ডেঙ্গুতে ৯১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ২৩ হাজার

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সংঘাত থামছেই না : সংঘর্ষে জড়িতদের তালিকা করছে আ.লীগ, অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে এক মাসে নিহত ৮, নির্বাচনী সংঘর্ষে ৩৮ নিহত

পরের সংবাদ

খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত আত্রাইয়ের গাছিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল মজিদ মল্লিক, আত্রাই (নওগাঁ) থেকে : চলছে কার্তিক মাস। হেমন্তের মাঝামাঝি শীতের আগমনের আগ মুহূর্তে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে নানান প্রস্তুতি নিয়ে গাছিদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার কিছু কিছু স্থানে। অপরিচ্ছন্ন খেজুর গাছগুলোর পুরনো ডালপালা কেটে পরিষ্কারের কাজ কিছুদিন আগেই সম্পন্ন হয়েছে। শীতের তীব্রতা দেখা না দিলেও এরই মধ্যে অনেক গাছি খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
এই শীতকাল গ্রামীণ মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ জীবনে শীত আসে গ্রামাঞ্চলের গাছিদের কাছে ভিন্নমাত্রায় রূপ নিয়ে। সারাদিন এক গাছ থেকে অন্য গাছে এভাবেই কেটে যায় তাদের দিন।
গাছিদের জন্য এই সময়টা হয় অনেক আনন্দদায়ক। কারণ এই গাছই তো গাছিদের অন্ন সংগ্রহের প্রধান আয়। তাদের খেজুর গাছের যতœ না করলে যে রস মিলবে না। আর রস না মিললে গুড় হবে কী করে।
ভোরের ঠাণ্ডায় গাছ থেকে রসের হাড়ি নামিয়ে হিম-শীতল খেজুর রস খাওয়ার স্বাদটা একেবারেই যেন আলাদা। আসলে ভোর বেলায় রস খেলে শীত মনে হয় আরো বেশি জাঁকিয়ে বসে। তবে শীতে শরীর কাঁপানির স্পন্দন যেন চরম মজা আনন্দদায়ক।
শীত লাগে লাগুক তবুও রস খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যত শীতই লাগুক রস খেতেই হবে। ঠাণ্ডা শীতের পরশে এক গøাস বা দুই গøাস রস খাওয়ার পরই কাঁপতে কাঁপতে আরো এক গøাস রস চুমুক দিয়ে বাড়ির উঠানে রোদ তাপানোর আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আত্রাই উপজেলার ১নং সাহাগোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা রুবেল আলী বলেন, খেজুর গাছ প্রায় ৬-৭ বছর বয়স থেকে রস দেয়া শুরু করে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। তবে গাছ যতই পুরনো হয় রস দেয়া ততই কমে যায়।
পুরনো গাছ রস কম দিলেও পুরনো গাছের রসগুলো খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। মাঝ বয়সের গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।
রস সংগ্রহের জন্য কার্তিক মাসে খেজুর গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়। অগ্রহায়ণ মাস থেকেই রস পাওয়া যায়। রসের ধারা চলতে থাকে ফাগুন মাস পর্যন্ত। শীতের সঙ্গে রস ঝরার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
শীত যত বেশি পড়বে তত বেশি রস ঝরবে। রসের স্বাদও তত মিষ্টি হবে। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস হলো রসের ভরা মৌসুম। অগ্রহায়ণ থেকে ফাগুন মাস পর্যন্ত স্থান ভেদে একটি খেজুর গাছে মাসে ১৫-২০ কেজি রস পাওয়া যায়।
গাছিরা গাছ কাটতে ব্যবহার করেন বিশেষ এক ধরনের লোহা দিয়ে তৈরি হাঁসুয়া, দড়ি, আবার হাঁসুয়া রাখার জন্য বাঁশ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এক প্রকার থলি। সে থলি গাছিরা রশি দিয়ে কোমরে বেঁধে খুব যতেœ হাঁসুয়া রেখে এ গাছ থেকে সে গাছে ওঠানামা করে খুব সহজে। গাছ কাটার জন্য গাছি শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোমর বরাবর গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেয়। দড়িটা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
সাধারণত বিকেলে গাছে হাড়ি বেঁধে রেখে যান, সারারাত রসে পূর্ণ হয় কলস।
আর প্রতিদিন খুব ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে গাছ থেকে রসে ভরা হাড়ি (ভাঁড়) নামানো হয়।
গুড় তৈরির জন্য রস জ্বাল দেয়া হয় মাটির জ¦ালায় বা টিনের তাপালে। খুব সকালে রস নামিয়ে এনেই জ্বালানো হয়। জ্বাল দিতে দিতে এক সময় রস ঘন হয়ে গুড় হয়ে যায়। এই খেজুর গুড় কমবেশি সব এলাকায় পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়