ডেঙ্গুতে ৯১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

পরের সংবাদ

পদ্মার পাড় থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের হিড়িক : হুমকির মুখে বাড়িঘর ও কৃষিজমি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : পদ্মার চরাঞ্চলের বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ল²ীনগর এলাকার নদীর ঘাটে ভিড়ানো ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এসব নৌকায় রয়েছে বালু তোলার কাজে ব্যবহারযোগ্য বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। অনেকের কাছে এগুলো ড্রেজার মেশিন নামে পরিচিত। নৌকায় এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে পদ্মার তলদেশ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। বালু তোলার এই হিড়িক চলছে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ল²ীনগর এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, সকালের দিকে পদ্মার ঘাটে এসে ভিড়ে এ ধরনের আরো অনেক নৌকা। পদ্মা নদীর কাছে দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলা হলেও প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা নের্তৃস্থানীয় রাজনৈতিকদের কেউ কখনো এ বিষয়ে দেখভাল করতে আসেনি। পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার ফলে বাড়িঘর ও নদীরপাড় হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনে বিনষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনজীবন মারাত্মক সংকটে পড়েছে। নির্ধারিত সীমানাও মানা হচ্ছে না। অবৈধভাবে বোমা মেশিনে বালু তোলার পর সেখান থেকে নৌকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর বাঁকে বাঁকে বোমা মেশিনে পাইপে করে বালু তোলার উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। পরিবেশ অভিজ্ঞদের মতে ড্রেজার কিংবা মেশিনে বালু তোলার শব্দের কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হবে।
সরজমিন নদীর ঘাটে দেখা হয় চকরাজাপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী মেম্বর ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কার কথা কি কমু। হেই (এই) কাজের সঙ্গে অনেকেই জড়িত। নিজেও তো দেখবার পাচ্ছেন, বালু তোলার কারণে জেগে ওঠা চর কীভাবে ভাঙতাছে। কেউ তো ফিরেও চায় না। কারো নাম কইয়া বিপদে পড়তে রাজি নয়। তবে কয়েক মাস ধরেই পদ্মার ভাঙন কম-বেশি চলছে বলে জানান তিনি।’ এতে এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি ও আবাদি জমি-গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের ভাঙনে চলে গেছে চকরাজাপুর গ্রামটি। চকরাজাপুর ইউনিয়নের তিন ভাগের এক ভাগ চলে গেছে নদীগর্ভে।
নদীর তলদেশ থেকে বোমা ও ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখিয়ে ল²ীনগর গ্রামের জামরুল ইসলাম ও পলাশিফতেপুর গ্রামের মোবারক শেখ বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন। স্থানীয় আব্দুস সালাম শেখ ও মিজানুর রহমান বলেন, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নিদিষ্ট সীমানার বাইরে নদীপাড়ের কাছাকাছি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তারা জানান, উপজেলার তিনটি বালুমহাল বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আাবেদন করেছিলেন পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম ফারুক। বালুমহাল তিনটি হলো- উপজেলার কিশোরপুর, চকরাজাপুর ও ল²ীনগর। তার আবেদনে নানা রকম ক্ষতির কথা তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ল²ীনগরসহ পলাশিফতেপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা অনেক প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। প্রশাসনও তাদের কাছে অসহায়। তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বেশ কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বালু তুলছেন। তারা আরো জানান, ছোট-বড় মিলে একটি নৌকায় বালু যায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ফুট। প্রতি ফুট বালুর জন্য দিতে হয় ২ টাকা হিসেবে। আর মাস্তানদের দিতে হয় প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ টাকা। চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ইজারা নেয়া হলেও বোমা মেশিন ব্যবহার করে নদী তীরের কাছাকাছি বালু তোলা মানে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করা। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তবে ৬০ একর জলমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে অন্যান্য স্থানে বালু তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চকরাজাপুর ও ল²ীনগর বালুমহাল ইজারাদার রাজশাহীর কাটাখালী এলাকার সাব্বির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, সব কিছুই তো জানেন ও বোঝেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়