মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

নদী ভরাটের কারণ ও প্রভাব

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর নদ-নদী অস্তিত্ব হারাতে চলেছে কর্তৃপক্ষীয় উদাসীনতার কারণে। নদ-নদী, খাল-বিল, ঝিল-জলাশয় রক্ষার দায়িত্ব যাদের তাদের নিষ্পৃহতায় বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগসহ দূষণ-দখলে রাজধানীর চার নদ-নদী বিপন্নপ্রায়। বুড়িগঙ্গার পানি তো স্বাভাবিক চেহারা হারিয়ে আলকাতরার চেহারা ধারণ করতে চলেছে। পানির দুর্গন্ধে নদীপাড়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। দখল-দূষণে নদীর এক উল্লেখযোগ্য অংশই দখলবাজদের থাবার নিচে। রাজধানীর নদ-নদীগুলো দেড় কোটিরও বেশি নাগরিকের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঘিঞ্জি এ জনপদের মধ্যে নদীগুলোই মুক্ত হাওয়ার বড় আধার, যা রাজধানীর ফুসফুসের মতো ভূমিকা পালন করছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাজধানীর নদ-নদী, খাল-বিল, ঝিল, জলাশয় রক্ষায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সচেতন হয়ে উঠেছে দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়।
নদ-নদী, জলাশয় রক্ষায় নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা থাকায় সব পক্ষের সক্রিয়তাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারপরও রাজধানীর চার নদ-নদীর দখল-দূষণ থামছে না। নদ-নদী জলাশয় রাহুমুক্তির সরকারি উদ্যোগ নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে দখলবাজদের কারণে। এ অকাম্য অবস্থার পেছনে নদ-নদী সুরক্ষায় আদালত ও সরকারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা তাদের গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট। অভিযোগ রয়েছে, তারা দখলকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। দখল-দূষণ রোধে নদ-নদীর তীরে হাঁটাপথ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন থেমে আছে রহস্যজনকভাবে। নদ-নদী রক্ষায় গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর সফল বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে। নদীতীরে ইট-পাথর ও বালু ব্যবসা বন্ধেও নিতে হবে উদ্যোগ। রাজধানীর চার নদ-নদী রক্ষায় জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এর অন্যথা হওয়া উচিত নয়।
চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ- এখন এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের নদীব্যবস্থার ওপর প্রথম আঘাত আসে ইংরেজ আমলের ভুল নদী ব্যবস্থাপনায়। এরপর ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের নামে ক্ষতিকর বাঁধ, আশির দশকে বিশ্বব্যাংকের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগুলোর ভালোর বদলে মন্দই করেছে বেশি। গত দুই দশকে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্য নদীর দখল ও দূষণ ঘটেছে ব্যাপক হারে।
আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য- সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। নদী রক্ষা না করলে তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না। এজন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদ-নদী বাঁচাতে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
নদীর সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নদী যেমন তার প্রবাহের সঙ্গে জনপদের বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি নদীর পানির কারণে আশপাশের পরিবেশ থাকে অপেক্ষাকৃত শীতল। নদী থেকেই উৎসারিত হয় জলীয়বাষ্প এবং তা আবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। নদী না থাকলে এ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হবে, যার আলামত এরই মধ্যে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে এবং খরাপ্রবণতা বাড়ছে। উষ্ণ হয়ে উঠছে আবহাওয়া। নদীর সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যে সম্পর্ক নিবিড়ভাবে জুড়ে আছে যেমন, ফসল ফলানো, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির প্রসঙ্গ বাদ দিলেও পরিবেশের বিষয়টি কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয়। নদী না থাকা এবং নদীদূষণের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে।
সত্যিকার অর্থে নদীর অস্তিত্ব বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অতি আলোচিত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের এক বড় শিকার। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিরাট এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা এককভাবে আমাদের নেই। কিন্তু দেশের নদ-নদী রক্ষার মাধ্যমে আমরা সম্ভবত পরিস্থিতির অবনতির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারি। আন্তর্জাতিক নদীর ওপর একের পর এক বাঁধ দিয়ে এগুলোর পানিপ্রবাহে প্রতিবেশী বৃহৎ দেশের বাধা সৃষ্টি করা আমাদের জন্য মৃত্যুর চেয়েও কঠিন।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়