মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

শুল্ক কমানোর পরও চড়া চিনির দাম

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দুদফায় আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৭৫ টাকা দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮৬ থেকে ৯০ টাকায়। দুই দফা শুল্ক কমানোর পরও বাজারে চিনির দাম কমেনি। বরং বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, তারা দাম কমিয়ে দিয়েছেন। খুচরা বাজারে দাম কমানোর বিষয়টি নির্ভর করে মিল মালিকদের ওপর।
মিল মালিকরা বরাবরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে বলছেন, দাম না কমলে তাদের কিছু করার নেই। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেই দামেই বিক্রি করছেন তারা। দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরা বাজারে তাদের হাত নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দুষছেন। শুল্ক কমিয়ে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ মাঝখান থেকে ভোক্তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জনগণ যাতে সহনীয় দামে চিনি খেতে পারেন, সে জন্য গত ১৪ অক্টোবর এর আমদানি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে- যা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং করোনা মহামারির মধ্যে দুর্ভোগে পড়া সাধারণ জনগণ বেশি দামেই চিনি খাচ্ছেন। রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ ১০ আমদানি পণ্যের একটি চিনি। ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানোর ফলে এ খাত কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব খোয়া যাবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, জনস্বার্থ বিবেচনা করে চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে, চিনি আমদানি সহজলভ্য হবে এবং ভোক্তা ন্যায্য দামে চিনি খেতে পারবেন। চিনিতে দুইভাবে শুল্ক আদায় করা হয়। অপরিশোধিত (কাঁচামাল) এবং পরিশোধিত (ফিনিক্সড বা প্রস্তুতকৃত পণ্য)। বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির ট্যারিফ ভ্যালু (নির্ধারিত) ৩ হাজার টাকা। এর ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ রয়েছে। অপরদিকে, পরিশোধিত বা সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত চিনির ট্যারিফ ভ্যালু ৬ হাজার টাকা। এই ট্যারিফের ওপর উল্লিখিত হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। মোট আমদানির ৯৫ শতাংশই অপরিশোধিত চিনি- যা মিল মালিকরা আমদানি করে দেশে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারজাত করেন। এর বাইরে কিছু চিনি উৎপাদন করে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপরেশন (বিএসএফআইসি)।
দেশে এখন চিনির বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন জোগান দেয় প্রায় ২ লাখ টন। অবশিষ্ট চিনি সরবরাহ করে বেসরকারি চিনি কলগুলো। এনবিআর বলছে, এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন করে চিনির দাম নির্ধারণ করে সরকার। চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তখন মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৭৫ টাকা দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮৬ থেকে ৯০ টাকায়। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণে স¤প্রতি আবারও চিনির শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
মিল মালিকরা দাবি করছেন, বিশ্ব বাজারে যে হারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে, সে অনুযায়ী শুল্ক-কর কমানো হয়নি। ফলে স্থানীয় বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং চিনির দাম আরো বাড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় থেকে দুই মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ছিল সাড়ে ৩০০ ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫০০ ডলারে। এ সময়ে দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। এ অবস্থায় আমদানি পর্যায়ে চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নতুন করে দাম নির্ধারণের দাবি জানান তারা।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারদের কাছে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। দুই মাস আগেও প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা। সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। ঢাকার পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, পাইকরি বাজারে দাম কমানো হয়েছে। খুচরা বাজারে শিগগিরই চিনির দাম কমবে। বাজার স্থিতিশীল করতে চিনির ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়