মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

বেকারত্ব ও শিক্ষাব্যবস্থা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বেকারত্ব একটি বোঝা, একটি অভিশাপ। যে বেকার সেই জানে বেকারত্ব কত কষ্টের কত দুর্দশার। একটি পরিবারে বেকার যুবকটিই কষ্ট ভোগে না, পুরো পরিবারকে তার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সামাজিকভাবেও বেকার যুবকটিকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। ডিগ্রিধারী যে ছেলেটি বেকারত্বের বোঝা নিয়ে দিনের পর দিন কাটায়, তখন তার মেধা ও যোগ্যতা সমাজের কাছে নিষ্ফল ও অকার্যকরী মনে হয়। অনেকেই তো ঠাট্টা করে বলেই ফেলেন, ঠিকমতো পড়াশোনা করেনি বলে চাকরি পাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
যখন একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয় এবং পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, তখন সে ছেলে কিংবা মেয়েটিকে নিয়ে তাদের পরিবার এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীরাও অনেক বড় আশা পোষণ করে থাকেন। তারা ভাবেন যেহেতু সে (ছেলে বা মেয়েটি) একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে পড়াশোনা করছে, সেহেতু সে নিশ্চয় ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে (একটা ভালো সরকারি চাকরি পাবে, অনেকেই এটা মনে করে থাকেন)। কিন্তু এসব স্বপ্ন কিংবা আশা খুব কম ক্ষেত্রেই আলোর মুখ দেখে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীটি যখন চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগে, তখন সে বুঝে পৃথিবীটা কত কঠিন। কত মানুষের কত কথা তাকে হজম করতে হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চেনা মানুষগুলো যেন অচেনা হতে শুরু করে। আমাদের সমাজে আরেকটি জিনিস খুব প্রচলিত, মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে অভিভাবকরা দেখে ছেলের একটি সরকারি চাকরি আছে কিনা, ছেলের আর্থিক অবস্থা কতটা উন্নত! এভাবে দেখতে গিয়ে অনেক সময় পাত্রের ভালো গুণগুলো এসব অভিভাবকের চোখ এড়িয়ে যায়। সবকিছু না দেখে অর্থসম্পদ, চাকরি-বাকরি দেখে অর্থাৎ শুধু আর্থিক অবস্থা দেখে মেয়েদের পাত্রস্থ করায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়েটি ওই ছেলের সঙ্গে দুদিনও ভালোভাবে কাটাতে পারল না। ফলে সৃষ্টি হয় বিয়েবিচ্ছেদের মতো ঘটনা। তাই অভিভাবকদের শুধু আর্থিক দিকটা না তাকিয়ে ছেলের অন্যান্য ভালো গুণ দেখে মেয়ে পাত্রস্থ করা উচিত। মূল কথায় আসা যাক, বেকার সমস্যা আমাদের দেশে দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছেই। যা জাতির জন্য একটি অশনিসংকেত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর দিকে তাকানো যাক। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাদের যে অবস্থান, তা হতাশাজনক। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপ যেন তারই ইঙ্গিত বহন করে। প্রতিষ্ঠানটির একটি জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। এই যখন অবস্থা তখন জাতির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়াটাই স্বাভাবিক।
কর্মসংস্থানে তাদের এত পিছিয়ে থাকার কারণ কী, তা নিয়ে প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা। দরকার কর্মমুখী ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম কারিগরি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার। শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট আরো বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলবিমুখ হয়েছে। তাদের আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালাতে হবে। পড়ালেখা শেষ করে আমাকে একটি সরকারি চাকরিই পেতে হবে- এমন ধারণা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনতে হবে। সবাইকে যে বিসিএস ক্যাডার হতে কিংবা সরকারি চাকরিজীবী হবে এমনটি নয়। কেউ শিক্ষক হবে, কেউ উদ্যোক্তা হবে আবার কেউ হবে সফল ব্যবসায়ী আবার কেউ কেউ জ্ঞানের অন্যান্য শাখায় সফলভাবে বিচরণ করবে। অর্থাৎ যার যেদিকে ঝোঁক, তাকে সে বিষয়ে কাজ করতে দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। তারা যেন চাকরির চিন্তায় চিন্তিত না হয়ে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার দিকে অধিক মনোযোগী হয়। আজকাল দেখা যাচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিংগুলোর দাপটের কাছে প্রকৃত শিক্ষা বড়ই অসহায়। দেখা যায়, অনেকে অনার্সের এক বছর যেতে না যেতেই ব্যাগে করে জব রিলেটিভ বই নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। চাকরির পড়ার মন দেয়ায় একাডেমিক পড়ায় মনোযোগ দেয়ার সময় তাদের অল্পই থাকে। পরীক্ষার কয়েক দিন আগে কয়টা সিট যেনতেন মুখস্থ করে খাতায় সেগুলো তুলে দেয়ার মাধ্যমে যখন তারা পরীক্ষাগুলো শেষ করে বেরিয়ে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে তারা কি এর মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে কিনা!
পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন করে গড়ে তুলুন যাতে শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে চাকরির প্রস্তুতি না নিতে হয়। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে যেন সার্টিফিকেটের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে না বেড়াতে হয়। শিক্ষা যেন আর কোনো শিক্ষিত বেকার তৈরি না করে, যোগ্য নাগরিক তৈরির উপায় হয়।

মারুফ হোসেন : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়