মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

সতর্কবার্তার পরও যে কারণে ব্যর্থ পুলিশ : সাম্প্রদায়িক হামলা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ১৬ জেলায় মণ্ডপে হামলা ** ৬ মাসে মামলার তদন্ত শেষের নির্দেশ ** পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে **
কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরিফ পাওয়ার পরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশে পুলিশে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ ও টহল জোরদার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও কয়েকটি জেলায় ঠেকানো যায়নি সাম্প্রদায়িক হামলা। মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়কার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, পুরো ঘটনার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতা দায়ী এবং সক্ষমতা থাকলেও উদ্ধুত পরিস্থিতির কারণে উপস্থিত বুদ্ধির অভাব এবং কিংকর্তব্যবিমুখ হয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্টরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। চট্টগ্রাম রেঞ্জের কয়েকটি জেলা বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত হওয়ায় সেখানে সহিংসতা বেশি হয়েছে। পুলিশ কী কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি তা খতিয়ে দেখছে হেডকোয়ার্টার্স। এ অবস্থায় মণ্ডপে হামলার ঘটনায় ১৬ জেলায় দায়েরকৃত ১১৮টি মামলার তদন্তকাজ ৬ মাসের মধ্যে শেষ করার

নির্দেশ দিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারলে অব পুলিশ (আইজিপি)। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান গতকাল বুধবার ভোরের কাগজকে জানান, পুলিশের সবসময় অপারেশনাল ও অ্যাকশন প্ল্যান থাকে। অপরাধের ধরন বিবেচনায় পুলিশ কাজ করে। অপরাধের রকমফের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেককিছু কয়েক মিনিটের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে। ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উসকানি ছড়ানো হলে তা ভিন্ন রূপ নেয়। কিছু মানুষ যাচাইবাছাই না করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সেই পরিস্থিতির সঙ্গে এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে পরিচিত ছিল না। এখন পরিচিত হচ্ছে এবং মোকাবিলা করছে।
আধুনিক পুলিশ গঠনে কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রযুক্তিতে তারা এগিয়েছে। তবে অপরাধীরাও ধরন পাল্টে প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে এবং পুলিশকে পাল্লা দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সদর দপ্তরের এআইজি (অপারেশন্স) এহসান সাত্তার বলেন, এবার ৩১ হাজার মণ্ডপে পূজা হয়েছে। পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা থাকতেও অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু অঘটন ঘটেছে।
জানা গেছে, দেশের ১৬ জেলার কয়েকটি এলাকায় শারদীয় দুর্গাপূজায় বিচ্ছিন্নভাবে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রæটিগুলো সামনে চলে আসে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহলের পরও কেন ঠেকানো গেল না হামলা? এ নিয়ে পদস্থ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। মণ্ডপের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের ভূমিকাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। উপস্থিত বুদ্ধির অভাবে পুলিশ পেরে ওঠেনি বলে মনে করছেন ডিআইজি পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দিঘিরপাড় মণ্ডপে হনুমান মূর্তির উরু থেকে পবিত্র কুরআন প্রথম হাতে তুলে নেয় কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনওয়ারুল আজিম। এরপর সেই ঘটনা ফেইসবুকে লাইভে প্রচার করেন সৌদি ফেরত ফয়েজ আহমেদ। সেখানে ওসি বক্তব্য দেন। এরপরই পরিস্থিতি ঘোলাটে রূপ নেয়। কী কারণে কার পরামর্শে ওসি ফেইসবুক লাইভে অংশ নিয়েছেন তার তদন্ত চলছে। ‘পুলিশকে একদিকে ব্যস্ত রেখে হামলা চালায় ৭টি গ্রুপ’- নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামের এমন বক্তব্যে কর্মকর্তারা বিব্রত। তার এমন বক্তব্যে পুলিশের চৌকষতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার বক্তব্য বিশ্লেষণ করছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। চাঁদপুরে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানকার পুলিশের দুর্বলতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘোলাটে পরিস্থিতি কুমিল্লা পুলিশ কীভাবে মোকাবিলা করছে তার পর্যবেক্ষণ চলছে। চট্টগ্রাম, ফেনী ও পীরগঞ্জের পরিস্থিতির ব্যাপারেও অনুসন্ধান চলছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (অপারেশন্স) নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা তদারকি করছেন।
এদিকে, মাঠে নামার পরও বিজিবি কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা না পাওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে একাধিক সংস্থা। চেষ্টা করেও বিজিবি কর্মকর্তারা কেন জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি? সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খোঁজখবর করছে। র‌্যাব ও আনসারদের ভূমিকার ব্যাপারে খোঁজখবর করছে মন্ত্রণালয়।
পুলিশ সূত্রমতে, মণ্ডপে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত দায়েরকৃত ১১৮ মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯১১ জনকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৮৩ জনকে। চাঁদপুরে বিভিন্ন এলাকায় ১০ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার জনকে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৩ জনকে। নোয়াখালীতে ২৪ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৬১ জনকে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬২ জনকে। কুমিল্লায় ৯ মামলায় ৭৯২ আসামি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৬ জনকে। ফেনীতে ৪ মামলায় ৬৫০ আসামি, গ্রেপ্তার ১৮। রংপুর ৪ মামলায় ৪১ আসামি, গ্রেপ্তার ৬৪। সিলেটে ২ মামলায় ৭৯২ আসামি, গ্রেপ্তার ২০। চট্টগ্রামে ৭ মামলায় আসামি ৩ হাজার ৮৫০, গ্রেপ্তার ২০১। কুড়িগ্রামে ৬ মামলায় ১ হাজার আসামি, গ্রেপ্তার ৩৯ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ মামলায় ১৫০ আসামি, ১৩ জন গ্রেপ্তার, গাজীপুরে ৩ মামলায় ৬২০ আসামি, গ্রেপ্তার ৪১। কক্সবাজারে ৬ মামলায় ২ হাজার ২৪৩ আসামি, গ্রেপ্তার ১৬। দিনাজপুরে ১ মামলায় ২৮ আসামি, গ্রেপ্তার ৫। মৌলভীবাজারে ৩ মামলায় ১৯ আসামি, গ্রেপ্তার ৬। নাটোরে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা হলেও গ্রেপ্তার নেই। বান্দরবানে ৩ মামলায় ৬৬২ আসামি, গ্রেপ্তার ৯। বরিশালের গৌরনদী থানায় ১০৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জামায়াত ইসলামী সমর্থিত তিনজন কাউন্সিলরসহ সংগঠনটির পাঁচজন নেতাকর্মী রয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তিনজন নেতাকর্মীকে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের সংগঠন যুব ছাত্র অধিকার পরিষদের রয়েছে ১০ জন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানসহ কমপক্ষে ১২ জন, স্বেচ্ছাসেবকদলের একজন, যুবদলের দুজন, ছাত্রদলের একজন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়