ডেঙ্গুতে ৯১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

পরের সংবাদ

সিলেট পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি : পর্ব-৩ > মাসে দুই কোটি টাকার ওপরে অবৈধ লেনেদেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস যেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে এই অফিসে সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষ। আর দুর্নীতির মাধ্যমে মাসে অন্তত দুই কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাদের বিরুদ্ধে।
পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি আর জনদুর্ভোগের একাধিক অভিযোগ ওঠার পর অনুসন্ধানে নামে ভোরের কাগজ। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পরিচালক হিসেবে এ কে এম মাজহারুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পাসপোর্টপ্রতি ঘুষের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর টাকা উত্তোলন ও বণ্টনের পুরো দায়িত্ব সামলান সুপারিন্টেন্ডেন্ট এস এম জাকির হোসেন। প্রতিটি পাসপোর্টে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দিনে প্রায় ৯ লাখ টাকা নেয়া হয় সেবাপ্রত্যাশী অন্তত সাড়ে চারশ মানুষের কাছ থেকে।
অভিযোগ পাওয়া যায়, দালালের মাধ্যমে টাকা না দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিলে সেই আবেদন প্রথম বাছাইয়েই ফেরত দেয়া হয়। এমন সব কারণ দেখানো হয় যাতে বাধ্য হয়েই তাকে দালালের কাছে যেতে হয়। আর দালালরা একটি বিশেষ চিহ্ন (যা মার্কা নামে পরিচিত) দিয়ে আবেদন দিলে তা গ্রহণ করা হয় অনায়াসেই। সারাদিন পাসপোর্টের ফাইল জমা গ্রহণের পর বিকালে মার্কা চিহ্নিত ফাইলগুলো আলাদা করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট মার্কা দেখে দেখে দালাল চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওইদিন বা তার পরের দিন দালালদের জানিয়ে দেয়া হয় তাদের ফাইলের সংখ্যা এবং টাকার অংক। বুধবার পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনের বিপরীতে ট্রাভেল এজেন্ট ও দালালদের কাছ থেকে টাকা তোলেন পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী খলিল, গোলাপ, মোস্তফা ও আনসার সদস্য জামাল। যার জন্য এরাও পান নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন। এরপর বৃহস্পতিবার হয় টাকার ভাগবাটোয়ারা।
মার্কা বাণিজ্যের পাশাপাশি পাসপোর্টের ফরম ফিল-আপের সামান্য কিছু ভুল সংশোধন হয় চড়া দামে। সরকারি বিধি অনুযায়ী পাসপোর্টের ভুল সংশোধনে কোনো ফি লাগার কথা নয়। কিন্তু সিলেট পাসপোর্ট অফিসে ভুল সংশোধনের ফি শুরু হয় পাঁচ হাজার টাকা থেকে। প্রকারভেদে তা সংশোধনে ফি হাঁকা হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা, এমনকি কখনো ৫০ হাজারও লাগে। এছাড়া বর্তমানে সিলেট পাসপোর্ট অফিসে এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) নবায়নের আবেদন জমা না নেয়া হলেও ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে পাওয়া যায় নতুন এমআরপি। অভিযোগ রয়েছে, এক লাখ-দুই লাখ টাকায় পাসপোর্টে প্রবাসীদের বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়েও দেয়া হয়। সব মিলিয়ে মাসে দুই কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য চলে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে।
সিলেটের একাধিক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ কে এম মাজহারুল ইসলাম পরিচালক হিসেবে আসার পর থেকেই মূলত সমস্যার শুরু। আগে যেখানে ট্রাভেল এজেন্ট লাগতই না, সেখানে এখন ট্রাভেল এজেন্ট ছাড়া কোনো ফাইলই জমা হয় না। এমনকি এজেন্টদের নিজেদের আত্মীয়স্বজনের পাসপোর্ট আবেদনের জন্যও ঘুষ দিতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন- আটাব এর সিলেট অঞ্চলের সাবেক সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, এমন অভিযোগ ভূরিভূরি। আমি নিজেও বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি। ট্রাভেল ব্যবসা করি বলে প্রতিদিনই পরিচিতজনরা আসেন নানা অভিযোগ নিয়ে। তিনি বলেন, আগে তো ট্রাভেল এজেন্ট লাগতোই না। এখন নতুন পরিচালক আসার পর থেকে নির্দিষ্ট ট্রাভেল এজেন্টের ‘মার্কা’ ছাড়া পাসপোর্ট জমা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা না চাইলে আসলে এই ভোগান্তির কোনো প্রতিকার নেই।
জানা যায়, এ কে এম মাজহারুল ইসলামের আগে ২০১১ সালের জুলাই মাসে সিলেট পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। তবে দুর্নীতির অভিযোগে তিন মাসের মাথায়ই স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে অন্যত্র চলে যান। ফের ২০১৭ সালের এপ্রিলে উপপরিচালক হিসেবে সিলেট আসেন। ৯ মাস পর আবারো একই অভিযোগে বদলি করা হয় তাকে। পরিচালক হিসেবে সিলেটে ২০২০ সালে অক্টোবরে আবারো সিলেট আসেন। সিলেট এসেই ফের স্বরূপে ফেরেন তিনি। দুর্নীতির অংশ না হওয়ায় এক রকম কর্মহীন করে রাখা হয়েছে বর্তমান সহকারী পরিচালককেও। দুর্নীতির নানা অভিযোগের তদন্ত করতে ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি সিলেট আসে অনুসন্ধানে। তবে অদৃশ্য কারণে সেই তদন্তও আলোর মুখ দেখেনি।
এসব ব্যাপারে আলাপ করতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তা রিসিভ করেননি সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরচিালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। তার মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়