়তি নজর রাখতে হবে টাইগার অধিপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। এর বাইরে বাংলাদেশের চিন্তার বড় কারণ যেটি, ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সোহানের ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের বড় অস্ত্র সাকিবকে ছাড়া প্রোটিয়া বধের মিশন রিয়াদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটে পড়ে সাকিবের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়ে যায়।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ খেলার পরেই ইনজুরিতে পড়ে দেশে ফিরে আসেন টাইগার পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিন। তিন টাইগারকে হারিয়ে ম্যাচে জয় নিয়ে ফেরা রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার অধিনায়ক রিয়াদের জন্য। তবে বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২১ রানের জয়। ওই আসরে প্রথম ম্যাচেই টাইগার থাবায় থমকে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়