মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

রাজবাড়ীতে সিসি ব্লক ধসে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত : ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৩৭৬ কোটি টাকাই জলে!

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে আবার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ১৫০ মিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা। তবে সকাল থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে দুপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ কাজের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে বালির বাঁধের মতো। গত তিন মাসে অন্তত ১৬ দফা ভাঙনে এক হাজার মিটারেরও বেশি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি পানিতে চলে গেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকেই কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।
পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত) শীর্ষক ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘের নদীর ডান তীর বাঁধাইয়ের কাজটি শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট। যেটি দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মোট ছয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে ভিন্ন ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজের দায়িত্ব পায়।
সবচেয়ে বড় সাড়ে চার কিলোমিটার প্যাকেজের কাজটির দায়িত্ব পায় খুলনা শিপইয়ার্ড। তাদের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রগ্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী ছয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই। কাজ শেষ দেখানো হয়েছে চলতি বছরের ৩১ মে। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এখনো কাজ বুঝে নেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আড়াইশ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাষ্য অনুযায়ী কাজ চলার মধ্যেই গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হয় ভাঙন। এ পর্যন্ত ১৬ দফা ভাঙনে এক হাজার মিটারেরও বেশি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। রেহাই পায়নি স্কুলভবন, বসতঘর, ফসলি জমি, গাছপালা ইত্যাদি। সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরসিলিমপুর থেকে সোনাকান্দর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষা কাজের সিসি ব্লকগুলো ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধে ফেলা হয়েছে বড় বড় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ। কিছু কিছু স্থানে ব্লক থাকলেও তা একটির সঙ্গে আরেকটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
গত ৬ অক্টোবর রাজবাড়ীতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক। দৌলতদিয়া থেকে স্পিডবোট যোগে তিনি আসেন গোদারবাজার। পরিদর্শনকালে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে লোহা দিয়ে বাঁধ তৈরি করলেও তা টিকবে না। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের প্রতিও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন। বেশ কয়েকবার অভিযান চালায় পদ্মা নদীতে। এ সময়ের মধ্যে দুইজনকে মোট পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাও করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন করায় ডিজাইন পরিবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে ভাঙন এলাকা সার্ভে করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ডিজাইন ডাটা পাঠানো হয়েছে। ডিজাইন অনুমোদন হওয়ার পর নতুন করে ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাব। ভলিউম বাড়িয়ে এই প্রজেক্টের মধ্যেই হয়ে যাবে। যেসব জায়গায় ক্ষতি হয়েছে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার সেসব জায়গায় মেরামত করবে। ওয়ার্ক অর্ডারের বাইরে এডিশনাল কাজ করালে এডিশনাল পেমেন্ট দেয়া হবে। আমাদের অনেক কাজ হয়নি। প্রকল্প থেকে আমাদের কিছু সেভিংসও আছে। সেগুলো খরচ করে কাজগুলো করাব। আগে অনুমোদন নেব তারপরে কাজ করাব। এ প্রজেক্টে কষ্ট বাড়ার সুযোগ নেই। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ঠিকাদারদের আড়াইশ কোটি টাকার মতো পরিশোধ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৫ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজবাড়ীতে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় নদী বিলীন হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমি। আর কালুখালি, পাংশা উপজেলায় এক হাজার ৯৬০ হেক্টর জমি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়